আমেরিকায় আক্রান্ত তিন লাখ, হাসপাতালে জনসন

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি সপ্তাহে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে আমেরিকার। জার্মানিতে আক্রান্ত এক লাখ। করোনা মহামারি ভয়ঙ্করতম সপ্তাহে পৌঁছলো।

পার্ল হার্বার কিংবা ৯/১১-র মতো মর্মান্তিক সময়ের সাক্ষী হতে চলেছে আমেরিকা। চলতি সপ্তাহে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। সপ্তাহ শুরুর আগে আমেরিকার সাধারণ মানুষকে আগাম সতর্ক করলেন দেশের সার্জেন জেনারেল জেরম অ্যাডামস এবং প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অ্যাডামস জানিয়েছেন, নিউ ইয়র্ক, মিশিগানের মতো জায়গায় ভয়াবহতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে চলেছে। তবে মার্কিন প্রশাসনও পরিস্থিতির যথাসম্ভব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এর মধ্যেই আমেরিকায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে নয় হাজার ১৫৪ জনের। আক্রান্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ। এর মধ্যে কেবলমাত্র নিউ ইয়র্কেই রোববার পর্যন্ত মারা গিয়েছেন চার হাজার ১৫৯ জন। নিউ জার্সি, লুসিয়ানা এবং মিশিগানের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। আক্রান্ত বহু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশ ও দমকলের কর্মী। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দ্রুত সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকলের মাস্ক পরে থাকা দরকার। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তা মানতে নারাজ। দেশের মানুষকে মাস্ক পরতে বললেও তিনি নিজে পরতে রাজি নন। সাংবাদিকদের সে কথা জানিয়েও দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট।

পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে জার্মানিতেও। বহু দিন ধরে করোনার সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে জার্মানি। ইউরোপে প্রথম সে দেশেই করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার দৌলতে করোনা মৃত্যু অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের দেশ। কিন্তু গত কয়েক দিনে সেখানেও পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। রোববার পর্যন্ত প্রায় এক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন জার্মানিতে। মৃত্যু হয়েছে দেড় হাজারেরও কিছু বেশি। গত কয়েক দিনে মৃত্যুর হার এক লাফে অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যামেরিকার মতো জার্মানির জন্যও চলতি সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা অনেকটা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ইটালি এবং স্পেনে অবশ্য খানিকটা হলেও আশার আলো দেখা দিয়েছে। এখনও পর্যন্ত ইটালিতে সব চেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ১৬ হাজার। তার পরেই স্পেন, সাড়ে ১২ হাজার। শনিবারেও স্পেনে এক দিনে মৃতের সংখ্যা আটশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোববারে দু’টি দেশেই আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, দু’দেশেই আগামী কয়েক দিন মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। কিন্তু নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলে ক্রমশ বিপদ থেকে মুক্তি ঘটবে। এ দিকে যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতিও সঙ্কটজনক। ১০ দিন আগে দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের করোনা ধরা পড়েছিল। তার পর বাড়ি থেকেই কাজ করছিলেন তিনি। রোববার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যদিও প্রধানমন্ত্রীর অফিস জানিয়েছে, রুটিন চেক আপের জন্যই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই।

ইউরোপ এবং অ্যামেরিকার বাইরে মধ্যপ্রাচ্যে এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে ইরানে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের পরিস্থিতি সব চেয়ে ভয়াবহ। কারণ, করোনার সঙ্গে লড়াই করার মতো যথেষ্ট পরিকাঠামো সেখানে নেই। ঠিক মতো পরীক্ষা হলে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতো।

উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে চীনও। সে দেশের উহান প্রদেশ থেকেই প্রথম করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। মার্চের গোড়াতে চীন জানিয়েছিল, পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তারপরেও চীনে কিছু কিছু করোনা সংক্রমণের ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন জানিয়েছিল সকলেই বিদেশি। চীনের ভিতরে আর সংক্রমণ ঘটছে না। কিন্তু রোববার চীন ফের জানিয়েছে, নতুন করে নাগরিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সংখ্যায় খুব বেশি না হলেও নতুন করে এই সংক্রমণের ঘটনা ফের আশঙ্কা তৈরি করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আগামী দুই সপ্তাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী মারণ রোগের প্রভাব সব চেয়ে ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, এখনও পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৩টি দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১৩ লক্ষ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার লোকের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button