মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মূল্যবান জমি দখল না করে প্রচুর বিদ্যুৎ উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মানুষকে ভাবাচ্ছে। বেশ কিছু বাস্তবসম্মত সমাধানসূত্রের পাশাপাশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার রূপরেখাও স্পষ্ট হচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের চাপে সৌরশক্তির গুরুত্ব বাড়ছে।

মানুষের জায়গার বড় অভাব। কিন্তু একই সঙ্গে গাছপালা গজানো ও জ্বালানি উৎপাদন করতে পারলে কেমন হয়?

এবার অ্যাগ্রিভল্টায়িকের সময় এসে গেছে। ফসল দ্বিগুণ করাই এই আইডিয়ার মূলমন্ত্র! সেই লক্ষ্যে এমন মডিউল তৈরি করা হচ্ছে, যার আওতায় ভবিষ্যতেও নীচের মাটিতে গাছপালা চাষ করা সম্ভব। কী কী সম্ভাব্য মডিউল রয়েছে?

সৌর-বেড়া একটা সমাধানসূত্র। বেড়াগুলোর মাঝের অংশ চাষবাস, পশুপালন বা ফুলগাছ লাগানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। অথবা মডিউলগুলো এমনভাবে তৈরি করা যায়, যাতে সূর্যের দিকে ঘোরার জন্য প্যানেলের যথেষ্ট জায়গা থাকে।

কিন্তু প্যানেলের নীচে বা কাছাকাছি যে সব গাছপালা গজাচ্ছে, সেগুলির অবস্থা কীরকম? ভূ-বিজ্ঞানী হিসেবে গেয়র্গ বারোন-গ্যাফোর্ড বলেন, “আমরা নানা ধরনের শাকসবজি চাষ করেছি। স্থানীয় চাষিদের হাটে যেমনটা দেখা যায়- টমেটো, ক্যাপসিকাম, কুমড়ো, বেগুন ইত্যাদি। মনে হয় এই সব গাছই বেশ ভালোভাবে বেড়ে উঠছে।”

অর্থাৎ গাছগুলো সব সময়ে যথেষ্ট আলো পাচ্ছে। সোলার কালেক্টরের ছায়ায় থাকলে এমনকি টমেটো ও মরিচের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। কারণ গাছগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় সূর্যের আলো পেলে বাড়তি চাপ অনুভব করে এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ গাছের বৃদ্ধি থমকে যায়।

পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। এই মডিউলগুলো কম পানিতে সেচের ব্যবস্থা করছে। এমন প্রবণতার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। একটি গবেষণার ফল অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে বিশ্ব বাজারের প্রায় ৪০% বৃদ্ধি ঘটবে। বিশেষ করে কৃষির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল শুকনা অঞ্চল ও দেশগুলি অ্যাগ্রি ফোটোভল্টাইক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক জমি ও পানি সাশ্রয় করতে পারবে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া তথা আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ এমন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।

অন্য কোনো জায়গায় কি সোলার সেল বসানো যেতে পারে? মহাকাশের কথাও ভাবা হচ্ছে। যতটা সম্ভব সূর্যের কাছে যাওয়াই লক্ষ্য। মহাকাশে ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো পাওয়া যায়, পৃথিবীর মতো সেখানে জমিরও প্রয়োজন নেই।

তাহলে আমরা পৃথিবীর কক্ষপথে সোলার সেল গড়ে তুলছি না কেন?

ব্রিটেনের নেতৃত্বে “স্পেস এনার্জি ইনিশিয়েটিভ”-এর আওতায় শিল্পজগত, রাজনীতি ও বিজ্ঞান জগতের প্রায় ৫০ সহযোগী ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাকাশে একটি সৌরবিদ্যুৎ স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই প্রযুক্তি এভাবে কাজ করতে পারে। পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫,০০০ কিলোমিটার দূরে জিওস্টেশনরি কক্ষপথে স্যাটেলাইটগুলি বিশাল সৌর প্যানেলের সাহায্যে সৌরশক্তি সংগ্রহ করবে। তারপর সেই শক্তি মাইক্রোওয়েভ বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

ভূ-পৃষ্ঠে “রেক্টেনা” নামে অ্যান্টেনার নেটওয়ার্ক সেই মাইক্রোওয়েভ গ্রহণ করে গ্রিডের জন্য বিদ্যুতে রূপান্তরিত করবে। প্রত্যেকটি স্যাটেলাইট অবিরাম দুই গিগাওয়াট পরিমাণ জ্বালানি উৎপাদন করবে, যা প্রায় ৭০০ বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমান।

এমন স্যাটেলাইট প্রায় ১.৭ কিলোমিটার ব্যাস ও কয়েক হাজার টন ওজনের হতে পারে। সেগুলো ২৪ ঘণ্টা ধরে একনাগাড়ে পৃথিবীতে জ্বালানি পাঠাতে পারবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। দুপুরের চড়া রোদের এক চতুর্থাংশ মাত্রার সেই রশ্মি প্রাণী ও মানুষের জন্য নিরাপদ হবে বলে দাবি করা হচ্ছে।

কিন্তু ট্রান্সমিশন ও রূপান্তরের সময় অনেক জ্বালানি নষ্ট হবে। তাছাড়া এমন মডিউল মহাকাশে পাঠানোর ব্যয় অভাবনীয় হতে পারে। আগামী দশকগুলিতে আমরা যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করে মহাকাশে সৌরবিদ্যুৎ স্যাটেলাইট পাঠাতে পারলেও এমন উদ্যোগের সার্থকতা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে।

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জমিতে ভাগ না বসিয়েও দ্রুত সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের আরও বাস্তবসম্মত উপায় রয়েছে। সেই সব পদ্ধতিই তুলনামূলকভাবে আরও সস্তা, দ্রুত ও সম্ভাবনাময়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button