ঢাকায় ফিরে নতুন সংকটে পোশাক শ্রমিকরা
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকায় ফিরে নতুন সংকটে পড়েছেন তৈরি পোশাক শ্রমিকরা। করোনা আতঙ্কে বাড়িওয়ালার তাদের বাসায় উঠতে দিচ্ছেন না। রবিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অনেক পোশাক শ্রমিক বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। আর হাতে টাকাও নেই যে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবেন।
পোশাক শ্রমিকদের রোববার (৫ এপ্রিল) কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ ছিল। আর কাজে যোগ না দিলে তারা বেতন পাবেন না এটাই ছিল নির্দেশনা। তাই যারা ২৬ মার্চ থেকে ছুটি পেয়ে বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন তাদের প্রায় সবাই ট্রাকে, পায়ে হেঁটে বা যেকোনো উপায়ে ঢাকা, সাভার ও গাজীপুরে ফিরে আসেন। কিন্তু রোববার সকালে কারখানায় গিয়ে জানতে পারেন ১২ তারিখ পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। গেট বন্ধ। সকালে ঢাকার মিরপুর ও সাভার এলাকায় মাইকিং করে ছুটি বাড়ানোর ঘোষণা দিতে শোনা গেছে। পুলিশ মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন পোশাক কারখানার সামনে, যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়। এর মধ্যেই আবার মিরপুরের কয়েকটি পোশাক কারখানায় আধাবেলা কাজও হয়। সেরকম একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘‘ভোরে এসেছি। বাসায় ঢুকতে পারিনি। বাড়িওয়ালা বলেছেন তোমরা করোনা আক্রান্ত কিনা জানিনা। তাই বাসায় ঢুকতে না পেরে গার্মেন্টস-এ চলে আসি। আধাবেলা কাজ করিয়ে আমাদের বলা হয় ১২ তারিখ পর্যন্ত ছুটি৷ কবে বেতন দেবে তাও জানায়নি। আমার বাড়ি বরিশাল। অনেক কষ্ট করে এসেছি। এখন বাড়ি কিভাবে যাব জানিনা। টাকা পয়সাও নেই।”
সাভারে ডেনিটেক গার্মেন্টস-এর কর্মী তসলিমা অক্তার বলেন, ‘‘ছুটি পেয়ে আমাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী গিয়েছিলাম। আমাদের জানানো হয়েছে ৫ তারিখ গার্মেন্টস খোলা। অনেক কষ্টে আড়াই হাজার টাকা খরচ করে এসেছি। না আসলে বেতন দেয়া হবেনা বলা হয়েছে। আসার পর দেখি ছুটি ১২ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আমরা কিভাবে বাড়ি যাব। বাস বন্ধ, হাতে টাকাও নেই। আমাদের বেতনও দেয়নি।”
তাসলিমাসহ আরো ১০ জন সাভারের গেন্ডা এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তাদের বাসার সামনে অপেক্ষা করছিলেন। তাদের বাড়িওয়ালা জানিয়ে দিয়েছে বাসায় উঠতে দেবেন না। তার আশঙ্কা এই পোশাক শ্রমিকরা যদি করোনা আক্রান্ত হন তাহলে আর সবাই আক্রান্ত হবেন। তাসলিমা বলেন, ‘‘বাড়িও ফিরতে পারছিনা বাসায়ও ঢুকতে পারছিনা। আমাদের এখন রাস্তায় থাকা ছাড়া গতি দেখছিনা। আগে যদি আমাদের এই ছুটির কথা জানানো হতো তাহলে আমরা এই বিপদে পরতাম না। আমাদের দেখার কেউ নেই।”
রিক্তা বেগম কাজ করেন স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্টস-এ। তিনি তার গ্রামের বাড়ি খুলনা থেকে ট্রাকে করে এসেছেন। গেন্ডার একই বাসায় তিনিও থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ১০ জন একসাথে থাকি। কেউই বাসায় ঢুকতে পারছিনা। বাড়ি ওয়ালার সাথে তর্ক করেও লাভ হচ্ছেনা। এখন যে আমাদের কী হবে কিছুই বুঝতে পারছিনা।”
এদিকে এই অবস্থার মধ্যেও পোশাক কারখানায় লে অফ এবং শ্রমিক ছাঁটাই অব্যাহত আছে বলে দাবী করেছেন শ্রমিক নেতারা। তারা অভিযোগ করেন, চাকরি যাবে এবং বেতন দেয়া হবেনা এই ভয় দেখিয়ে শ্রমিকদের ঢাকায় আনা হয়েছে। আসলে পোশাক কারখানার মালিকরা সরকারকে চাপে ফেলে বেশি সুবিধা আদায়ের জন্য শ্রমিকদের করোনার মধ্যে মাঠে নামাচ্ছেন। এটা অমানবিক। এই মালিকরাই সকারের কাছ থেকে বেশি সুবিধা নিয়েছেন।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুরকদার বলেন, ‘‘সরকার ও বিজিএমইএ কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেনা। এই লাখ লাখ শ্রমিককে তারা করোনার মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। আর তারা যদি ১২ তারিখের পরও কারখানা চালু করেন তাহলেও তাদের পক্ষে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘আমাদের কাছে খবর আছে এরইমধ্যে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাটাই করা হচ্ছে। আর কারখানা লে অফ করা হচ্ছে শ্রমিকদের সুবিধা না দেয়ার জন্য।”
তবে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এবং এফবিসিসিআই’র সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমার এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পোশাক শ্রমিকদের বাড়িও যেতে বলিনি আবার আসতেও বলিনি। তাদের ছুটিতে যার যার কারখানার পারে আবাসস্থলেই থাকতে বলা হয়েছিল। তারা নিজেরাই বাড়ি গেছেন৷ আবার নিজেরাই ফিরে গেছেন। আমাদের কী করার আছে।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘পোশাক শ্রমিকরা বেতন পাবেন, আতঙ্কের কিছু নেই।”
আর সরকারের তরফে বলা হয়েছে এই মাসের শেষ সপ্তাহে পোশাক শ্রমিকরা বেতন পাবেন।
এদিকে, পুলিশ ঢাকায় প্রবেশ এবং ঢাকা থেকে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে শনিবার।
পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা জানান, ‘‘জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি এবং যানবাহন ছাড়া আর কেউ ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে বের হতে পারবেনা। করোনায় সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”