কালীগঞ্জে ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে অবরুদ্ধ ৪ যুবক, উদ্ধার করলো পুলিশ!

বিশেষ প্রতিনিধি : কালীগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গেলে স্থানীয় জনতার হাতে অবরুদ্ধ হয় জাকারিয়া আলম মামুন, শামীম শেখ, সরোয়ার ও আলমগীর মোল্লা নামে ৪ যুবক। একপর্যায়ে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থানায় ফোন দিলে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।

গত ২৯ জুলাই (শনিবার) উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নে হরিদেবপুর (গুচ্ছ) গ্রামে নরেশ রবি দাসের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে আতঙ্কে রয়েছেন গ্রামবাসী।

হরিদেবপুর (গুচ্ছ) গ্রামের নরেশ রবি দাসের স্ত্রীর ভুক্তভোগী দীপিকা রানী রবি দাস বলেন, ২৯ জুলাই সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০দিকে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ৪ যুবক ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে অবৈধ জিনিস আছে বলে ঘর তল্লাশি করে। একপর্যায়ে কোনো কিছু না পেয়ে মামলার হুমকি দিয়ে মা ও শিশুসহ বৃদ্ধাকে জিম্মি করে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা জানালে তাদের ব্যাগে করে আনা তালা দিয়ে কলাপসিবল গেট লাগিয়ে প্রায় ৬ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে তারা।

অবরুদ্ধ দীপিকা রাণী মোবাইল ফোনে তার স্বামী নরেশ রবি দাসকে বিষয়টি জানান। পরে তার স্বামী বিষয়টি স্থানীয় মেম্বারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অবগত করেন। এদিকে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে ভুয়া ডিবি পরিচয়দাকারী ওই ৪ যুবককে অবরুদ্ধ করলে তারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেয়। এ সময় স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে আত্মরক্ষার্থে তারা থানায় ফোন দেয়। পরে পুলিশের সহায়তায় ওই ৪ যুবক উদ্ধার হয়।

ওই গৃহবধূর স্বামী নরেশ রবি দাস বলেন, ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমরা সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ আমাদের নানা হুমকি ধমকি দিয়ে গেছে। তাই এ ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করিনি।

এলাকাবাসী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই চক্রটি প্রায়ই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এলাকার সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নানা প্রতারণা ও মিথ্যা পরিচয়ে এভাবে অপরাধ করে যাচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ারুল হক নাদের বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমি ছুটে যাই। তারা প্রথমে নিজেকে ডিবি পুলিশ ও পরে স্থানীয় জনতার তোপের মুখে সাংবাদিক পরিচয় দেয়। স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়লে থানা থেকে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু পরে শুনতে পারলাম তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অপরাধ করেও পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার বিষয়টি সত্যি দুঃখজনক।

মোক্তারপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযুক্ত চক্রটি প্রায়ই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে মানুষকে জিম্মি করে বিভিন্ন পন্থায় হয়রানি করে এবং অর্থ হাতিয়ে নেয়। আমি নিজেও তাদের কয়েকবার ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে এনে সতর্ক করেছি।

এ ব্যাপারে জাকারিয়া আল মামুন বলেন, ওই বাড়িতে মদ বিক্রি করে খবর পেয়ে আমরা পিকনিকে যাব বলে মদ কিনতে যাই। পরে মদ পেয়ে পুলিশকে খবর দেই। এ সময় স্থানীয় মেম্বার এসে আমাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। তবে নিজেকে ডিবি পরিচয় দেইনি, সাংবাদিক পরিচয় দিয়েছি। টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য না।

কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরান তালুকদার বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে শুনি তারা মাদক উদ্ধার করতে গেছে। পুলিশের সহায়তা ছাড়া তারা কেন অভিযানে এসেছে, কেন নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়েছেন এ প্রশ্ন করলে তারা তা অস্বীকার করে।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফায়েজুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল থেকে জাকারিয়া আল মামুন নামে একজন দুপুর ২টার দিকে মদ তৈরি হচ্ছে বলে আমাকে ফোন দেন। পরে আমি সেখানে পুলিশ ফোর্স পাঠাই কিন্তু ওই বাড়িতে পুলিশ গিয়ে কোনো মদ পায়নি। স্থানীয়ভাবে জানতে পারছি তারা ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়েছে। তবে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button