কালীগঞ্জে প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে দেবরের পরকীয়া : জিম্মি করে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জে সৌদি আরব প্রবাসীর স্ত্রী দেবরের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় সালিশের নামে দেবরকে জরিমানা করে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। এতে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
১০ এপ্রিল দৈনিক যুগান্তর-পত্রিকায় প্রকাশিত ‘প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে দেবরের পরকীয়া, অতঃপর..’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রবাসীর স্ত্রী জানান, চার বছর যাবত তার দেবরের (মামা শ্বশুরের ছেলে) সঙ্গে তার সম্পর্ক। কয়েক মাস আগে তাকে বিয়ে করেছেন বলেও তিনি স্বীকার করেন এবং তিন মাস আগে তাকে ডিভোর্স দেন; কিন্তু বিয়ে এবং ডিভোর্সের কোনো পেপার তিনি দেখাতে পারেননি।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন; কিন্তু স্থানীয় একটি দালালচক্র পরকীয়ার ওই ঘটনাকে সামাজিকভাবে মীমাংসার কথা বলে তাদের জিম্মায় নিয়ে বিবাদী রতনকে জিম্মি করে প্রথমে তার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়; কিন্তু তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তা অর্ধেকে নামিয়ে ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করে দালালচক্র। সেই পরিমাণ টাকা দিতেও তিনি অপারগতা প্রকাশ করায় সালিশে আড়াই লাখ টাকায় রফাদফা করে ওই চক্রটি।
কিন্তু আড়াই লাখ টাকায় রফাদফা হলেও দরিদ্র বিবাদী রতনের কাছে নগদ কোনো অর্থ না থাকায় তার বাবার কাছ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া ৪ শতক জমি, টাকা দিতে না পারা পর্যন্ত ভোগদখল করার চুক্তিতে নন-জুডিশিয়াল সাদা স্ট্যাম্পে কৌশলে স্বাক্ষর রাখা হয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার ভয়ে বিবাদীকে এলাকায় এলে গণপিটুনি দেওয়া হবে বলে ভয় দেখিয়ে গ্রামছাড়া করেছে ওই দালাল চক্র।
প্রবাসীর স্ত্রী (৩৫) তিন সন্তানের জননী হলেও অপরদিকে দেবর ২৪ বছরের অবিবাহিত যুবক।
অনুসন্ধানে উপজেলার ভূঁইয়াবো গ্রামে গিয়ে বিবাদীকে পাওয়া না গেলেও কথা হয় বাদী প্রবাসী, তার ছোট ভাই ও মা-বাবাসহ বিবাদী রতনের চাচা সাইজউদ্দিন ও মা রেহেনার সঙ্গে।
তারা জানান, গত ২৩ মার্চ সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন ওই প্রবাসী। আগের দিন ২২ মার্চ তার স্ত্রী বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে প্রবাসী দেশে ফিরে তার স্ত্রী ও মামাতো ভাই রতনের বিরুদ্ধে গত ৩ এপ্রিল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। ৫ এপ্রিল থানা থেকে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মুহাম্মদ জহরুল ইসলাম ঘটনার তদন্তে যান। এএসআই পরদিন ৬ এপ্রিল বাদী-বিবাদী দুইপক্ষকে বিকালে থানায় আসার কথা বলে চলে আসেন। কিন্তু ওই দিন বাদী গেলেও বিবাদী আসতে দেরি করায় অপেক্ষা করে এএসআই জহরুল ইসলাম জরুরি ডিউটিতে চলে যান।
বিবাদী রতনের মা রেহেনা কান্নাকাটি করে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, বাবা আমরা গরিব মানুষ, আমাদের বাঁচান। আমরা গরিব মানুষ তাই টাকা-পয়সা নাই বিধায় সাদা স্ট্যাম্পে আমার ছেলের স্বাক্ষর নিয়েছে এবং বলেছে আড়াই লাখ টাকা যত দিন দিতে না পারবে ততদিনি তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া ৪ শতক জমি বাদীরা ভোগদখল করবে। এছাড়াও আমার ছেলে বাড়ি এলে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। এ কারণে বর্তমানে আমার ছেলে বাড়িছাড়া।
এদিকে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত উভয় পরিবার জানায়, থানার পাশে জাকারিয়ার অফিসে নিয়ে সালিশ বসানো হয়। একপর্যায় রতনকে চাপ সৃষ্টি করে টাকা দাবি করে।
এ ব্যাপারে জাকারিয়া আল-মামুন তার ব্যাপারে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার অফিসে কোনো সালিশ করিনি। তবে বাদী-বিবাদী আমার পূর্ব পরিচিত হওয়ায় অফিসে চা খাওয়ার দাওয়াত দেই। পরে তারা আমার অফিসে যায় এবং তাদের চা আপ্যায়ন করি।
অপরদিকে প্রবাসীর ছোট ভাই জানান, জাকারিয়া আল-মামুনের অফিসে সালিশ করে সাক্ষীসহ বিবাদী রতনের স্বাক্ষরিত সাদা স্ট্যাম্প দুই দিন তার কাছে রেখে আমাদের কাছে দিয়ে গেছে।
ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ থানার এএসআই মুহাম্মদ জহরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন আমি বাদী-বিবাদী দুইপক্ষকে থানায় আসতে বললেও বিবাদীপক্ষ দেরি করায় আমি তাদের জন্য অপেক্ষা করে জরুরি ডিউটিতে চলে যাই। তবে এ সময় বাদীপক্ষের মধ্যে কেউ একজন বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসার কথা বলেন। পরে আমি সেটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছি, আপনারা সামাজিকভাবে মীমাংসা করে আপসনামা ও অভিযোগ প্রত্যাহারের আবেদন থানার ডিউটি অফিসারকে দিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই; কিন্তু এরপর আমি কিছু জানি না তারা কোথায়? কারা কিভাবে মীমাংসা করেছেন তাও জানি না।