মেসির গোলেও শিরোপা ধরে রাখতে পারল না বার্সা

গাজীপুর কণ্ঠ, খেলাধুলা ডেস্ক : চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে লিভারপুলের কাছে হেরে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত বার্সেলোনার জন্য শেষ সুযোগ ছিল এটি। কোপা দেল রে’র ফাইনালটা জিততে পারলে যে ঘরোয়া ফুটবলের ট্রেবল জয় হতে যেত। শিরোপা থেকে এক কদম পেছনে থাকা অবস্থায় দলের সবাইকে এজন্য একতাবদ্ধ হতেও বলেছিলেন একদিন আগেই ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু জেতা লিওনেল মেসি। কিন্তু ফাইনালে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে তাদের সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল।

চলতি মৌসুমে লা লিগা এবং সুপার কোপার শিরোপা জেতা বার্সা চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা হাতছাড়া করলেও মৌসুমের শেষটা রাঙানোর সুযোগ পেয়েছিল। কোপা দেল রে’র শিরোপা হতে পারত চ্যাম্পিয়নস লিগে হারের যন্ত্রণার একমাত্র উপশম। শিরোপাটা জেতার জন্য মরিয়া বার্সা অধিনায়ক প্রথমার্ধে ২ গোল হজম করা বার্সাকে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে সমতায়ও ফিরিয়েছিলেন কিন্তু তাতেও কপাল খুলল না।

ম্যাচ শেষে মেসির পা যেন কিছুতেই নড়ছিল না। রাজ্যের চাপা কষ্ট যেন তার পা জোড়া মাটির সঙ্গে শক্ত করে আটকে রেখেছে। তার ভার মুখখানা যেন বলছে, ‘আমি কি করেছি?’ আসলেই তো তার কি দোষ? পুরো ম্যাচের সেরা পারফর্মার হয়েও হারের কষ্ট বইতে হচ্ছে তাকে। ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তির অমন অসহায় চাহনি প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যেও সমবেদনা জাগাতে বাধ্য।

ম্যাচের ফল দেখে পুরোটা বোঝার উপায় নেই আসলে কতটা দুর্ভাগা আর্নেস্তো ভালভার্দের শিষ্যরা। ৭৮ শতাংশ বল দখল আর প্রতিপক্ষের গোলমুখে ৬টি সত্যিকারের শট নিয়েও হার নিয়ে ফিরতে হলো তাদের। ম্যাচের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলা দেখিয়েছে কাতালান জায়ান্টরা। সেভিয়ার মাঠ বেনিতো ভিয়ামারিনে ম্যাচের ১৮তম মিনিটেই ভ্যালেন্সিয়ার পেনাল্টি অঞ্চলে দারুণ এক নিচু শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন ভ্যালেন্সিয়া ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল।

মেসির প্রথম প্রচেষ্টার ৩ মিনিট পরেই বার্সার জাল কাঁপিয়ে গোল করে বসেন কেভিন গামেইরো। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে গামেইরোর পায়ে ঠেলে দেন গায়া। আর তা থেকে শজ শটে বার্সা গোলরক্ষক সিলেসেনকে পরাস্ত করেন ভ্যালেন্সিয়ার ফরাসি স্ট্রাইকার। ৩৩তম মিনিটে বার্সার কপালে ভাঁজ ফেলে দেওয়া দ্বিতীয় গোলটি করেন ভ্যালেন্সিয়ার আরেক স্ট্রাইকার রদ্রিগো। তবে এতে বার্সা ডিফেন্ডার আলবার ভুলেরও দায় আছে।

দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হওয়ার প্রায় মিনিট দশেক পরেই মেসির শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ৭১তম মিনিটে দারুণ এক সুযোগ নষ্ট করেন বার্সা ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকে। এর ঠিক ২ মিনিট পরেই গোলের দেখা পান মেসি। ল্যাঙ্কলেটের হেড ভ্যালেন্সিয়া গোলরক্ষক ঠেকিয়ে দিলে ফিরতি শটে কোপা দেল রে’র টানা পাঁচ ফাইনালে দশম লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।

মেসির একমাত্র গোলটির পর নিজেদের রক্ষণ গুটিয়ে নেয় ভ্যালেন্সিয়া। শেষদিকে যখন মরিয়া বার্সা ডিফেন্স আলগা করে আক্রমণে ওঠে আসতে শুরু করে সেসময় উল্টো দুটো ভ্যালেন্সিয়া দুটো দারুণ কাউন্টার অ্যাটাক করে বসে। যদিও যোগ করা সময়ে উইঙ্গার গুয়েদেসের ওই দুই প্রচেষ্টা দক্ষতার সঙ্গেই সামাল দেন সিলেসেন। কিন্তু ঘটনা যা তা তো আগেই ঘটে গেছে।

চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে টানা চতুর্থবার খালি হাতে ফেরার পর এবার চার বছর পর কোপা দেল রে’র শিরোপা খোয়ালো বার্সেলোনা। পাঁচ বছরের মধ্যে চতুর্থবারের মতো ঘরোয়া ডাবল (সুপার কোপাসহ ট্রেবল) জেতার স্বপ্নের আপাত সমাপ্তি ঘটে গেল। মেসিদের কুদশা যেন কাটছেই না। প্রশ্নটা তাই উঁকি দিচ্ছেই, বার্সার টিকিটাকা জাদু কি তবে শেষ?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button