ওসি’র নির্দেশে মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিয়ে রিকসা চালকের নামে মাদকের মামলা দিল এসআই আব্দুর রহমান!

বিশেষ প্রতিনিধি : রাসেল দর্জি (২৮) নামে এক মাদক কারবারিকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটকের একদিন পর ‘আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে তার সঙ্গী কাউছার (২৭) নামে এক রিকসা চালককে মাদকের মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে’ বলে অভিযোগ উঠেছে কালীগঞ্জ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে।

এই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন কালীগঞ্জ থানার আলোচিত উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান।

এর আগেও গত ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুই মাদকাসক্তকে ইয়াবাসহ আটকের পর একরাত থানার লকাবে আটকে রেখে ৫ এপ্রিল শুক্রবার ভালবাসা দেখিয়ে ছেড়ে দিয়ে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন এসআই আব্দুর রহমান।

ওই সময় তিনি বলেছিলেন ‘তদবির ছিল তাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে’। এবার বলছেন ‘ওসি’র নির্দেশে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে’।

এছাড়াও উদ্ধারকৃত ইয়াবার হিসেবেও করেছেন গরমিল। ঘটনার একদিন পর সোমবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। তবে ঘটনার সাথে বোরহান শেখ নামের গ্রাম পুলিশের (চৌকিদার) সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও জানা গেছে।

অনুসন্ধান এবং স্থানীয়দের ভাষ্যমতে জানা যায়, গত ২০ জুন দিবাগত রাতে উপজেলা জামালপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড ছৈলাদি গ্রামে উপজেলার কাপাইশ গ্রামের মোন্তাজ উদ্দিন দর্জির ছেলে মাদক কারবারি রাসেল দর্জি ৫০ পিস ইয়াবা আনতে যায়। এই সময় তার সঙ্গী ছিল উপজেলা মোক্তারপুর ইউনিয়নের পোটান (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধি আয়েছ আলীর ছেলে রিকসা চালক কাউছার (২৭)। ৫০ পিস ইয়াবা নিয়ে ফেরার সময় তাদের দু’জনকে আটক করেন ছৈলাদি গ্রামের তমিজ শেখের ছেলে গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) বোরহান শেখ। পরে ওই গ্রামের সফুর উদ্দিন শেখের ছেলে তাইজুল ইসলাম, মৃত সামছু শেখের ছেলে বাদল শেখ ও মফিজ উদ্দিন ওরফে বুইড্ডা শেখের ছেলে জয়নাল শেখ বিষয়টি সমঝোতা করেন। এ সময় চৌকিদার বোরহান শেখকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখালে ইয়াবা রেখে মাদক কারবারি রাসেলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সমঝোতাকারী তাজুল শেখের বিকাশ নম্বরে পরের দিন (২১ জুন) সকালে টাকাও পাঠানো হয়। কিন্তু এরই মধ্যে বিষয়টি জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে থানায় চলে যায়। পরে কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। এ সময় গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) বোরহান শেখকে সাথে নিয়ে অভিযান চালিয়ে মাদক কারবারি রাসেল ও মাদক বহনকারী রিকসা চালক কাউছারকে আটক করে থানার হাজত খানায় রাখা হয়। পরের দিন (২২ জুন) ওই এসআই বাদী হয়ে থানায় ৪৪ পিস ইয়াবা দেখিয়ে একটি মাদক (নং ২৩) মামলা দায়ের করেন। তাতে শুধুমাত্র আসামী করা হয় মাদক বহনকারী রিকসা চালক কাউছারকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল হাশেম।

কাউছারের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশের গাড়ী করে রাসেল ও কাউছারকে থানা থেকে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেলেও পথে কাপাসিয়া রোড নামক স্থানে নিয়ে রাসেলকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আর তাকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে মাদক কারবারি রাসেলের লোকজনের কাছ থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন এসআই আব্দুর রহমান।

অপরদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়রা জানান, ওই এসআই’র বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকবার আটক বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছিল। যা নিয়ে এর আগেও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় আগের চেয়ে আরো বেশি বেপরোয়া হয়েছে এখন তিনি। তাছাড়া এই ঘটনায় চৌকিদার বোরহানকে দিয়ে বানিজ্য করলেও তাকে ওই মামলার স্বাক্ষী করা হয়েছে। এতে বোরহান দোষী হলেও মামলা থেকে রেহাই পায়।

মাদক মামলার আসামী রিকসা চালক কাউছারের পিতা দৃষ্টি প্রতিবন্ধি আয়েছ আলী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমরা গবির বলে আসামী হতে হলো। টাকা দিলে রাসেলের মত কাউছারও ছাড় পেত। এই বিচার কার কাছে দিব? আল্লাহই একমাত্র বিচারক তিনি সব কিছুর বিচার করবেন।

এ ব্যাপারে চৌকিদার বোরহানের মুঠো ফোনে কল করলে তিনি ৫০ পিস ইয়াবাসহ আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও মাদক কারবারির কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে মোবাইল ফোনের লাইন বিচ্ছিন্ন করেন। পরে একাধিকবার ফোন দিয়ে তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

জামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান জানান, ঘটনার পরে তিনি চৌকিদার বোরহানের সংশ্লিষ্টতার কথা শুনে থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেছেন। কিন্তু পুলিশের লোকজন এসে পরে যা করলো তা তিনি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি দুঃখ করে বলেন, আসামী করতে হলে দু’জনকেই করতো। কিন্তু একজন মাদক কারবারিকে ছেড়ে দিয়ে মাদক বহনকারীকে কেন মামলা দেওয়া হলো?

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল হাশেম জানান, এত কিছুর ব্যাপারে তার জানা নেই। তাকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে তিনি তা তদন্ত করছেন।

এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে এসআই আব্দুর রহমান দু’জনকে আটকের বিষয় স্বীকার করে বলেন, ‘রাসেলের সাথে ইয়াবা না পাওয়ায় ওসি স্যারের সাথে কথা বলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে’। কাউছারকে নিয়মিত মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আর ৫০ পিস ইয়াবার মধ্যে ৬ পিস ভেঙ্গে যাওয়ায় মামলায় ৪৪ পিস উল্লেখ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

টাকার বিনিময়ে রাসেলকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই সব কথা তো ফোনে বলা যায় না। সন্ধ্যায় থানায় আসনে পরে কথা হবে’।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুবকর মিয়া জানান, মাদক কারবারি রাসেলের বিষয়টি তার জানা নেই। কাউছারকে ইয়াবাসহ আটক করায় তাকে মামলা দিয়ে গাজীপুর আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

আরো জানতে…..

কালীগঞ্জে দুই মাদকাসক্তকে ইয়াবাসহ আটকের পর ভালবাসা দেখিয়ে ছেড়ে দিল পুলিশ!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button