নির্বাচনে বরাদ্দ ৭০০ কোটি : শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চায় ১ হাজার কোটি টাকা
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বরাদ্দ ৭০০ কোটি টাকা। এ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য বরাদ্দের পরিকল্পনা ছিল ইসির। যদিও বিভিন্ন বাহিনী চাহিদা দিয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। অতিরিক্ত এ চাহিদা পূরণে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।
নির্বাচন ভবনে সোমবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠকে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে নির্বাচনকালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত করা ও অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়।
ইসি সূত্র জানায়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয় বৈঠকে। নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ চাওয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে, ৪২৮ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮১ কোটি টাকা চেয়েছে আনসার-ভিডিপি। এছাড়া নির্বাচনী দায়িত্বে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে চাওয়া হয়েছে ৭২ কোটি টাকা। এর বাইরে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর জন্য ৫০ কোটি টাকাসহ র্যাবের পক্ষ থেকে ৫০ কোটি ও কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে ৮ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে মোট ৯৮৯ কোটি টাকা।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য পরিকল্পিত বাজেটের অতিরিক্ত এ অর্থের সংস্থান কীভাবে হবে বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে কত টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে, তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে।
ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগামী জাতীয় নির্বাচনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪১ লাখের মতো। জাতীয় নির্বাচনে ৪০ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা মিলিয়ে ১০ লাখের মতো সদস্য নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারেন। এছাড়া ব্যালট বক্স, ব্যালট পেপার, নির্বাচনী সামগ্রী, পরিবহন, জ্বালানিসহ নির্বাচন পরিচালনায় অন্তত ৬০-৭০টি খরচের খাত রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে ৭০০ কোটি টাকার বাজেট থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের পরিকল্পনা ছিল ইসির। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর যে চাহিদা, তাতে নির্ধারিত বাজেটে তাদের রাজি করাতে বেগ পেতে হবে। এমনিতে পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে ইসি। ফলে এ অর্থের সংস্থান করা অথবা নির্ধারিত বাজেটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজি করানোর মতো বড় চ্যালেঞ্জে পড়েছে ইসি। তবে বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবিতে সম্মত হননি সিইসি।
ইসি সূত্র জানায়, বড় বাজেটের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো যেদিন নিয়োজিত হবে এবং যেদিন তারা কাজ শেষ করে ফিরে আসবে, সেই দুটি দিনকেও ডিউটির মধ্যে ধরতে বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে খরচ আরো বেড়ে যাবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনসহ উপজেলা, সিটি নির্বাচন ও অন্যান্য উপনির্বাচনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য মোট ১ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়। বাজেট উপস্থাপনে জানানো হয়, নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ১ হাজার ৬৮৫ কোটি ও উন্নয়নের জন্য ২১০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আর একাদশ সংসদ নির্বাচনের খরচ বাবদ ৭০০ কোটি টাকা বাজেট অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ১৫ অক্টোবর কমিশন সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। কমিশন সভা শেষে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের সে সময় বলেছিলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৭০০ কোটি টাকার খাতওয়ারি বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে কমিশন সভা। নির্বাচন পরিচালনা ও নিরাপত্তায় এ ব্যয় ধরা হয়েছে।
গত জাতীয় নির্বাচন বা দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ইসির জন্য ১ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। তাতে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ৫০০ কোটি ও উপজেলা পরিষদের জন্য সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পারিশ্রমিক বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বছরই নির্বাচনী ব্যয় বাড়ছে। এছাড়া ভোট গ্রহণে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও নিয়োগ দিতে হয় বেশি। এ কারণে পুরো নির্বাচন পরিচালন ব্যয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা খাতে।
দশম সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৪-১৬ জন নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। র্যাব, বিজিবি ও সেনাসদস্যরা ছিলেন টহলে। ওই নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকায় ভোটের সময় সশস্ত্র বাহিনীর অর্ধলক্ষ সদস্যের সঙ্গে ছিলেন অন্তত ৮০ হাজার পুলিশ, আট হাজার র্যাব, ১৬ হাজার বিজিবি ও প্রায় সোয়া দুই লাখ আনসার সদস্য। নির্বাচন আয়োজনে ব্যয় হয় প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১৮৩ কোটি টাকাই আইন-শৃঙ্খলা খাতে যায়। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যয় হয় ১৬৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।
সূত্র: বণিক বার্তা