গাজীপুর নগরের অধিকাংশ সড়কবাতি জ্বলে না?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুর নগরের বেশির ভাগ রাস্তায় সড়কবাতি জ্বলে না। নগরবাসীকে চলাচল করতে হয় সড়কের পাশের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আলোতে।

গত বুধ থেকে শুক্রবার তিন দিন গাজীপুর নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ সড়কেই বাতি নেই। কিছু এলাকায় সড়কবাতি আছে, তবে অপর্যাপ্ত। আবার কিছু সড়কে অনেক দূর পরপর দু-একটি খুঁটিতে বাতি জ্বলে, তারপর আবার অন্ধকার। এর মধ্যেও কিছু সড়কবাতির ঢাকনা নেই, কোনোটির খুঁটি বাঁকা, আবার কোনো খুঁটিতে বাতি নেই। মূল শহর, বাণিজ্যিক এলাকা ও আবাসিক এলাকাতেও খুব একটা বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি।

০৫ মার্চ প্রথম আলো- পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অধিকাংশ সড়কবাতি জ্বলে না’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ সকল তথ্য উঠে এসেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টঙ্গী বিসিক এলাকায় প্রায় দেড় শ প্রতিষ্ঠান আছে। কারখানার শ্রমিক আর পথচারীদের চলাচলে রাতদিন সরগরম থাকে এলাকাটি। সেখানকার অধিকাংশ সড়কেই বাতি জ্বলে না। চলাচল করতে হয় মুঠোফোনের আলো জ্বালিয়ে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গী লেভেল ক্রসিং থেকে বিসিক এলাকায় ঢুকতেই অন্ধকার। কয়েক মিটার সামনে লিলি ফুডের মোড় থেকে পাগাড়, ফকির মার্কেট ও নদীবন্দর যেতে প্রতিটি সড়কই অন্ধকারাচ্ছন্ন। সড়কের দুই পাশের কারখানার ফিকে আলোতেই পথ চলতে হয়।

শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সড়কের লিলি ফুডের মোড় ও পানির ট্যাংক মোড়ে রাখা হয়েছে নিরাপত্তাকর্মী। জানতে চাইলে লিলি ফুডের মোড়ে দায়িত্বরত মো. দিলবার বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে সারাক্ষণ হাতে টর্চ রাখতে হয়। অন্ধকারে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে, তার ঠিক নেই। সড়কবাতি থাকলে এ সমস্যা হতো না। আর পানির ট্যাংক মোড়ের নিরাপত্তাকর্মী মো. সুলতান বলেন, ‘ইজতেমার সময় কয়েক জায়গায় বাতি লাগাইছিল। এখন সেগুলোও নষ্ট হইয়া গেছে।’

টঙ্গী বাজার ব্যস্ত এলাকায় প্রতিদিন হাজারো মানুষের সমাগম হয়। দেখা যায়, টঙ্গীর আনারকলি রোডের বাটা মার্কেটের সামনে থেকে টঙ্গী বাজার মসজিদ পর্যন্ত সড়কের ডান পাশে সড়কবাতির ১৮টি খুঁটি আছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি খুঁটিতে বাতি জ্বলে। বাকিগুলোর কোনোটিতে বাতি নেই, কোথাও বাতি জ্বলে না, আবার কোনোটি থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলে ফেলা হয়েছে। কথা হয় এই সড়কের ডিমপিঠা বিক্রেতা মো. জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেলে পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। কিছু কিছু দোকানদার নিরাপত্তার জন্য দোকানের সামনে বাতি জ্বালিয়ে রেখে যান।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. ইবরাহিম খলিল জানান, কিছু সড়কে বাতি লাগানোর কাজ চলছে। এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়নি। আর বিভিন্ন সড়কে সৌরবাতির ব্যাটারি চুরি হয়ে যাওয়ায় তা অকেজো হয়ে গেছে। তিনি আরও জানান, পর্যাপ্ত গাড়ি, প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।

গাজীপুর মূল শহরের অবস্থাও অনেকটা একই রকম। শুক্রবার রাতে গিয়ে দেখা যায়, জয়দেবপুর শিববাড়ি মোড় থেকে পুলিশ সুপার কার্যালয় পর্যন্ত সড়ক বিভাজকের ওপর মোট ৩২টি বাতি। এর মধ্যে জয়দেবপুর লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত ১৫টি বাতিই জ্বলে না। এরপর পুলিশ সুপারের কার্যালয় পর্যন্ত নষ্ট হয়ে আছে ছয়টি বাতি। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সড়কবাতি জ্বলতে দেখা যায়নি।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত কোনো সড়কবাতি নেই। এ ছাড়া জাঝর বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার সড়ক, কাজিবাড়ি সড়ক, হকের মোড় সড়ক, জয়দেবপুর-পুবাইল সড়ক, জয়দেবপুর-চৌরাস্তা সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে খুব একটা সড়কবাতি জ্বলতে দেখা যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সড়কবাতির জন্য আমাদের প্রায় দেড় লাখ বৈদ্যুতিক খুঁটি দরকার। সেখানে আমাদের আছে মাত্র আড়াই হাজার। তারপরও আমরা মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সমস্যা সমাধান করা হবে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button