নেত্রকোনার আলোচিত ইউএনও মাহমুদাকে এক দিনের ব্যবধানে এবার চট্টগ্রামে বদলি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ নিয়ে আলোচনায় আসা নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগমকে এবার চট্টগ্রামে বদলি করা হয়েছে। এর আগে গত বুধবার ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মো. খবিরুল আহসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে কেন্দুয়ার পাশের উপজেলা মদনে বদলি করা হয়েছিল।

এক দিনের ব্যবধানে গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসন-২ শাখার উপসচিব কে এম আল-আমীন স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মাহমুদা বেগমকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।

শনিবার (২৭ আগস্ট) নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার নেত্রকোনার কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরি—এ তিন উপজেলার ইউএনওকে বদলি করা হয়। তাঁদের মধ্যে কেন্দুয়ার ইউএনও মাহমুদা বেগমকে মদনে এবং মদনের ইউএনও আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমানকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় পদায়ন করা হয়েছে। কেন্দুয়ায় নতুন ইউএনও হিসেবে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যুক্ত কাবেরী জালালকে আর খালিয়াজুরিতে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে যুক্ত মো. এরশাদুল আহমেদকে পদায়ন করা হয়। কিন্তু এক দিনের ব্যবধানে মাহমুদা বেগমকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল গ্রামে ১ একর ৮৭ শতক জমির মধ্যে খেলার মাঠের ৪৬ শতক জায়গা কান্দা শ্রেণিতে পরিবর্তন করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় গৃহহীনদের ঘর নির্মাণের কাজ চালিয়ে মাহমুদা বেগম আলোচনায় আসেন। মাঠ রক্ষায় এলাকাবাসীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। একই সঙ্গে স্থানীয় আট বাসিন্দা বাদী হয়ে গত ৩০ মে আদালতে একটি মামলা করেন।

গত ২ জুন রাতের আঁধারে নির্মাণাধীন দুটি ঘরের গাঁথুনি ভেঙে দেওয়া হয়। পরের দিন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী বাদী হয়ে ১৯ জনের নামে মামলা করেন। এরপর পুলিশ পাহারায় ঘরের নির্মাণকাজ চলে। স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ২৩টি ঘরের মধ্যে ১১টি সরিয়ে নেন। মাঠের পশ্চিম পাশ দখলমুক্ত করে ২৪ শতক জায়গায় ১২টি ঘর বানানো হয়। ১৩ আগস্ট ভোরে সেখানকার দুটি ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৬৩ জনের নাম উল্লেখ করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা করেন।

ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলনে ইউএনও মাহমুদা বেগম আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতাসহ কয়েকজনকে দোষারোপ করেন। এনএসআই, ডিজিএফআইয়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকে তিনি এসব জেনেছেন বলে উল্লেখ করেন। সরকারি দল, বিরোধী দল—সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করেছে বলে দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়নের সবার বিরুদ্ধে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।

ওই সংবাদ সম্মেলনে ইউএনওর বক্তব্যের ভিডিও দৈনিক সংবাদ ও ডেইলি অবজারভারের উপজেলা প্রতিনিধি হুমায়ূন কবীর নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। পরে ইউএনও ওই সাংবাদিককে মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন। এরপর জেলা প্রশাসক তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। ১৯ আগস্ট বলাইশিমুল ঈদগাহে ইউনিয়নের ২৮ গ্রামের বাসিন্দাদের বৈঠকে ইউএনও মাহমুদা বেগমকে বলাইশিমুল ইউনিয়নে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে তাঁকে অপসারণের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

 

আরো জানতে…….

সাংবাদিককে হুমকি: আলোচিত ইউএনও মাহমুদা বেগমকে বদলি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button