উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে এলডেস্টেরন হরমোনের কারণেও!

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ : হৃদরোগ ও স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হলো উচ্চ রক্তচাপ। মানুষের অকাল মৃত্যুর এটি একটি প্রধান কারণ। আগে উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা থাকলেও এখন ধারণা বদলাচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কৃত হওয়ায় বেরিয়ে আসছে কারণগুলো। এর মধ্যে অন্যতম হলো- হরমোনজনিত উচ্চ রক্তচাপ। হরমোনগুলোর মধ্যে এলডেস্টেরন হরমোন অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী। ১০ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপের পেছনে এ হরমোনকে দায়ী করা হচ্ছে।
হরমোনের প্রভাব : হরমোনটি নিঃসরণ হয় অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে। দুই কিডনির ওপর অবস্থিত এ ক্ষুদ্র অঙ্গটির ওজন মাত্র ৪-৫ গ্রাম। এ হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে গেলে রক্তে সোডিয়াম আয়রন বাড়ে। পাশাপাশি কিডনি দিয়ে নিঃসরণ হতে থাকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম। সোডিয়াম বেড়ে গেলে রক্তের পরিমাণও বাড়ে। এতে বাড়ে রক্তচাপ। পটাশিয়াম কমে গেলে মাংসপেশি দুর্বল হয়। ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বলতা প্যারালাইসিস পর্যায়ে পৌঁছে। হঠাৎ করেই হাত-পা অবশ হয়ে পড়ে। পটাশিয়াম কমে গেলে হৃদস্পন্দন এলোমেলো হয়ে যায়। বাড়ে বুকের ধুকপুকানি। পটাশিয়ামের ঘাটতিজনিত কারণে ঘনঘন প্রস্রাব হয়। রাতে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়া এ হরমোনটির প্রভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে দেখা দেয় ডায়াবেটিস। এ হরমোনে রক্তনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনো কখনো রক্তনালির ভেতরের গা ক্ষতি হওয়ায় কিছু কিছু অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে। হরমোনটির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনি, হৃদপি- ও চোখ। এ কারণে এ হরমোন বেড়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপজনিত টার্গেট অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
যে কারণে হরমোন বেড়ে যায় : কোনো কারণে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে যদি টিউমার দেখা দেয় বা অজানা কারণে এটি স্ফীত হয়, তা হলে সেখান থেকে বেশি পরিমাণ অ্যালডেস্টেরন নিঃসরণ হতে থাকে। এমনকি এ গ্রন্থিটির ক্যানসারও হতে পারে হরমোন নিঃসরণের কারণ। এছাড়া হরমোন বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে আরও কিছু বিরল কারণ রয়েছে।
যাদের এ হরমোন পরীক্ষা করা জরুরি : উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত প্রায় সবারই এ হরমোনটির মাত্রা জেনে নেওয়া জরুরি। তবে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন- তরুণ বয়সে যারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। যাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে তিনটি ওষুধ যথেষ্ট নয়। যাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ৪-৫টি ওষুধ প্রয়োজন পড়ে, যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কম, যাদের পরিবারে ৪০ বছরের কম বয়সে স্ট্রোক কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে, অন্য কোনো কারণে পরীক্ষা করতে গিয়ে যাদের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে টিউমার ধরা পড়েছে।
যে পরীক্ষাটি দরকার : অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির নিঃসরণ বেশি কিনা, এটা পরীক্ষা করার জন্য রক্তে এ হরমোনের মাত্রা জেনে নিতে হয়। পাশাপাশি রক্তে রেনিন নামক আরেকটি উপাদানের মাত্রাও জেনে নিতে হয়। এ দুটির অনুপাতের ওপর নির্ভর করে এলডেস্টেরন বেশি কিনা। এমনটি হলে নিশ্চিত করার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন পড়ে। তবে এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ খুবই কম সংখ্যক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সীমাবদ্ধ। কারণ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসা নিতে পারলে উচ্চ রক্তচাপের জন্য আলাদা ওষুধের প্রয়োজন পড়বে না।
উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা : এড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার কিংবা ক্যানসার ধরা পড়লে শল্যচিকিৎসার আশ্রয় নিতে হয়। এছাড়া অন্য কারণে এলডেস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী নির্ধারিত কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। যেহেতু এ রোগে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায়, সেজন্য মাত্রা ঠিক রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ধরনের ওষুধ সেবন করতে হয়। উচ্চ রক্তচাপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি অবশ্যই হরমোনটির মাত্রা পরীক্ষা করে নেবেন।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ : লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ।
চেম্বার : আল রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা, ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫; ০১৭২৬০৫০৯১২।