গাজীপুরে মহাসড়কে চেকপোস্ট আছে, পুলিশ নেই: প্রথম আলো
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বেশ কিছু চেকপোস্ট থাকলেও পুলিশ নেই। এ সুযোগে সড়ক–মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন ছোট পরিবহন। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। বিশেষ করে চেকপোস্টগুলোয় তেমন কড়াকড়ি না থাকায় সবাই প্রায় অবাধে রাস্তায় চলাচল করছে।
চান্দনা চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর, শিববাড়ি, গাজীপুর শহর এলাকার একাধিক চেকপোস্ট ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ চেকপোস্টেই কোনো পুলিশ নেই। কোথাও কোথাও পুলিশ থাকলেও তোমন তৎপরতা নেই।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশ বক্সের সামনেই চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু আজ সকাল ১০টার দিকে সেখানে কোনো পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বক্সে বেশ কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশকে বসে গল্পগুজব করতে দেখা গেছে। একই অবস্থা দেখা গেছে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকার চেকপোস্টে ও বিমানবাহিনীর ঘাঁটির সামনে থাকা জেলা পুলিশের চেকপোস্টে।
ঈদের পর থেকে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের শুরুর দিকে গাজীপুর জেলা শহরের শিববাড়ি মোড়ে চেকপোস্ট দেখা গেলেও আজ সেখানে কোনো চেকপোস্ট দেখা যায়নি। এ কারণে গাজীপুর শহর এলাকায় মানুষ অবাধে চলাফেরা করছে। তবে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের টহলের ভয়ে বেশির ভাগ দোকানপাটসহ সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
বেলা ১১টার দিকে জয়দেবপুর সবজি বাজারেও মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। কাঁচাবাজার এলাকায় বাজার করতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের আগে বাজার করেছি। বাসায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারসদাই প্রায় সব শেষ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই আজ বাজার করতে বের হয়েছি।’

জয়দেবপুর বাজার এলাকার মুঠোফোন ব্যবসায়ী খোকন মিয়া জানান, সকালে কৌশলে দোকানের একটি শাটার উঠিয়ে দোকানের সামনে বসে ছিলেন। কিন্তু এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করলে তিনি পরে দোকান বন্ধ করে দেন।
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সড়কে কোনো গণপরিবহন চলছে না। এখন যারা চলাচল করছে, তাদের আমরা ইচ্ছা করলেও থামাতে পারব না। হাজার হাজার মানুষ তাদের ইচ্ছেমতো চলাচল করছে। এত মানুষকে কি থামানো যায়? তাই আমরা এখন বসে বসে দেখছি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তুরাগ পাম্পের সামনে পুলিশের একটি চেকপোস্ট রয়েছে। ‘চেকপোস্ট’ লেখাসংবলিত একাধিক সাইনবোর্ড থাকলেও সেখানে নির্ধারিত দায়িত্বে কোনো পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে দেখা যায়, মাঝেমধ্যে দু-একজন পুলিশ এলেও বেশির ভাগ সময়ই চেকপোস্টে কোনো পুলিশ দেখা যায়নি। এদিকে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের সামনেও আর আগের মতো তৎপরতা নেই বললেই চলে।
কোনাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর গোলাম ফারুক আগের চেয়ে তৎপরতা কম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, মহাসড়কে মানুষের চলাচল অনেক বেড়েছে। ১০০টি গাড়ি থামালে এর মধ্যে প্রায় ৮০টি গাড়িতেই রোগী দেখা যায়। আবার অনেক গাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ রোগী রয়েছে। এদিকে রিকশার চলাচল কমাতে বুধবার রিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহনের বিরুদ্ধে ৭৯টি মামলা করা হয়েছে এবং ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শক তারিকুল আলম বলেন, ‘চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার চেকপোস্ট খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, তাই সব সময় পুলিশ সেখানে থাকে না। রাজেন্দ্রপুর এলাকায় আমাদের কার্যকর চেকপোস্ট রয়েছে। তবে অনেক সময় চাপ বেশি থাকলে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় চেকপোস্ট বসানো হয়।’
তবে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানাতে ও বিধিনিষেধ কার্যকর করতে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের ২৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সারা দিন বিভিন্ন এলাকায় ১৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ১৩৫টি মামলা করেছেন। এ সময় ১২৯ জনকে অর্থদণ্ড দিয়ে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭২০ টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। এ ছাড়া অভিযানের সময় বিভিন্ন অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ৬ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো