গাজীপুর

কালীগঞ্জে বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর, বিচার না পেয়ে বিষপানে প্রাণ দিলেন নারী!

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জ উপজেলার বেতুয়া এলাকায় দুই পক্ষের মারামারি থামানোর জেরে তৃতীয় পক্ষের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের শিকার হন এক পরিবার। বিচার না পেয়ে ওই পরিবারের এক নারী বিষপান করে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে ওই নারী বিষপান করলে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

নিহত নারী হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বেতুয়া এলাকার আব্দুল বাতেনের স্ত্রী রুবি বেগম (৬০)।

হামলা ও মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন—বেতুয়া মোল্লা বাড়ির টেক এলাকার মোজ্জাম্মেলের ছেলে মুন্না (২৭), মজহরের ছেলে সাব্বির (২২), মাহি উদ্দিনের ছেলে আবু তাহের (২০), মুজিবুরের ছেলে আবুল (৩২) ও অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জন।

অভিযুক্ত মুন্না ও সাব্বির

নিহতার ছেলে সাইফুল ইসলাম, রাহমাতুল্লাহ ও স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে সাইফুলের চাচাতো বোন মাহফুজা (২০) ও তার স্বামী জসিমের ডিভোর্স সংক্রান্ত বিষয়ে স্থানীয় মোজ্জাম্মেল তার বাড়িতে বিচার বসান। বিচার শেষে ফেরার পথে জসিম ও তার সহযোগী মুন্নার দলবল নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে ঝগড়া ও মারামারি শুরু করে। ঘটনাটি দেখে থামাতে যান সাইফুল ও তার ভাই রাহমাতুল্লাহ। এর জেরে পরদিন (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় অভিযুক্তরা সাইফুলদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে রাহমাতুল্লাহ ও তার ভাই জাকিরকে মারধর করা হয়। তাদের বাঁচাতে গেলে রুবি বেগম, তার স্বামী আব্দুল বাতেন ও মেয়ে রেহানা বেগম (৪৫) কে মারধর করে হামলাকারীরা। পরে বাড়ি থেকে নগদ অর্থ ও জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়।

হামলায় আহতবস্থায় রুবি বেগম ও তার স্বামী আব্দুল বাতেন।

ঘটনার সময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করলে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে যান কালীগঞ্জ থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গোপাল চন্দ্র সূত্রধর। তিনি প্রাথমিক তদন্ত করে বিস্তারিত লিখে নেন এবং চিকিৎসা নিয়ে পরে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলেন। স্থানীয়দের সহায়তায় আহতদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

পরদিন বিকালে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর অভিযুক্তরা দেশীয় অস্ত্রসহ বাড়ির আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে এবং হত্যার হুমকি দেয়। কয়েক দফায় পুনরায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এতে তারা দুই দিন বাড়িতে প্রায় জিম্মি অবস্থায় ছিলেন। স্থানীয় মেম্বার ও চেয়ারম্যানকে ফোন করে সহায়তা চাওয়া হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এমনকি ওই পুলিশকেও ফোন করা হলেও কোনো সহযোগিতা মেলেনি।

এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন রুবি বেগম। বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকালে তিনি কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক পান করেন। পরে স্থানীয়রা তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখান থেকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। পরে গাজীপুরে যাওয়ার পথে ভাদুন এলাকায় পৌঁছালে অভিযুক্ত মুন্নার নেতৃত্বে অ্যাম্বুলেন্সের গতিরোধ করে এবং ভেতরে থাকা রাহমাতুল্লাহকে মারধর করে। প্রায় ২০-২৫ মিনিট তারা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুবি বেগমের মৃত্যু হয়।

ওইদিন বিকেলে সাইফুল ইসলাম কালীগঞ্জ থানায় গিয়ে এসআই সেলিম শেখের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে তিনি তা একজন নারী পুলিশের কাছে রেখে চলে যেতে বলেন। পরে অভিযোগের লিখিত কপি ওই নারী পুলিশের কাছে জমা দেন।

পরে থানা কম্পাউন্ডের ভেতরেই কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তি, যারা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দেয়, সাইফুলের বক্তব্য ভিডিও করে এবং অভিযোগের কপি সংগ্রহ করে। পরে জানা যায়, থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের হয়েছে।

সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গোপাল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “৯৯৯ থেকে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত শুনে তাদের চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ দিতে বলি। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। পরে শুনি ওই নারী বিষ খেয়ে মারা গেছেন।”

অপমৃত্যু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম শেখ বলেন, “অপমৃত্যু মামলার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আত্মহত্যার পেছনে প্ররোচনার বিষয়টিও তদন্তাধীন।”

তিনি আরো বলেন, “পূর্বে তাদের বাড়িতে হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে বলে তদন্তে গিয়ে জানা গেছে। তবে তারা কোন অভিযোগ দেয়নি। কিন্তু প্রতিপক্ষ মোজ্জাম্মেল পক্ষের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে বলে শুনেছি।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button