সাক্ষ্য দেওয়ার নাম করে লাপাত্তা ওসি মোয়াজ্জেম?
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সাক্ষ্য দেওয়ার নাম করে লাপাত্তা হয়ে গেছেন সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। বর্তমানে তিনি তার নতুন কর্মস্থল রংপুর রেঞ্জ অফিসেও যাচ্ছেন না। পুলিশ সদর দফতরেও তাকে দেখা যাচ্ছে না ক’দিন থেকে। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন কোথায় আছেন, জানেন না দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তারাও।
ফেনীর সোনাগাজী থানা থেকে গত ১০ এপ্রিল তাকে প্রত্যাহার করে প্রথমে ফেনীর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বদলি করা হয়। কিছুদিন পর সেখান থেকে বদলি করা হয় রংপুর রেঞ্জে।
পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী, গত ৮ মে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। সপ্তাহ খানেক সেখানে অফিসও করেন। স্থানীয়রা তাকে সেখানে অফিস করতে দেখেছেনও। কিন্তু গত ২৭ মে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর তিনি ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা বলে ঢাকায় আসেন। এরপর থেকে তিনি কোথায় আছেন, সেই তথ্য নেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে। তবে, গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ২৭ মে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের পেশকার শামীম আল মামুন বলেন, ‘ওই দিনই ডাকযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা ফেনীর উদ্দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
তবে, গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠানোর আটদিন পার হলেও সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পায়নি বলে দাবি করেছে থানা পুলিশ। এরমধ্যে সোমবারসহ (৩ জুন) কর্মদিবস ছিল পাঁচদিন। এই পাঁচদিনেও ঢাকা থেকে ডাক পৌঁছেনি ফেনীতে।
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের গ্রেফতারি পরোয়ানা পেয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে সোমবার (৩ জুন) বিকালে সোনাগাজী থানার ওসি মাইন উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা তো লুকানোর কিছু নয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পেলে আমরা সেটা তামিল করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেবো। কিন্তু গ্রেফতারি পরোয়ানার সেই ডাক এখনও আমরা পাইনি।’
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন এখন কোথায় আছেন এবং তাকে গ্রেফতারে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘বদলি হয়ে রংপুর রেঞ্জে যোগ দেন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এরপর তিনি সোনাগাজীর ঘটনায় গত ২৭ মের আগেই ঢাকায় সাক্ষ্য দিতে যান। এরপর আর রংপুরে ফেরেননি। এখন কোথায় আছেন সেটাও তার জানা নেই। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পেলে অবশ্যই ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন গত ২৯ মে জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে যান। আগামী ১১ জুন বিচারপতি হাবিবুল গণির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে। গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে এইচএসসি সমমানের আলিম আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। তখন তাকে কৌশলে মাদ্রাসাটির সাইক্লোন শেল্টার ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।
এর আগে, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ এ ব্যাপারে সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।