রাজনৈতিক দলগুলোর টাকা আসে কোথা থেকে?

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো এখন পুরোদমে প্রচারণায় ব্যস্ত।

প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার নানা উপকরণ এখন হরহামেশাই চোখে পড়ে। প্রতিটি আয়োজনেই টাকা খরচ করতে হয়।

নির্বাচন মানেই খরচ , আর সে বিষয়টি মাথায় রেখেই নির্বাচন কমিশন প্রতিটি প্রার্থীর জন্য খরচ পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছেন, তাদের দলের প্রার্থীরা সাধারণত নিজের অর্থ ব্যয় করে নির্বাচনে লড়ছেন।

রিজভী বলেন, ” যে লিগ্যাল চ্যানেলগুলো থেকে আমরা টাকা সংগ্রহ করি, দলের ফান্ড তৈরি হয়, তার একটি হলো দলের নেতা-কর্মীদের চাঁদা। আরেকটি হচ্ছে নির্বাচনী মনোনয়ন ফর্ম বিক্রি। এছাড়া কেউ যদি ডোনেট করে।”

২০১৭ সালের দলের আয়-ব্যয়ের যে হিসেব বিএনপি নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে সেখানে তারা উল্লেখ করেছে তাদের মোট আয় প্রায় সাড়ে নয় কোটি টাকা এবং মোট ব্যয় চার কোটি টাকার কিছু বেশি।

অর্থাৎ প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মতো তাদের ব্যাংকে জমা রয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগ যে হিসেব দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, দলটির মোট ২০ কোটি টাকার বেশি এবং ব্যয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা।

ফলে ব্যাংকে টাকা জমা রয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। বিএনপির মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাও নিজস্ব টাকায় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন।

দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ দাবি করেন, তাদের দলের পক্ষ থেকে আর্থিকভাবে দুর্বল দলীয় প্রার্থীদের সহায়তা করা হয়।

হাছান মাহমুদ বলেন, দলীয় কর্মীদের দেয়া চাঁদা এবং অনুদানের উপর ভিত্তি করে দলের ফান্ড পরিচালিত হয়।

নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থীর ব্যয় সীমা ২৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে সে খরচ আরো অনেক বেশি।

এমন কথা বলছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। খরচ যাই হোক না কেন, প্রতিটি প্রার্থী যখন নির্বাচন কমিশনে তাদের খরচের হিসেব জমা দেয় তখন তারা সেটিকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যেই দেখায়।

এনিয়ে নির্বাচন কমিশনও কখনো পাল্টা প্রশ্ন করে না। কারণ, কমিশনের কর্মকর্তা বলছেন, একজন প্রার্থী আসলে কত টাকা খরচ করেছেন সেটি তদন্ত করার সামর্থ্য তাদের নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে সাধারণত দুই ধরণের খরচ রয়েছে একটি প্রকাশ্য এবং অপরটি গোপনে। মনোনয়ন প্রাপ্তির পর নির্বাচনী প্রচারণার জন্য প্রার্থীকে যেমন টাকা খরচ করতে হয়, তেমনি অভিযোগ রয়েছে অনেক প্রার্থী আছেন যারা মনোনয়ন পাবার জন্য বড় অংকের টাকাও খরচ করেন।

রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীদের আয়-ব্যয় নিয়ে বিশ্লেষণ করে বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজন।

প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকাশ্য আয় ব্যয়ের বাইরেও অনেক লেনদেন রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ” আমার মনে হয়না রাজনৈতিক দলের যে অর্থায়ন এ ব্যাপারে কোন রকম স্বচ্ছতা আছে। এটা অদৃশ্যভাবে ঘটে। এখানে টাকার খেলা বিভিন্নভাবে হয়। মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকার খেলা হয়, ভোট কেনার মাধ্যমে টাকার খেলা হয়। এবং আপনাকে একদল কর্মী পালতে হয়।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন বরাবরই একটি ব্যয়বহুল বিষয়। একথা স্বীকার করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

সেজন্য অনেক প্রার্থী মনে করেন, নির্বাচন কমিশন ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা যে ২৫ লাখ টাকায় নির্ধারণ করে দিয়েছে সেটি আরো বৃদ্ধি করা দরকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button