যুদ্ধকামী ন্যাটো’র বিপজ্জনক নানা ষড়যন্ত্র

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি বলেছেন, উত্তর আটলান্টিক সামরিক চুক্তি সংস্থা বা ন্যাটোর মূল প্রাধান্যের বিষয় হল যুদ্ধকামিতা, শান্তি-রক্ষা নয়।

সম্প্রতি ন্যাটো জোট গঠনের ৭৫ তম বার্ষিকী উপলক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ন্যাটো জোটের অপরাধী ও হস্তক্ষেপকামী রেকর্ড দেখানো হয়েছে যুগোস্লাভিয়ায়, সার্বিয়ায়, লিবিয়ায়, আফগানিস্তানে এবং বর্তমানে ইউক্রেনে। এই জোট এখন পূর্ব দিকে এর উপস্থিতির বিস্তার ঘটাতে চায়।

ওয়াশিংটনে এমন সময় ন্যাটোর শীর্ষ বৈঠক হচ্ছে যখন জোটটি বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সামরিক সংকটে জড়িয়ে রয়েছে। এইসব সংকটের মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের অব্যাহত যুদ্ধ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ইউরোপে উগ্র ডানপন্থীদের উত্থান।

ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গের মতে ন্যাটোর সম্প্রসারণ ও অন্য দেশগুলোর জন্য এর খোলা দুয়ার নীতি ‘একটি স্পষ্ট ও সহজ সিদ্ধান্ত নয়’ রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ভয় ও উদ্বেগের কারণে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) তিন দিনের বৈঠক চলাকালে ইউক্রেন যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, এই যুদ্ধ কয়েক প্রজন্মের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তার সংকট। আর এই যুদ্ধে রাশিয়ার বিজয় হবে সবচেয়ে বড় বিপদ ও ব্যয়। এ ছাড়াও ইউক্রেনের প্রতি ন্যাটোর সমর্থনের বিষয়টিও নানা ব্যয় ও বিপদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। আর যুদ্ধের সময় কোনো নিরাপদ ও সুরক্ষিত পছন্দ বা বিকল্পগুলো থাকে না।

এদিকে ভিয়েনা আলোচনায় রাশিয়ার প্রধান আলোচক কন্সতান্তিন গ্যাভ্রিলভ হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ন্যাটোর সদস্যদের চলমান পদক্ষেপগুলো পরমাণু শক্তিধর পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াবে।

ওদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন ইউক্রেনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ন্যাটো কিয়েভে একজন উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি পাঠাবে। ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর সম্পর্ক জোরদারের বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার হুঁশিয়ারি দেয়া সত্ত্বেও এইসব বক্তব্য এসেছে ন্যাটোর পক্ষ থেকে।

মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও কৌশলবিদ জন মিয়ার্শিমার বলেছেন, রাশিয়ার সীমান্তের দিকে ন্যাটো জোটের বিস্তার উদারতাবাদী বিভ্রম থেকে উদ্ভূত এবং এটাই যুদ্ধের মূল কারণ।

ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আনাতোলি এন্তোনভ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাটোর চলমান শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠানের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোতে থাকা এর ক্রীড়নক সরকারগুলো সমরবাদী নীতির বিস্তার ঘটাতে চায় এবং তারা ইউক্রেনের প্রতি অন্ধ সমর্থন দিয়ে এ অঞ্চলে উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে চায়।

এন্তোনভ আরও বলেছেন, ওয়াশিংটনে এই সামরিক জোটের শীর্ষ বৈঠক মার্কিন সরকার ও এর সহযোগীদের আক্রমণাত্মক স্বভাবের ওপর গুরুত্বের স্বাক্ষর এবং এ থেকে বোঝা যায় যে তারা বিশ্বের ওপর তাদের দাবি ও লক্ষ্যগুলো চাপিয়ে দিতে চায়।

ন্যাটো জোট যে কোনো মূল্যে টিকে থাকার জন্য অন্যদের ওপর অভিযোগ চাপিয়ে দিচ্ছে। ব্যাপারটি এত তীব্র হয়েছে যে ন্যাটোর মহাসচিব সম্প্রতি চীনসহ অন্য কয়েকটি দেশ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সহযোগিতা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। (সম্প্রতি ইরানও এ ধরনের অভিযোগের শিকার হয়েছে আরও একবার। ইরান এ ধরনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে আসছে)

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান এর জবাবে বলেছেন, ন্যাটোর কথিত নিরাপত্তা রক্ষা করা হচ্ছে অন্যান্য দেশগুলোর মূল্যের বিনিময়ে। এই জোটের কথিত এইসব নিরাপত্তা ও তৎপরতা বিশ্বের জন্য ও নানা অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে।

চীনের এই কূটনীতিক আরও বলেছেন, চীন ন্যাটোর এইসব অভিযোগের ও বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণের তীব্র বিরোধিতা করছে। একইসঙ্গে অন্যদেরকে অভিযুক্ত করার যে ইচ্ছা ন্যাটো পোষণ করছে তারও বিরোধিতা করছে। আসলে এইসব অজুহাত দেখিয়ে ও চীনকে ব্যবহার করার মাধ্যমে ন্যাটো পূর্ব দিক থেকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও ন্যাটো জোটের বিস্তার ঘটাতে চায় এবং বাড়তে চায় নানা ধরনের আঞ্চলিক উত্তেজনা।

এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেনের প্রতি ন্যাটো জোটের সামরিক সহায়তা দেশটিতে যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে এবং এ ধরনের পদক্ষেপের পরিণতি সম্পর্কে রাশিয়া বেশ কয়েক বার ন্যাটোকে সতর্ক করে দিয়েছে।

Related Articles

Back to top button