নদীকে বাঁচাতে না পারলে নিজেরাও বাঁচাতে পারবো না : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদী একটি জীবন্ত সত্তা। নদীকে মানুষের মতো জীবন্ত মনে করতে হবে। নদীকে বাঁচাতে না পারলে নিজেরাও বাঁচাতে পারবো না। নদী আমাদের পানি দেয়। নদীকে আমরা মেরে ফলেতে পারি কিন্তু সৃষ্টি করতে পারিনা। নদীর সঙ্গে মানুষের আত্নার সম্পর্কে আছে। নদীর পানির স্রোত আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। আমাদের আমিষের চাহিদা মেটায়, আমাদের কৃষককে বাঁচিয়ে রাখে। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সুন্দরভাবে বাঁচানোর জন্য নদীকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

শনিবার (৪ নভেম্বর) সকাল গাজীপুরের ‘শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘এসো নদীর গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

নদীভিত্তিক জীবন, অর্থনীতি ও পর্যটন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং পরিণত উপলব্ধির প্রয়াস যোগাতে বেলা, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় ‘এসো নদীর গল্প শুনি’ অনুষ্ঠান। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণীর আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিকর্মী, সুধীজন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা।

শনিবার সকাল ১০ টা থেকে গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে আসতে শুরু করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। তাদের নির্ধারিত আসনে বসে উপভোগ করেন নদীর বিভিন্ন গল্প।

অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান আলোচক হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর এবং রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেনের সঞ্চালনায় এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মালয়েশিয়া থেকে ভার্চুয়ালি নদী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট সেন্টারের বিভার কেয়ার ম্যানেজার ড. কালিদ দাসান।তিনি তার বক্তব্য নদীর গুরুত্ব, দূষণ এবং প্রতিকার নিয়ে নানাবিধ আলোচনা করেন। জলবায়ু পরিবর্তন, মানব জাতির জন্য নদী গুরুত্ব এবং নদীর স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন। দূষণ রোধে মানুষের করনীয় ও দায়িত্বের কথা তুলে ধরেন৷ এসময় তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে নদী নিয়ে কাজ করার কথা বলেন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের চেয়ারম্যানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, এসো নদীর গল্প শুনি, এই নামটি দারুণ সুন্দর। এই নামটিই এই আয়োজনের অন্যতম সফলতা। শিল্পায়নের ফলে নদী দখল ও দূষণ বেড়ে যায়। নদী নিয়ে সরকারি আইনকানুন অনেক বেশি শক্তিশালী। এরমধ্যেও দখল দূষণ হচ্ছে। এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। যদি আমরা সবার সামনে সচেতন হতে না পারি তাহলে নতুন প্রজন্ম চরম ক্ষতির মধ্যে পড়বে। নদী জীবন্ত সত্তা, এটি হত্যা করা যাবে না। যারা নদী নিয়ে কাজ করে তাদের অনেক বাধ্যবকতা থাকে। আমাদের নদী দখলে অনেক শক্তিশালী লোক পেছনে থাকে। এসবের মধ্যেও আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর বাসযোগ্য করার জন্য সচেতন ও প্রতিবাদ করা জরুরি।

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, আমরা শিল্পের বিরুদ্ধে না, আমরা নদী বান্ধব শিল্প চাই। আমাদের নতুন প্রজন্মকে নদী চিনতে হবে। নদীকে বুক দিতে হবে, পিঠ নয়। নদী এবং পরিবেশ সম্পর্কে উন্নত এবং স্পষ্ট ধারণা, নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার, নদীর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের নিয়ম জেনে সমাজের প্রয়োজনে তা কাজে লাগানো এবং সর্বোপরি নদীর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর সহাবস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শৈশব থেকেই শুরু হওয়া উচিত। বলাবাহুল্য, আমাদের প্রচলিত শিক্ষা-ব্যবস্থা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে সেই অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট নয়। তাই উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের অনুসন্ধিৎসাকে নদীর বিস্তৃত পরিম-লে নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি হলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ পাঠচক্র, বিষয়ভিত্তিক আড্ডা ও ক্যাম্পেইনসহ নদী-বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা নদী প্রেমী তুহিন শুভ্র বলেন, নদীর কাছে আসো পশ্চিম বঙ্গ ও ভারতবর্ষে ২০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তার নিজের লেখা নদী ও প্রকৃতির একটি গান শুনান। নদীকে স্মরণ করে তিনি বলেন তোমার কাছে আমরা ঋনি, তুমি ভালো থাকলেই আমরা ভালো থাকি।

এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, সাসটেইনেবিলিটি এন্ড জিএস কলম্বিয়া ওয়াশিং প্লান্ট লিঃ এর মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মেজর (অবঃ) মোঃ ইমতিয়াজ ইসলাম ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপপরিচালক ড. সেলিম শেখ। অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, সম্মানিত আলোচক অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, বেলার হেড অব প্রোগ্রাম ফিরোজুল ইসলাম মিলন প্রমুখ।

এসো নদীর গল্প শুনি অনুষ্ঠানে অংশ নেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর কমার্স কলেজ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন কলেজ, গাজীপুর জেলা কলেজ, মাওনা মডেল কলেজ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা মুসাফির ইশকুল, প্রথম আলো বন্ধুসভা, রোটারি ক্লাব গাজীপুর, অনির্বাণ সেবা ফাউন্ডেশন, বইপোকা পাঠাগারে, গাজীপুর ট্যুরিস্ট ক্লাব। পরে তাদেরকে সার্টিফিকেট ও শুভেচ্ছা উপহার পাটের ব্যাগ, গামছা ও একটি করে বই উপহার দেওয়া হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button