দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরীওয়াল গ্রেফতার, মোবাইল বাজেয়াপ্ত

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করল ইডি। আবগারি দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ৯ বার তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু তিনি হাজিরা দেননি। এর পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে পৌঁছয় ইডি। ঘণ্টা দুয়েকের তল্লাশি অভিযান শেষে বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁর মোবাইল ফোন। এর পরেই রাত ৯টা নাগাদ কেজরীওয়ালকে গ্রেফতার করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের আশপাশের এলাকায় জারি করা হয়েছে ১১৪ ধারা। শুক্রবার পিএমএলএ আদালতে হাজির করানো হবে আপ প্রধানকে। দিল্লির মন্ত্রী তথা আপ নেত্রী অতিশী জানিয়েছেন, কেজরীওয়ালই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন। তিনি জেলে বসে সরকার চালাবেন।

দেশের ইতিহাসে কেজরীওয়ালই প্রথম, যিনি মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকাকালীন গ্রেফতার হলেন। এর আগে ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেফতার করে ইডি। তবে গ্রেফতারির আগে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেফতারির পরেই তাঁর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আপ কর্মী-সমর্থকেরা। গোটা রাজধানী জুড়েই প্রতিবাদ শুরু করেন তাঁরা।

সূত্রের খবর, ১২ জনের ইডি আধিকারিকের একটি দল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়েছিল। তল্লাশি অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় নথি দেখিয়েই কেজরীওয়ালের বাড়িতে প্রবেশ করে তারা। তাঁর বাসভবনের সামনে মোতায়েন করা হয় পুলিশ। অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই রক্ষাকবচ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরীওয়াল। জরুরি ভিত্তিতে মামলা শোনার আর্জি জানানো হয় তাঁর তরফে। তবে সেই শুনানি বৃহস্পতিবার হয়নি। শুক্রবার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

দিল্লির আবগারি মামলায় আপ প্রধানকে মোট ন’বার সমন পাঠিয়েছিল ইডি। কিন্তু আট বারই হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। শেষ পাঠানো সমনে বৃহস্পতিবারই ইডি দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু হাজিরা না দিয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন কেজরীওয়াল। হাই কোর্ট তা খারিজ করলে সুপ্রিম কোর্টে যান তিনি। আদালতে পেশ করা আবেদনে কেজরীওয়াল বলেন, ‘‘ইডি নিশ্চয়তা দিক যে, তাদের তলবে সাড়া দিলে আমার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর পদক্ষেপ করা হবে না।” আপের অভিযোগ ছিল, ইডির লক্ষ্য জিজ্ঞাসাবাদ নয়। এত দিন ধরেও তারা এই মামলায় কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে কোনও তথ্যপ্রমাণ পায়নি। তাই লোকসভা ভোটের আগে সমন পাঠিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করার চেষ্টা চলছে।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি সুরেশকুমার কাইথ এব‌ং বিচারপতি মনোজ জৈনের ডিভিশন বেঞ্চে কেজরীওয়ালের আবেদন সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘আমরা উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। তবে আমরা এই পর্যায়ে মামলাকারীকে কোনও সুরক্ষা দেওয়ার কথা দিচ্ছি না।’’ হাই কোর্ট রক্ষাকবচ না দেওয়ার পরেই তৎপর হয় ইডি। আবগারি মামলায় বিআরএস নেত্রী কে কবিতাকে দিন কয়েক আগেই গ্রেফতার করেছে ইডি। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে ইডি হেফাজতে রয়েছেন তিনি। কবিতা ছাড়াও এই মামলায় এখনও পর্যন্ত আপের দুই প্রবীণ নেতা সিসৌদিয়া এবং আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিংহ গ্রেফতার হয়েছেন। রয়েছেন তিহাড় জেলে। অভিযোগ ওঠে, দিল্লি সরকারের ২০২১-২২ সালের আবগারি নীতি বেশ কিছু মদ ব্যবসায়ীকে সুবিধা করে দিচ্ছিল। এই নীতি প্রণয়নের জন্য যাঁরা ঘুষ দিয়েছিলেন, তাঁদের সুবিধা করে দেওয়া হচ্ছিল। আপ সরকার সেই অভিযোগ মানেনি। সেই নীতি যদিও পরে খারিজ করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে আপের এক নেতা দাবি করেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হলেন আমাদের নেতা। আমরা এমন আশঙ্কার কথাই এত দিন বলছিলাম।’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button