পুলিশের সব পর্যায়ে ডোপ টেস্ট চায় সংসদীয় কমিটি

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করার কাজ পুলিশের সব পর্যায়ে হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে সংসদীয় কমিটি। তাঁরা মনে করে, শুধু পুলিশ কেন সরকারি সব পেশাতেই মাদকাসক্তদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ প্রয়োজন।

ডোপ টেস্ট এবং পরে বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ১০ সদস্যকে চাকরি থেকে বিদায় করা হয়েছে। মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে ৬৮ জনকে। কিন্তু তাদের মধ্যে সাব- ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ওপরে কোনো পুলিশ সদস্য নাই৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের সব পর্যায়ে এই ডোপ টেস্ট হচ্ছে কিনা। সব পদ মর্যাদার পুলিশ সদস্য এই মাদক নজরদারি ও ডোপ টেস্টের আওতায় আসছেন কিনা।

ডিএমপিতে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে ১০ জন বরখাস্ত এবং ১৮ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ১৮ জনসহ ডোপ টেস্টে মোট পজিটিভ হয়েছেন ৬৮ জন পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে অবশ্য ৫০ জনই কনস্টেবল। বাকিদের মধ্যে উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাত জন, সার্জেন্ট একজন, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসএই) পাঁচ জন এবং নায়েক পাঁচ জন।

বরখাস্ত এবং সাময়িক বরখাস্ত মিলিয়ে মোট ২৮ পুলিশ সদস্য ছাড়াও আরো ১৫ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে ২৫ জনের বিরুদ্ধে।

ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) ওয়ালিদ হোসেন জানান, ‘‘প্রত্যেক ডিভিশনের প্রধানেরা প্রথমে নজরদারির মাধ্যমে সন্দেহভাজনদের চিহ্নিত করেন। এরপর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে মাদকাসক্ত কিনা তা চিহ্নিত করা হয়। পজেটিভ হলে বিভাগীয় মামলা করা হয়। বিভাগীয় মামলা পর্যায়েই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তদন্ত শেষে বরখাস্ত করা হয়৷ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’’

ডিএমপির ৫৭টি বিভাগে মোট ৫৭ জন ডিসি রয়েছেন৷ সদস্য আছে ৩৪ হাজার। আর সারদেশে দুই লাখেরও বেশি।

জনা গেছে, যাদের এখন পর্যন্ত চিহ্নিত এবং এবং যাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ২৯ জন মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত।

ওয়ালিদ হোসেন দাবি করেন, ‘‘সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত শাস্তির আওতায় এলেও কেউই নজদারির বাইরে নাই। বিশেষভাবে কোনো পদমর্যাদার কথা উল্লেখ না করেই বলতে পারি এটা সবার জন্য। আর শাস্তির আওতায় আসা পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়বে।’’

গত জুন মাস থেকে এই নজরদারি ও ডোপ টেস্টের কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ডিএমপির বাইরে এটা শুরু হয়েছে বলে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে এটা সারাদেশের পুলিশ সদস্যদের জন্যই করা হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, ‘‘পুলিশ সদর দপ্তরের কথা হলো পুলিশের কোনা সদস্য মাদক গ্রহণ করবে না, মাদকের ব্যবসায় জাড়াবে না। তাদের কোনো মাদক সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। ডিএমপির কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে। সারাদেশ পুলিশের ইউনিটগুলোর জন্যও একই নির্দেশনা। তাদেরও এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। কোনো কোনো ইউনিট এরই মধ্যে ব্যবস্থাও নিয়েছে।’’ তবে এ নিয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘পুলিশ সদস্য বলতে সব পুলিশ সদস্য ৷ এখানে কোনো র‌্যাংকের বিষয় নেই। সবাই এই নির্দেশের আওতায়।’’

কিন্তু পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কোন প্রক্রিয়ায় নজরদারি করা হচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। আর এখন পর্যন্ত এসআই-এর উপরে কাউকে শাস্তি পেতে বা চিহ্নিত হতে দেখা যায়নি। বিষয়টি পুলিশের সাবেক আইজি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ এমপির নজরেও এসেছে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের সব পর্যায়ের সদস্য এবং কর্মকর্তাদেরই এই ডোপ টেস্টের আওতায় আনা দরকার। মাদকাসক্ত যে কেউ হতে পারেন। শুধু কনস্টেবল বা ইন্সপেক্টর কেন, এসপিও মাদকাসক্ত হতে পারেন। তাই কাউকেই এর বাইরে রাখা যাবেনা। আর সব পর্যায়ে নজরদারি সম্ভব। পুলিশের আইজিও তো নজরদারির বাইরে নাই। তাকেও তো কোনো কোনো প্রক্রিয়ায় নজরদারী করা হয়।’’

সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তাই এই নজরদারি ও ডোপ চেস্ট পুলিশের সব পর্যায়ে করার জন্য সুপারিশ করেছে। শুধু তাই নয়, পুলিশের বাইরেও যারা সরকারি চাকরি করেন তাদেরও ডোপ টেস্টের আওতায় আনার সুপারিশ করেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘‘শুধু পুলিশ কেন যে কোনো সরকারি চাকরিজীবী মাদকাসক্ত হতে পারেন। চাকরিতে নিয়োগের সময় তো একবার পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু তারপর যে সে আর মাদকাসক্ত হবে না তা তো বলা যায় না।’’

তবে তিনি এই কাজে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা ও পেশাদারত্ব নিশ্চিতের দাবি করেছেন। কারণ তাঁর মতে, ‘‘পুশিলসহ সব সার্ভিসে সিনিয়র অফিসারেরা এক ধরনের সুবিধা বা সুযোগ পায়। সেটা যেন না হয়৷ আর তারা যে এলাকায় কাজ করেন সেখান থেকেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে রিপোর্ট নেয়া যেতে পারে।’’

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button