দেশের ১৩ জেলায় নদী ভাঙন ও বন্যায় অসহায় মানুষ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশের ১৩ জেলা এখন বন্যা কবলিত। বন্যার পানিতে মানুষের ঘরবাড়ি যেমন তলিয়ে গেছে, তেমনি নদী ভাঙনেও সর্বস্ব হারাচ্ছে মানুষ। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা আর তিস্তা নদীর ভাঙন তাদের সব কিছু কেড়ে নিচ্ছে।

বন্যা পূর্ভাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি বেশ খারাপ। 

দেশের আটটি নদীর পানি ১৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। দেশের উত্তর, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের ১৩ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত আছে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও গঙ্গা, পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে।

কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং শরীয়তপুর- এই ১১ জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। এর সাথে মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বলে জানান বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, ‘‘এবারের এই বন্যার কারণে উজানে প্রবল বৃষ্টিপাত৷ আসামে অনেক বৃষ্টি হয়েছে৷ সেই পানির ঢলে বাংলাদেশের উত্তর, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে।’’

তিনি জানান, আরো দুই-তিন দিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। তারপর উন্নতির আশা করা যায়। তিনি আরো জানান, যেসব জেলায় বন্যা হচ্ছে হচ্ছে সব জেলায়ই কম বেশি নদী ভাঙন হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ এর তীরবর্তী কুড়িগ্রামের উলিপুরের হাতিয়া এবং বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন, কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন এবং চিলমারীর নয়ারহাট ইউনিয়নসহ আরো অনেক এলকায় তীব্র নদী ভাঙন চলছে। কয়েকশ’ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

উলিপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘উলিপুরের মোল্লারহাট নদী গর্ভে চলে গেছে। সেখানে ৩৫০টির মতো দোকান ছিল। ৬ নাম্বার ওয়ার্ডে সাড়ে তিনশ’র মতো পরিবার ছিল। তাদের সবার বাড়িঘর নদীতে ভেঙে গেছে। ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের ১০০ বাড়ি নদী গর্ভে চলে গেছে।’’

তিনি জানান, ‘‘যাদের বাড়িঘর ভেঙে গেছে, তারা পাশের গ্রামগুলোর খোলা জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। কোনো সহায়তা তারা এখনো পাননি।’’

একই জেলার রাজাহাটে তিস্তার ভাঙনও তীব্র হয়েছে। ত্রাণ বরাদ্দ হলেও তা বিতরণ এখনো শুরু হয়নি। তালিকাও করা হয়নি।

যমুনার তীরেও তীব্র ভাঙন চলছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নেও ভাঙন চলছে। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ‘‘জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর , পাকড়তলা,ঘাটামারি, পুটিপাড়া ও ঘেটা গ্রামের ৭৫০টির মতো বাড়িঘর নদীতে ভেঙে গেছে। প্রায় আড়াই-তিন হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ আবার নাটোরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। দূরের বাঁধেও পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ।” তিনি বলেন, বন্যার চেয়ে নদী ভাঙন বেশি বিপদে ফেলেছে।

‘‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একবার মাত্র ৫০০ জনের জন্য পাঁচ মেট্রিক টন চাল দিয়ে গেছে। কিন্তু অনেক মানুষের সহায়তা দরকার,’’ বলেন তিনি।

প্রতিবছরই এখানে নদী ভাঙে। কিন্তু ভাঙন রোধের কোনো উদ্যোগ অতীতে নেয়া হয়নি। এ বছর একনেকে নদী শাসনের জন্য ৬৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘‘আমাদের এলাকায় কোনো এমপি-মন্ত্রী নাই, তাই আমাদের দেখার কেউ নাই।’’

দেশে প্রতিবছর পাঁচ-ছয় হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমপক্ষে এক লাখ মানুষ। ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী শরীফ জামিল বলেন, ‘‘ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর উজানে ভারতে বাঁধ দেয়ায় নদীর স্বাভাকিক গতিপ্রবাহ নষ্ট হয়ে গেছে। আর আমাদের দেশে এই নদীর বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে , যার পরিণতি এই নদী ভাঙন। কারণ, নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করায় নদী ভরাট হয়ে যায়। নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করে। বর্ষা মৌসুমে যখন পানি ছেড়ে দেয়া হয়, তখন নদীর ওই পানি নেয়ার সক্ষমতা থাকে না।’’

তিনি বলেন, ‘‘বগুড়ার শারিয়াকন্দিতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সাতবার নদীভাঙন হয়েছে।’’ তিনি জানান, নদী ভাঙনসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিবছর চার লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে ঢাকা শহরে আসেন।

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button