আকাশপথে মোবাইল ফ্লাইট মোডে রাখার রহস্য

গাজীপুর কণ্ঠ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : উড়োজাহাজে চেপে বসেছেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে ভেসে এল অদৃশ্য কণ্ঠ, ‘অনুগ্রহ করে ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো ফ্লাইট মোডে রাখুন’। এটা খুবই পরিচিতি বিষয়। আর আমরা এও জানি, উড়োজাহাজ চলাচলে নিরাপত্তার জন্য অনেক রকম বিধিনিষেধই রয়েছে।

যাত্রীরা নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সিট বেল্ট বেধে নেন। জানালার পর্দা উঠিয়ে রাখতে হয় জরুরি মুহূর্ত যেন দ্রুত নজরে আসে। ল্যাপটপ জায়গা মতো রাখতে হয়, কারণ সিটের পেছনের পকেট এই ডিভাইসের জন্য যথেষ্ট মজবুত নয়। আর ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে ফ্লাইট মুডে রাখার কারণ? অন্য বিষয়গুলোর সঙ্গে এই নির্দেশনার কিছু পার্থক্য রয়েছে।

প্রযুক্তি বিশ্বে গত ৬০ বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মানুষের হাতে হাতে এখন নানা ধরনের গেজেট। যার একটি অন্যটির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। উড়োজাহাজ চলাচল ও যোগাযোগ অনেকাংশেই নির্ভর করে বেতার তরঙ্গের ওপর। ব্যক্তিগত ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো ঠিক একই ফ্রিকোয়েন্সির সিগন্যাল প্রেরণ করে। ফলে তড়িতচৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে তৈরি হতে পারে বিপত্তি।

এতে অবশ্য ‘তবে’ বা ‘কিন্তু’ রয়েছে। স্পষ্টভাবে বললে, নন-ক্রিটিক্যাল অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কোনো প্রভাব আকাশযান চলাচলের ওপর পড়ে না। আর ক্রিটিক্যাল অবস্থা হলো উড্ডয়ন ও অবতরণের সময়টুকু। যা ১৯৯২ সালে মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি ও বোয়িংয়ের গবেষণায় ওঠে এসেছে।

বিষয়টি বিবেচনায় ইউএস ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন বিশেষ কৌশল উদ্ভাবন করে। তাতে করে মোবাইল ডিভাইস ও উড়োজাহাজ উড্ডয়ন পরস্পরকে প্রভাবিত করে না। সারা বিশ্বে গৃহীত হয়েছে সেই কৌশল। ফলে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংক্রান্ত টানাপড়েন সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। তার ইঙ্গিত দেখা যায় ২০১৪ সালে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তখন উড়োজাহাজে ইলেকট্রনিক ডিভাইস অন রাখার অনুমোদন দেয়।

কিন্তু তারপরও কেন মোবাইল ফোনে ফ্লাইট মোডের অপশন রাখার কথা উঠছে। তার প্রাথমিক জবাব ওই অবতরণকালীন সংকটাবস্থা। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অনেকগুলো টাওয়ারের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। যদি কোনো উড়োজাহাজে সবাই মোবাইল ফোনে বন্ধুদের অবতরণের খবর জানাতে থাকেন (বা অন্যকিছু), তাহলে নেটওয়ার্কে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে।

২০২১ সালে উড়োজাহাজ যাত্রী ছিল ২২০ কোটির বেশি। কভিডের আগে ২০১৯ সালে এ সংখ্যা ছিল দ্বিগুণ। ওয়্যারলেস কোম্পানিগুলো সেদিকেই ইঙ্গিত করেন। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির ব্যান্ডউইথ সীমাবদ্ধ। তারপরও নতুন নতুন ডিভাইস যুক্ত হচ্ছে। অত্যাধুনিক ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ব্যান্ডউইথ তরঙ্গ উড়োজাহাজ ব্যান্ডউইথ তরঙ্গের খুব কাছাকাছি। উড়োজাহাজ অবতরণের সময় তা প্রভাবিত করতে পারে। দিনশেষে উড়োজাহাজকে তো অবতরণই করতে হবে। এ জন্য ফাইভ-জি মোবাইলকে আলাদাভাবেই চিহ্নিত করা হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে। তাই আজকাল হাল প্রযুক্তির এই ডিভাইসে ফ্লাইট মোডের কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি।

তবে আকাশপথে পরিষেবা সহজ করা উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক এয়ারলাইনস বর্তমানে কাস্টমারদের ওয়াইফাই সুবিধা দিচ্ছে। যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারেন মোবাইল ফোন। ভিডিও কল করতে পারেন বন্ধু, পরিবার ও গ্রাহকদের সঙ্গে। সেক্ষেত্রে কেবিন ক্রুদের জন্য পরিষেবা দেয়া কঠিন হয়ে যায়। যাত্রীদের ব্যস্ততা ও অন্যদিকে মনোযোগ তৈরি সময়ক্ষেপনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কোনো নির্দেশনা সবার কানে পৌঁছে দেয়া বিরক্তিকর হয়ে উঠে।

তার ওপরে রয়েছে নিরাপত্তা বিধি মেনে না চলার ঘটনা। সিট বেল্ট না বাঁধা, পাশ্ববর্তী যাত্রীর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হর-হামেশাই হয়। প্রায় ২০০ জন যাত্রীকে সময় মতো পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আধুনিক সময়ে আকাশপথে মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সঙ্গে উড়োজাহাজের সক্ষমতা জড়িত না। যতটা জড়িত ভেতরের পরিষেবা যথাযথভাবে দেয়ার ওপর।

 

সিএনএন অবলম্বনে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button