প্রেমের বিয়ের পরও অবৈধ সম্পর্ক, শ্বাসরোধে স্ত্রীকে হত্যা: স্বামী গ্রেফতার

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ২০০৭ সালে প্রেম করে বিয়ে করে পোশাক শ্রমিক রাজু আহম্মেদ (৩১) ও জরিফুল (৩৫)। তাদের ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে, সে গ্রামের বাড়ীতে থাকে। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে কালিয়াকৈরের মৌচাক মাজার রোড এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে পৃথক দুটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। স্ত্রী জরিফুল একই বাসার পাশের রুমের ভাড়াটিয়া রুবেলর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। স্বামী রাজু আহম্মেদ বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসের প্রথমে ওই বাসা ছেড়ে দেয়। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় সময় সাথে ঝগড়া-বিবাদ হতো। এছাড়াও স্বামী-স্ত্রীর মধ্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিক বিরোধ চলছিল। এতে অতিষ্ঠ হয়ে একপর্যায়ে স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী। বিশেষ কাজের কথা বলে স্ত্রী জরিফুলকে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের ভেতর নির্জন স্থানে নিয়ে যায় স্বামী রাজু আহম্মেদ। পরে ওড়না গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ব্লেড দিয়ে স্ত্রীর ডান হাতের কব্জি কেটে জঙ্গলে ফেলে রাখে স্বামী রাজু আহম্মেদ।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জড়িত রাজু আহম্মেদকে গ্রেফতারের পর এভাবেই হত্যাকাণ্ড বর্ণনা দেয় সে।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেফতার রাজু আহম্মেদ জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানার পাঁচ বাড়ীয়া এলাকার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে। সে কালিয়াকৈরের মৌচাক মাজার রোড এলাকার জামতলায় ভাড়া বাসায় থেকে সফিপুর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার লিবার্টি গার্মেন্টসে ডায়িং-এর কিউসি হিসাবে চাকরি করে। তার স্ত্রী নিহত জরিফুল মৌচাক নীটে চাকরি করতো।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পিবিআই জানায়, রাজু আহম্মেদকে কালিয়াকৈরের মৌচাক মাজার রোড এলাকার জামতলা থেকে সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৩টার দিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল সোয়া ৭টার দিকে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের অনুমানিক ৩০০ গজ ভিতরে অজ্ঞাত এক মহিলার লাশ উদ্ধার করেছিল জিএমপি’র সদর থানা পুলিশ। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অজ্ঞাত লাশের পরিচয় শনাক্ত করে পিবিআই গাজীপুর। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর নিহত জরিফুলের ভাই সুজা মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন {মামলা নাম্বার ৩৮(৯)২১}। পরবর্তীতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্ব-প্রনোদিত হয়ে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব নেয় পিবিআই গাজীপুর।

পিবিআই আরো জানায়, ”গ্রেফতার রাজু আহম্মেদকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে সফিপুর পল্লী বিদ্যুৎ এলাকায় লিবার্টি গার্মেন্টসে ডায়িং এর কিউসি হিসাবে চাকরি করে এবং তার স্ত্রীর জরিফুল মৌচাক নীটে চাকরি করে। ২০০৭ সালে তারা প্রেম করে বিয়ে করে। তাদের ৮ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে সে গ্রামের বাড়ীতে থাকে। তার স্ত্রী একই বাসার পাশের রুমের ভাড়াটিয়া রুবেল এর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসের প্রথম দিন ওই বাসা ছেড়ে দেয় রাজু। এ নিয়ে তার স্ত্রী প্রায় সময় তার সাথে ঝগড়া বিবাদ করত। জরিফুল তার বেতনের টাকা তার ছোট ভাই সুজার মোবাইলের বিকাশ একাউন্টে পাঠাত। স্ত্রী সংসার চালাতে বা মেয়ের ভরণপোষণের জন্য কোন টাকা দিত না। সমস্ত টাকা তার মা-বাবার জন্য পাঠিয়ে দিত। টাকা নিয়ে কথা বলতে গেলে খারাপ ভাষায় তাকে গালাগালি করতো এবং প্রায় সময় খারাপ ব্যবহারসহ অযথা গালাগালি করতো। ঠিকমত খাবার দিত না। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে নাইট ডিউটিতে থাকাবস্থায় রাজু আহম্মেদ তার স্ত্রীর সাথে বেতনের টাকা নিয়ে কথা বললে রাজুর বাবা-মার নাম নিয়ে অনেক গালাগালি করে জরিফুল। তখন রাজু তার স্ত্রীর ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় যে, পরদিন স্ত্রী জরিফুলকে হত্যা করবে এবং মনে মনে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। ঘটনার দিন তার স্ত্রী অফিস থেকে লাঞ্চের সময় বের হলে রাজু তাকে ফোন দিয়ে স্ত্রীর ফ্যাক্টরীর কাছে প্রধান সড়কের মোড়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। স্ত্রী জরিফুল আসলে বিশেষ কাজ আছে এ কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে তাকওয়া বাসে উঠে জয়দেবপুর চৌরাস্তায় এসে বাস থেকে নেমে একটি অটো রিকসা নিয়ে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের দিকে যায়। মাস্টার বাড়ী পেরিয়ে নির্জন স্থান দেখে রাজু জরিফুলকে নিয়ে নেমে যায়। পরে সড়কের পূর্ব দিকে গজারী বনের ভিতরের রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে দু’জন। নির্জন স্থান দেখে রাজু দাঁড়িয়ে পরলে স্ত্রী জরিফুল বলে কেন দাঁড়াইছো? তখন রাজু জরিফুলকে বলে আজ তোকে মেরে ফেলবে। জরিফুল চিৎকার দিতে চাইলে রাজু এক হাত দিয়ে তার ঘাড়ে চেপে ধরে ও অন্য হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। জরিফুল পড়ে গিয়ে গাছের সাথে মাথায় ধাক্কা লেগে আঘাত পায়। সে সময় রাজু ওড়না দিয়ে জরিফুলকে গলায় পেঁচিয়ে ধরে। এক-দুই মিনিট পর জরিফুল মারা যায়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য রাজুর পকেটে থাকা ব্লেড দিয়ে স্ত্রী জরিফুলর ডান হাতের কব্জি কেটে জঙ্গল থেকে বের হয়ে যায়।”

পিবিআই’র গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, পারিবারিক বিরোধের কারনে স্বামী তার স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে ব্লেড দিয়ে স্ত্রীর ডান হাতের কব্জি কেটে জঙ্গলে ফেলে রাখে। সোমবার আসামী রাজু আহম্মেদকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হলে সে সেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button