নিয়মনীতির কথা বলা ‘গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি’ কোথায়?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশে এখন করোনা মহামারির ঊর্ধ্বগতি চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদফতর, জনস্বাস্থ্যবিদেরা বার বার ভিড়-জনসমাগম এড়িয়ে চলার কথা বলেছেন। এ ছাড়া মাস্ক পরা, একজন থেকে আরেকজনের দূরত্ব তিন ফুটের বেশিসহ নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার কথাও বলে এসেছেন। করোনা প্রতিরোধে এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হচ্ছে সেই গত বছরে দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই।

অথচ দেশের গণমাধ্যমকর্মীরা যারা অন্যদের সচেতন করতে ভূমিকা রাখেন, নিয়মনীতির কথা বলেন; যারা অন্যদের ভিড়ে যাবার কথা প্রচার-প্রকাশ করেন, তারাই বার বার এ স্বাস্থ্যবিধিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন।

বিভিন্ন অনুষ্ঠান কাভার করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা দেখা গেছে এর আগেও। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

রোববার (১ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত বিসিপিএস মিলনায়তনে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ক্লাস উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। মন্ত্রীর অনুষ্ঠান শেষেও করোনা যুগের আগের সেই পুরনো চিত্র ফিরে আসে। যেখানে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ধরেন একাধিক গণমাধ্যমকর্মী, আর স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পাশে ছিলেন মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

বিসিপিএস মিলনায়তনে চলছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানস্থলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সবাইকে দেখা যায়। মন্ত্রী তার বক্তব্য শেষে ডায়াস থেকে নেমে যাবার আগে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলেন। কিন্তু নেমে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে যেতে থাকে সে স্বাস্থ্যবিধি। মিলনায়তনের সামনে একপাশে খাবার দেওয়া হয়। যেখানে হুড়মুড় করে গণমাধ্যমকর্মীসহ উপস্থিত মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা ভিড় করেন। যেখানে সেই তিন ফুট দূরত্ব মানতে কাউকে দেখা যায়নি।

তবে বিস্ময়করভাবে বাজে উদাহরণ তৈরি হয় মন্ত্রীকে ঘিরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন করা। একাধিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও ফটো সাংবাদিকরা সেখানে যেভাবে দাঁড়িয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ঘিরে ধরেন, সেটা বিস্ময়ের উদ্রেক তৈরি করে।

গণমাধ্যমকর্মীদের কেন এই উদাসীনতা- এমন প্রশ্নে জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিকরা বলছেন, জরুরি পরিস্থিতিতে কী করতে হবে সে বিষয়ে সাংবাদিকদের শিক্ষা নেই। এ ছাড়া সেই নৈতিক অবস্থানও নেই। নেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। তবে সেই সঙ্গে যারা এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এখানে তাদেরও দায়িত্ব অনেক বেশি।

জরুরি পরিস্থিতিতে স্পট নিউজ কীভাবে কাভার করতে হবে সেটা অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে মন্তব্য করে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একইসঙ্গে যারা আয়োজন করে তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে।

তিনি বলেন, প্রেস হ্যান্ডেল করার কিছু নিয়ম আছে। ফটো জার্নালিস্টদের ছবি তোলার আলাদা ব্যবস্থা রাখতে হবে, ব্রিফিংয়ের জায়গা সুনির্দিষ্ট থাকতে হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্য তারাই রেকর্ড রাখার ব্যবস্থা করবেন।

সেসব যখন হচ্ছে না, তখন সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে মন্তব্য করে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, করোনার শুরু থেকে আমরা ‘কোলাবোরেটিভ জার্নালিজমের’ কথা বলে আসছি। ইভেন্ট ভিত্তিক নিউজ সবাই একযোগে কাভার না করে ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সেটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কোথায় কতটুকু কীভাবে কাভার করা যাবে সে বিষয়ে যার যার অফিসে যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার।

যে কোনও অনুষ্ঠানে গেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মন্তব্য করে ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু বলেন, বহুবার বলার পরও উদ্যোগ নেওয়া হয় না। মঞ্চে কে বক্তৃতা করছেন, সেটা দেখা যাবে না। এটার জন্য যে শিক্ষা দরকার সেটা নেই। কাজটা দিয়ে দিই কিন্তু সেটা কীভাবে আদায় করতে হবে শেখায় না।

এটা আমাদের নিউজ ম্যানেজারদের সমস্যা জানিয়ে তিনি বলেন, যেটা উন্মুক্ত জায়গা নয়, এমন জায়গায় ইভেন্টের ক্ষেত্রে আয়োজকরা নির্ধারিত জায়গা রাখে না। ফলে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কে আগে নেবে, কে নিকট থেকে ভাল শট নেবে; সেই চেষ্টায় থাকে। আর সিনিয়র যারা আছেন তারাও শেখান না যে, ইভেন্ট কাভার করতে গিয়ে কীরকম আচরণ করতে হবে।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button