অর্থ-বাণিজ্যআন্তর্জাতিকআলোচিতজাতীয়

দর কষাকষি শেষে বাংলাদেশি পণ্যে ২০% সম্পূরক শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাণিজ্য নিয়ে দর কষাকষি শেষে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ ঠিক করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় ট্রাম্প প্রশাসন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় দফার বা চূড়ান্ত বৈঠক হয়।

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (প্রেস উইং) গোলাম মোর্তোজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের উপর ২০ শতাংশ শুল্কারোপ হবে।”

এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ২০ শতাংশ শুল্ক বাড়ায় এটি দাঁড়াবে ৩৫ শতাংশে।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে তৈরি পোশাকই ৭৩৪ কোটি ডলারের।

বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ এবং পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও কম্বোডিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ শুল্কারোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় বসার পর গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে।

এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক পুনর্বিবেচনা করতে ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয় সেখানে।

বাংলাদেশের মত অনেক দেশই শুল্ক কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন দরবার শুরু করে। কোনো কোনো দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক হার শুন্যের ঘরে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এবং সংলাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ৬২৬টি পণ্যে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেওয়া হয় বাজেটে। এর মধ্যে ১১০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়।

কিন্তু তাতে ট্রাম্পের মন গলেনি। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ৬ বিলিয়ন ডলারের মত। সে কথা তিনি মনে করিয়ে দিয়ে ৭ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, বাংলাদেশের ওপর সম্পূরক শুল্কের হার হবে ৩৫ শতাংশ, যা কার্যকর হবে ১ অগাস্ট। অবশ্য শুল্ক কমাতে এর মধ্যে আলোচনার সুযোগও রাখা হয়।

শুল্কের চাপ কমাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে টিসিবির জন্য গম, সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর বেসরকারি খাতে তুলা আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। শেষ মুহূর্তে উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িংয়ের কাছে ২৫টি উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশও দিয়েছে বাংলাদেশ।

এরপর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ও ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে সম্পূরক শুল্কের হার কমিয়ে ২০ শতাংশের ঘোষণা দেয় ওয়াশিংটন। এ প্রতিনিধি দলে রয়েছেন- প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান ও অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী।

এর আগে শুল্ক আলোচনা করতে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট’ সই করে যুক্তরাষ্ট্র। এ কারণে বৈঠকের কোনো বিষয় চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রকাশ করতে বা গণমাধ্যমকে জানাতে আপত্তি জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

চূড়ান্ত আলোচনার আগে দিন মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ‘প্যাকেজ প্রস্তাব’ দেওয়া হবে।

“বাণিজ্য উপদেষ্টা গিয়েছেন প্যাকেজ নিয়ে, আরও কী কী কেনা যায় তা নিয়ে। সেখানে কী কী আছে, সেটা এখন আমি বলবো না। তিনি (বাণিজ্য উপদেষ্টা) ফিরুক, তারপরে বলব।”

শুল্কের চাপ কার ওপর কত

রয়টার্স লিখেছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার কয়েক ডজন দেশ থেকে আমদানি পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্কহার ঘোষণা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে জরুরি ক্ষমতা ব্যবহারের কথা তিনি ফের বলেছেন।

১ অগাস্ট থেকে সম্পূরক শুল্ক কার্যকরের সময়সীমা আগেই ঘোষণা দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। সেই অনুযায়ী দর কষাকষি শেষে বেশ কিছু দেশের ওপর শুল্ক হারে পরিবর্তন এনেছে ওয়াশিংটন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button