বাকশাল বিতর্ক: স্বৈরাচার নাকি বৈপ্লবিক পরিবর্তন?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৪শে জানুয়ারি।

তখন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পর বাকশালকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে ঘোষণা করে তা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সমালোচকদের মতে, কয়েকটি কারণে বাকশাল এত বিতর্কিত ছিল:

১. এক দলীয় শাসনব্যবস্থা, বিরোধিতার কোন অবকাশ নেই।

২. গণমাধ্যম সম্পূর্ণ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে।

৩. রাষ্ট্র, সরকার এবং দল একত্রিত।

৪. সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বিচারক, আমলা দলের সদস্য।

আওয়ামী লীগ কী বলছে?

আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলছেন বাকশাল কোনো একদল বা একনায়কতন্ত্র ছিলোনা।

তিনি বলেন, “সকল দলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটা প্লাটফরম করেছিলেন। সেটা হচ্ছে বাকশাল।,” তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন।

আরো বলেন ”একটা সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ওপর ভিত্তি করে এটা করা হয়েছিল। জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকলে যে উন্নয়ন এগিয়ে যেতে পারে, সেই ধারণা নিয়ে এই কনসেপ্ট তৈরি করা হয়েছিল।কিন্তু তা নিয়ে এমনভাবে একটা প্রচারণা ছিল যে বাকশাল মনে হয় একটা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। এমন প্রচারণা চালানো হয়েছিল,”।

সমালোচকরা কী বলছেন?
লেখক গবেষক বদরুদ্দিন উমর বলছেন বাকশাল ছিলো একেবারেই একনায়কতন্ত্রের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

“সেনা পুলিশ বিচারক সব পার্টির মেম্বার-এটা তো আগে কখনো দেখা যায়নি। সবাইকে এক দল করতে হবে। কিংবা আর কোনো দল থাকবেনা। এটিও তো এদেশের মানুষ আগে দেখেনি”।

তিনি বলেন তখন সবাইকে বাধ্য করা হচ্ছিলো বাকশালে যোগ দিতে এবং অনেকেই বাধ্য হয়েছেন।

“ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্যই এ ধরণের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো”।

স্বৈরাচার নাকিবৈপ্লবিক পরিবর্তন?

কিন্তু ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলছেন বাকশাল নিয়ে সবসময় অপপ্রচারই হয়েছে।

“বাকশালকে বোঝানো হয়েছে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন কিন্তু এটা একদল নয় বরং তৎকালীন পরিস্থিতিতে অভিন্ন জাতীয় মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এটা সাময়িক ব্যবস্থা – কিন্তু পরে দীর্ঘকাল ধরে নেতিবাচক প্রচারণাই হয়েছে”।

তিনি বলেন তখন কাউকে বাকশালে যোগ দিতে চাপ দেয়া হয়নি বরং অনেকেই স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছে।

“আমলা সেনাবাহিনী সবাইকে এক মঞ্চে আসতে বলা হয়েছিলো, দলে নয়। কিন্তু এগুলো নিয়ে অপপ্রচার আর ভুল ব্যাখ্যার কারণে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে”।

তার মতে বাকশালই প্রথম বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার সুযোগ তৈরি করেছিলো কিন্তু বাকশাল ব্যবস্থা টিকে ছিলো মাত্র ২৩২ দিন।

সে বছর ১৫ই অগাস্ট একদল সেনা অফিসার শেখ মুজিব এবং তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করে।

 

সূত্র: বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button