ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূরের সাথে ছাত্রলীগের সমস্যা কোথায়?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মূলত সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরেই আলোচনায় এসেছিল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও এর নেতারা।

কোটা আন্দোলনের সংগঠকদের মধ্যে আলোচিত নেতাদের মধ্যে একজন ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল হক নূর। নির্দলীয় হলেও কোটা সংস্কার আন্দোলন সফল হওয়ার কারণে এ সংগঠনটি নেতাকর্মী তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জেলা উপজেলা পর্যায়েও।

আগে নিজে ছাত্রলীগের মুহসীন হল কমিটিতে থাকলেও কোটা আন্দোলন জোরালো হওয়ার সময় থেকেই চূড়ান্ত দাবি আদায় পর্যন্ত কয়েক দফা হামলার শিকার হন তিনি। ফলে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।

প্রতিবারই তিনি এসব হামলার জন্য সরকার সমর্থিত ছাত্রলীগকে দায়ী করেছেন।

সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)-এর নির্বাচনে ছাত্রলীগ সভাপতিকে হারিয়ে ভিপি (ভাইস প্রেসিডেন্ট) হওয়ার পরেও ছাত্রলীগের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি।

যদিও পরে ছাত্রলীগ সভাপতি ফল মেনে নিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এক পর্যায়ে গণভবনে ডাকসু ও হল সংসদের প্রতিনিধিদের সাথে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বক্তৃতাও করেন তিনি।

কিন্তু তারপরেও ছাত্রলীগের সাথে বিশেষ করে সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের সাথে ডাকসুতেই তার মতবিরোধের খবর নিয়মিতই আসছে গণমাধ্যমে।

এর মধ্যেই ইফতার কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া ও বগুড়ায় হামলার শিকার হলেন নুরুল হক নূর। তার ওপর হামলার ঘটনা ব্যাপক ভাবে উঠে এসেছে ফেসবুকেও।

‘ভয় পাচ্ছে বলেই আমার ওপর হামলা করছে’
বিবিসি বাংলাকে নুরুল হক নূর বলছেন, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি দেশের ছাত্রসমাজের মধ্যে যে আস্থা তৈরি করেছেন, তা নিয়েই ‘ছাত্রলীগ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে’।

“তারা আমাকে ও আমাদের সাধারণ ছাত্র সংরক্ষণ পরিষদকে ভয় পাচ্ছে। তারা মনে করছে ভবিষ্যতে আমরা তাদের সমস্যা বা বিপদ হয়ে উঠতে পারি। এর কারণ হল ছাত্রসমাজের মধ্যে আমাদের নিরঙ্কুশ জনপ্রিয়তা।”

তিনি বলেন, “ডাকসু ভিপি কোন ব্যক্তি নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পুরো জাতিকে নেতৃত্ব দেয়। যে কোনো সংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই জাতিকে পথ দেখায়।”

“এটি আমি উপলদ্ধ্বি করি। তাই দেশের যেখানেই অন্যায় হবে আমি তার প্রতিবাদ করবো। এই ম্যান্ডেট আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দিয়েছে।”

এ কারণেই ‘ছাত্রলীগ তার ওপর ক্ষুব্ধ’ বলে মনে করেন তিনি।

নুরুল হক নূর অভিযোগ করেন, “নানা মেকানিজম ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আমাদের এগারজন প্রতিনিধির ডাকসুতে ঠেকানো হয়েছিল, কিন্তু আমাদের দুজনকে আর পারেনি। এই পরাজয় ছাত্রলীগ মেনে নিতে পারছে না।”

তিনি বলেন, দেশে এমনিতেই রাজনৈতিক দলগুলো কোণঠাসা। এর মধ্যেও সারা দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জনপ্রিয়।

“এজন্যই তাদের হুমকি বলে মনে করছে এবং সে কারণেই তার ওপর বারবার হামলা করা হচ্ছে,” দাবী করেন তিনি।

তার সংগঠনের একজন নেতা ও ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলছেন, তিনটি সুনির্দিষ্ট কারণে ছাত্রলীগ ডাকসু ভিপিকে সহ্য করতে পারছেনা।

“প্রথমত বাধা-হামলা নির্যাতন করেও কোটা সংস্কার আন্দোলন ঠেকাতে পারেনি, দ্বিতীয়ত ডাকসু নির্বাচনে তার কাছে ছাত্রলীগ হেরেছে; এবং তৃতীয়ত দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিপি ও তার সংগঠনের জনপ্রিয়তা।”

‘ছাত্রলীগ হামলা করেনি তবে বগুড়ার ঘটনা তদন্ত করবো’
ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী ডাকসু ভিপির ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তবে তিনি বলেছেন যে বগুড়ার ঘটনার তারা “স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত করবেন ও সংগঠনের কেউ জড়িত থাকলে তারা ব্যবস্থা নেবেন”।

“ডাকসু ভিপির অনুসারীরা তার জনপ্রিয়তায় ছাত্রলীগ ভীত হয়ে পড়ছে কিংবা নির্বাচনের পরাজয় ছাত্রলীগ মেনে নিতে পারেনি” বলেই হামলা করছে বলে যে অভিযোগ করছে তাও প্রত্যাখ্যান করেন মিস্টার রাব্বানী।

তিনি বলেন, “ডাকসু ভিপি থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় যেখানে গিয়েছেন সেখানে শিবিরের লোকজনের উপস্থিত ছিল বলে খবর আসছে।”

“আমরা সংগঠন থেকে কোনভাবেই কোন বাধা বা হামলার কোন নির্দেশনা দেইনি। সেখানে হয়তো শিবিরের লোক থাকায় কোন ঘটনা ঘটেছে।”

“আর বগুড়ার ঘটনার খবর আমরা শুনেছি। আমাদের কেউ তাতে জড়িত ছিল না। তারপরেও আমরা নিজ থেকেই তদন্ত করবো।”

শিবিরের লোক থাকার যে দাবী ছাত্রলীগ করছে সে কারণেই হামলা করা হয়েছে কি-না প্রশ্ন করলে মিস্টার রাব্বানী বলেন, “শুনেছি তিনি (ভিপি) রাজনৈতিক দল করবেন এবং সেটা তিনি করতেই পারেন।”

 

সূত্র: বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button