অটোরিকশাচালকের মৃত্যু: ওসিসহ ৫ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে পুলিশের পিটুনিতে ইয়াসিন মিয়া (৪০) নামের এক অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়েছে—এমন অভিযোগ এনে থানার ওসি, তিন এসআই ও এক কনস্টেবলের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে। গত রোববার কিশোরগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন মারা যাওয়া ইয়াসিন মিয়ার মেয়ে মরিয়ম আক্তার।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন কটিয়াদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম, উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন, মস্তফা মিয়া, নাহিদ হাসান ও কনস্টেবল আশরাফুল ইসলাম।
এর আগে এ ঘটনায় ওসি ছাড়া বাকি চারজনকে প্রত্যাহার করে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে ইয়াসিনের মৃত্যুর কারণ জানতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) মো. তোফাজ্জল হোসেনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাছান চৌধুরী। আদালত মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, ‘আমার বাবা ইয়াসিন মিয়া পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক। সাত থেকে আট বছর ধরে কটিয়াদী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা সড়কে অটোরিকশা চালান। ৬ জানুয়ারি বিকেলে আমি ও আমার বোন কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান করছিলাম। পরে বাবার অটোরিকশায় করে বাড়ি যাচ্ছিলাম। যাওয়ার পথে বাবা আমাদের বসিয়ে রেখে পাওনা টাকা পেতে কটিয়াদীর জালালপুর ইউনিয়নের চরঝাকালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়ার বাড়িতে যান। পুলিশ তখন লিটনকে গ্রেপ্তার করতে লিটনের বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে আমার বাবাকে পেয়ে আসামি মনে করে মারধর শুরু করে। আমার বাবা দৌড়ে অটোরিকশার কাছে চলে আসেন। পুলিশও বাবার পিছু নেয়। পরে আমার বাবাকে ধরে আমাদের সামনে মারধর শুরু করে। বাবাকে বাঁচাতে পুলিশের হাতে-পায়ে ধরেও রক্ষা করতে পারিনি। একপর্যায়ে ১ নম্বর আসামি এসআই কামাল হোসেন পায়ের বুট দিয়ে বাবার গলায় চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।’
বাদী মরিয়ম আক্তার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বাবাকে আমাদের চোখের সামনে নির্যাতন করে হত্যা করে পুলিশ। বিভিন্ন মানুষ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর কারণে মামলা করতে একটু সময় নিতে হয়েছে।’
আদালতে হওয়া মামলার বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হোসেনপুর সার্কেল) মো. তোফাজ্জল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে কি না জানা নেই। কোনো কাগজপত্র হাতে পাইনি।’
তবে অভিযুক্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘এখনো মামলা হয়নি। আদালতে অভিযোগ হয়েছে। আদালত অভিযোগটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।’
ওসির এমন দাবির বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী আবু তাহের সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আদালত অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে মামলার নম্বর যুক্ত করেছেন।’
স্থানীয় লোকজন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, কটিয়াদীর জালালপুর ইউনিয়নের চরঝাকালিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়ার বাড়িতে ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। লিটন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। মূলত লিটনকে ধরতে ওই দিন পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেছিল। অভিযানে নেতৃত্ব দেন প্রত্যাহার হওয়া এসআই কামাল হোসেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে লিটনের বাড়ির লোকজন দৌড়ে পালিয়ে যান। অভিযানের সময় লিটনের বাড়িতে ইয়াসিনও ছিলেন। ইয়াসিনের বাড়ি নরসিংদী। শুরু থেকেই পরিবারের সদস্যরা পুলিশের নির্যাতনে ইয়াসিনের মৃত্যুর অভিযোগ করে আসছিলেন।
তবে পুলিশের দাবি, দৌড়ানোর সময় ইয়াসিন অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তখন তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার সময় তাঁর মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য : পুলিশ পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে যোগদানের দুই সপ্তাহের মাথায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় গত ২২ অক্টোবর প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছিল। পরে ২২ অক্টোবর তাকে কটিয়াদী থানায় পদায়ন করা হয়।
মো. তরিকুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে গাজীপুর সদর সার্কেল অফিসে, কিশোরগঞ্জ সদর থানায়, গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় এবং শিল্প পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও এসআই হিসেবে কাপাসিয়া থানায় দায়িত্ব পালন করেন।
আরো জানতে…….
যোগদানের দুই সপ্তাহেই কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি প্রত্যাহার