কালীগঞ্জে ইউএনও’র উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে ‘ঈশা খাঁ’র আধুনিক সমাধিস্থ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলার ইতিহাসের বারো ভুঁইয়া বা প্রতাপশালী বারোজন জমিদারদের অন্যতম ​বীর ‘ঈশা খাঁ’র অরক্ষিত সমাধিস্থল (কবর) যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঈশা খাঁ’র আধুনিক সমাধিস্থ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক।

বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকালে উপজেলার বক্তারপুরে ঈশা খাঁ’র সমাধিস্থলে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক।

জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে ‘ঈশা খাঁ’র সমাধিস্থলে সাড়ে ১৭ ফিট উচ্চতার এবং ২৪ ফিট প্রস্থের লাল সিরামিক ইট দিয়ে প্রাচীন নির্মাণ কৌশলসমৃদ্ধ একটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর সমাধিস্থ নির্মাণ করা হবে।

gazipurkontho
প্রাচীন নির্মাণ কৌশলসমৃদ্ধ আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এই আধলেই নির্মাণ হবে ‘ঈশা খাঁ’র সমাধিস্থ

স্থানীয়রা জানায়, ঈশা খাঁর কবরটি দীর্ঘদিন ‘একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি’র হিসেবে এলাকাবাসী জানত। ৩৫-৪০ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বক্তারপুর গ্রামে এসে কবরটি ঈশা খাঁর সমাধি বলে চিহ্নিত করে। লোকজন বেড়া দিয়ে কবরটি সংরক্ষণের চেষ্টা করে। বক্তারপুর দুর্গের অস্তিত্ব আর এখন নেই। মাটি খুঁড়লে প্রাচীন ইট বের হয়। দিঘিটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। ঈশা খাঁর কবরের স্থানটি একটু উঁচু ঢিবির মতো ছিল। পূর্বপুরুষরা বলে গেছে এটি পবিত্র স্থান। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ স্থানটি খনন করে। প্রাচীন ইট ও কবর আকৃতির সমাধি আবিষ্কৃত হয়। পরে তারা জানায় যে, এটি ঈশা খাঁর সমাধিস্থল।

বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুঃ আতিকুর রহমান আকন্দ বলেন, ৩০-৩৫ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বক্তারপুর পুরোন দিঘির পশ্চিমে পারে থাকা কবরটি ঈশা খাঁর সমাধি বলে চিহ্নিত করেন। পরে লোকজন বেড়া দিয়ে কবরটি সংরক্ষণের চেষ্টা করে। এরপর ২০০৪ সালে প্রথম উপজেলা প্রশাসন দেয়াল তুলে কবরটি ঘিরে দেয়। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কবরটির চারদিকে ইটের দেয়াল এবং ওপর লোহার বেড়া বেষ্টিত করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কয়েক মাস আগে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম ঈশা খাঁর সমাধিস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তিনি সমাধিস্থে যাওয়ার মাটির সড়কটি সংস্কার করার নির্দেশ দেন। সম্প্রতি প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাধিস্থে যাওয়ার সড়কটি ১০ ফুট প্রশস্ত করে সংস্কার করে গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সকালে ঈশা খাঁ’র কবরে সমাধিস্থ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শিবলী সাদিক বলেন, ”বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর অরক্ষিত সমাধিস্থল (কবর) যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম স্যারের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাধিস্থ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সমাধিস্থলে সাড়ে ১৭ ফিট উচ্চতার এবং ২৪ ফিট প্রস্থের প্রাচীন নির্মাণ কৌশলসমৃদ্ধ একটি আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর লাল সিরামিক ইটের সমাধিস্থ নির্মাণ করা হবে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ঈশা খাঁর বীরত্বের ইতিহাস এবং বাংলায় তাঁর অবদান তুলে ধরা হবে।”

জানা গেছে, ঈশা খাঁ ১৫৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলার বারোভূঁইয়াদের অন্যতম ছিলেন ঈশা খাঁ। ন্যায়পরায়ণ শাসক ও বীরত্বের প্রতীক হয়ে তিনি ঠাঁই নিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। মুসলিম এ শাসকের রাজধানী ছিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়। মোগল শাসকদের সঙ্গে তাঁর একাধিক যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রতিরোধের জন্য এগারসিন্ধু ও বক্তারপুরে দুর্গ স্থাপন করেছিলেন। জীবনের শেষদিকে সোনারগাঁয় ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি অবস্থান নেন বক্তারপুর দুর্গে। সেখানে একজন প্রখ্যাত হেকিমের চিকিৎসা গ্রহণকালে ৭০ বছর বয়সে ১৫৯৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মৃত্যু হয় তাঁর। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে সমাহিত করা হয় বক্তারপুর দুর্গের দিঘির পশ্চিম পাড়ে। কালের পরিক্রমায় অযত্ন-অবহেলায় একসময় হারিয়ে যায় সমাধিচিহ্ন। তাঁর বীরত্ব, শাসন, মহানুভবতা, ন্যায়পরায়ণতা ও ধর্মপরায়ণতা নিয়ে নানা জল্পনা ও কল্পকাহিনি থাকলেও ইতিহাসের কোথাও তাঁর সমাধিস্থলের কথা উল্লেখ নেই। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করে বক্তারপুরের ধ্বংস হয়ে যাওয়া দুর্গে একটি প্রাচীন সমাধির সন্ধান পায়। নানা তথ্য-উপাত্ত ও ইতিহাস বিশ্লেষণ শেষে প্রত্নতত্ত বিভাগ নিশ্চিত হয় যে সমাধিটি ঈশা খাঁর।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button