এলএ অফিসে দালালি করেই শত কোটি টাকা আয়, দুদকের জালে সাংবাদিক!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সরকারের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) অফিসে দালালি করেই গত কয়েক বছরে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন কক্সবাজারের এক সাংবাদিক। তবে শেষ রক্ষা হলো না কক্সবাজারের বহুল বিতর্কিত সেই সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদের।

দুদকের জালে আটকা পড়েছেন কক্সবাজারে কর্মরত কালের কন্ঠ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমেদ।

কক্সবাজারে ৭০টির বেশি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২০ হাজার একরের বেশি পরিমাণ জমি। অধিগ্রহণকৃত এসব জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে কমিশন বাণিজ্যের দালাল চক্রের প্রধান তোফায়েলে।

সরকারি প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের কমিশন বাণিজ্যের জড়িত থাকার অভিযোগে কক্সবাজার বিতর্কিত সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদকে মঙ্গলবার ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালকের দপ্তরে তাকে এ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

একই দিন কক্সবাজার পৌরসভার ভূ-উপরস্থ পানি শোধনাগার স্থাপন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহনের দুর্নীতি নিয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, মামলা তদন্তে ইতোমধ্যে মেয়র মুজিবুর রহমান, তার ছেলে হাসান মেহেদী রহমান ও শ্যালক মিজানুর রহমানের ব্যাংক হিসেব থেকে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা জব্দ করে দুদক। তদন্তে চার কোটি টাকা শ্যালক মিজানুর রহমানের ব্যাংক হিসাব থেকে জব্দ করা হয়। এছাড়া বেশ কয়েকটি জমির দলিলও মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কক্সবাজার বিতর্কিত সাংবাদিক তোফায়েল আহম্মদকে ডাকা হয়েছিলো। তিনি সাংবাদিকতার প্রভাব খাটিয়ে কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) অফিসের কর্মকর্তাদের এক প্রকার জিম্মি করেই কমিশন বাণিজ্য করতেন। তার সাথে এলএ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত।

এলএ অফিসে দালালি ও কমিশন বাণিজ্য করে তোফায়েল শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় সাংবাদিক তোফায়েলের নেতৃত্বে বর্তমান ও সাবেক প্রায় ৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দালালি কমিশন বাণিজ্যের সিন্ডিকেটে গড়ে তুলে।

সাংবাদিক তোফায়েল ও মেয়র মুজিবুর রহমান দুদককে প্রাথমিকভাবে কিছু বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তারা বক্তব্যের স্বপক্ষে কাগজপত্র নিয়ে আসেননি।

দুদক সূত্রে আরো জানা গেছে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি র‌্যাবের অভিযানে ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকাসহ গ্রেপ্তার হন কক্সবাজার এলএ শাখার সার্ভেয়ার ওয়াসিম খান। তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুদকের মামলার তদন্ত শুরু হলে গত তিন মাস ধরে কক্সবাজার জুড়ে এলএ শাখার দালালদের মধ্যে আতংক তৈরি হয়। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া ৪ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান, তার ছেলে, শ্যালকসহ কক্সবাজারের দু’জন সাংবাদিক, কয়েকজন আইনজীবী, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, পৌর কাউন্সিলরসহ প্রায় অর্ধশত দালালের নাম উঠে আসে। এদের অনেকের ব্যাংক হিসাব, সম্পদ ও দলিল জব্দ করা হয়।

এছাড়া ওই মামলায় সম্পৃক্ত প্রায় ১৩ জন দালালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিঠি দেয় দুদক।

কয়েকজন ইতোমধ্যে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হলেও কয়েকজন উপস্থিত হননি।

সর্বশেষ হাজির হন পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান ও সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদ। একই দিনে আরিফ নামের আরেকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। জিজ্ঞাবাসাদ জন্য একই গাড়িতে চড়ে দুদক কার্যালয়ে আসেন কক্সবাজারের মেয়র মুজিব ও সাংবাদিক তোফায়েল।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুজনই একই গাড়িতে দুদক কার্য্যালয় ত্যাগ করেন।

দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তারা কিছু কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছেন। তখন কাগজপত্র অনুযায়ী আমার বক্তব্য দুদককে উপস্থাপন করবো’। তবে তোফায়েল আহম্মেদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি। এই সময় তাকে কিছুটা বিমর্ষ দেখা যায়।

 

 

সূত্র: অনলাইন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button