ব্রি’র ধান গবেষণায় মাইলফলক: ১১৫টি জাত উদ্ভাবন, ৮০% জমিতে ব্রি ধানের আধিপত্য

বিশেষ প্রতিনিধি : গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর গবেষণায় দেশের কৃষি খাত পেয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ১১৫টি উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮টি হাইব্রিড জাত রয়েছে। বর্তমানে দেশের মোট ধান উৎপাদনের ৯০ শতাংশই ব্রি উদ্ভাবিত জাতের।

শনিবার (১৮ জানুয়ারি) গাজীপুরে ব্রি’র বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০২৩-২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এসময় বক্তারা জানান, ব্রি উদ্ভাবিত বেশ কিছু জাত প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল এবং উন্নত পুষ্টিগুণসম্পন্ন, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। তিনি বলেন, “ব্রি’র কার্যক্রম এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে কৃষিবান্ধব নীতিমালা ও অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।”

কর্মশালায় ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিন খান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (FAO) প্রতিনিধি জিয়াও কুনশি, ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনোয়ারুল হক।

বক্তারা বলেন, ব্রি উদ্ভাবিত ধানের জাতগুলো দেশের কৃষির আধুনিকায়ন ও উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। অনুষ্ঠানে ব্রি পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. রফিকুল ইসলাম সাম্প্রতিক গবেষণা অগ্রগতি ও অর্জনের বিষয়ে একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

ব্রি’র প্রধান গবেষণা লক্ষ্য হলো কৃষি খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং প্রতিকূল পরিবেশেও টেকসই জাত উদ্ভাবন। এ লক্ষ্যে গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের গতি বাড়াতে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত উদ্যোগের উপর জোর দেয়া হয়।

অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ব্রি উদ্ভাবিত জাতের জনপ্রিয়তার পেছনে এর উচ্চ উৎপাদনশীলতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেয়ার সক্ষমতা কাজ করেছে।

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষি খাতের অগ্রগতিতে ব্রি’র অবদান অনস্বীকার্য। বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের চাষ হয়, যা দেশের কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকারের পাশাপাশি সব অংশীদারদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Related Articles

Back to top button