পুলিশের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের মাপকাঠি কী?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : প্রতিবছরই পেশাগত দক্ষতা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পুলিশ সদস্যদের পদক দেয়া হয়। পুলিশ সপ্তাহে এই পদক বিতরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার পদক পেয়েছেন মোট ৩৪৯ জন। তবে কয়েকটি পদক জয়ের কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অপরাধ দমন, মাদক নিয়ন্ত্রণ, আসামি গ্রেপ্তার, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বা জীবন বিপন্ন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করা পুলিশ সদস্যদের পদক পাওয়ার প্রচলিত মাপকাঠি। তবে এবার কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এমনকি কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান এবং খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের বিষয়টিও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এর জন্য পদক দেয়া হয়েছে।

পুলিশে সাহসিকতা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চার ধরনের পদক বা পুরস্কার চালু আছে।

এগুলো হলো: বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক বিপিএম (সেবা), রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (সেবা)। পদকের সঙ্গে বিপিএম-এর জন্য সম্মানী হিসেবে এককালীন এক লাখ টাকা এবং মাসিক দেড় হাজার টাকা, বিপিএম সেবার জন্য এককালীন ৭৫ হাজার টাকা এবং মাসিক দেড় হাজার টাকা, পিপিএম-এর জন্য এককালীন ৭৫ হাজার টাকা ও প্রতি মাসে এক হাজার টাকা এবং পিপিএম-সেবা পদকের জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও মাসিক এক হাজার টাকা পান পদক প্রাপ্তরা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবারই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পুলিশ সদস্য এই চার ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন। সাধারণত দুই ক্যাটাগরির সেবা পদক পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের তাঁদের কাজের জন্য দেয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এবার বাংলাদেশ পুলিশ পদক পেয়েছেন। ১০ ধরনের কৃত্বিপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে এই সর্বোচ্চ পুলিশ পদক দেয়া হয়েছে। অবদানগুলোর মধ্যে দু’টি হলো: ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন’ চৌকষ ও বুদ্ধিদীপ্ত পন্থায় সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ ও চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল ছাত্রদের আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ব্যাপারে আগাম গোয়েন্দা তথ্য দেয়ার জন্য পদক পেয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মীর শহীদুল ইসলাম।

একই কৃত্বিপুর্ণ কাজের জন্য পদক পেয়েছেন এসবির উপ-মহাপরিদর্শক মাহবুব হোসেন, বিশেষ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, এসবির পুলিশ পরিদর্শক এ কে এম সাহাবুদ্দীন শাহীন এবং উপ-পরিদর্শক মো. মহিউদ্দীন।

বলা হয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট পুঁজি করে নাশকতার চেষ্টা করেছে। তাঁরা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কুচক্রী মহল শনাক্ত করেন। তাঁরা আগাম জানতে পারেন ষড়যন্ত্র করে নিরাপদ সড়ক ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দিতে পারে।

একই ধরনের কৃতিত্বের জন্য পদক পেয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র সহকারি পুলিশ কমিশনার মো. শাহাদত হোসেন সুমা ও ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল আমীন।

খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করাকে কৃতিত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কাজী শফিকুল আলম মোট আটটি কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। তার মধ্যে ড. শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা একটি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খানকে গ্রেপ্তার করে পদক পেয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আশিকুর রহমান। তাঁর সাত কৃতিত্বের মধ্যে রাশেদকে গ্রেপ্তার একটি অন্যতম কৃতিত্ব। রাশেদকে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির মদদদাতা।

মানবাধিকার কর্মী এবং সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই অনেক পুলিশ সদস্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁদের কৃত্বিপূর্ণ অবদানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁদের অভিনন্দন জানাই। কিন্তু এরসঙ্গে আরো কিছু কৃতিত্বের কথা বলে যে পুরস্কার দেয়া হয়েছে, তা শুনে আমি অবাকই হয়েছি। নিরাপদ সড়ক জনগণের অত্যন্ত একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিল। সেই আন্দোলন দমন করার জন্য কেন পুলিশ পুরস্কৃত হবেন? কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। শহিদুল আলম একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি। তাঁকে যে কারণে গ্রেপ্তারের কথা বলা হচ্ছে, তা এখনো প্রমাণ করা যায়নি। এসব কাজের জন্য যদি পুরস্কৃত করা হয়, তাহলে তো বলতেই হবে, তাদের জনস্বার্থবিরোধী কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এটা রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। জনগণের অর্থে এই পুরস্কার দেয়া হয়। কিন্তু জনগণের অর্থে যদি জনবিরোধী কাজের জন্য পুরস্কার দেয়া হয়, সেটা তো আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক৷ এর মাধ্যমে পুরস্কারকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। পুরস্কারের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।’’

এ নিয়ে পুলিশের সাবেক আইজি মোহাম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘‘পুলিশের প্রধানত দু’টি কাজ। একটা হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা বা অর্ডার ফাংশন৷ আর আরেকটি হলো ক্রাইম ফাংশন। দু’টোই জরুরি৷ অর্ডারটা ঠিক থাকলে ক্রাইম কমে। এখন কথা হলো, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, খারাপ পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেটার ব্যবস্থা করা পুলিশের একটা কাজ। যদি সরকার মনে করে অর্ডার ঠিক রাখা হয়েছে, শান্তি-শৃঙ্খলা ঠিক রাখা হয়েছে, তাহলে সেটাকে সরকার একটা অর্জন বা অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে বিবেচনা করতেই পারে।’’

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button