ভবানীপুরে বিপুল ভোটে জয়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভবানীপুরে ৫৮ হাজার ৮৩২ ভোটে জিতলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকি দুই কেন্দ্রেও জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস।

প্রত্যাশামতোই ভবানীপুরের উপনির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিপুল জয় পেলেন। তিনি ৫৮ হাজার ৫৮২ ভোটে জিতেছেন। এর আগে দুই বার ভবানীপুরে দাঁড়িয়েছিলেন এবং জিতেছিলেন মমতা। একবার জিতেছিলেন ৫৪ হাজার ভোটে ও অন্যবার ২৬ হাজারের মতো ভোটে। এবার তার থেকেও বেশি ব্যবধানে জিতেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হারের পর এই রেকর্ড ব্যবধানে জয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুশি।

জয়ের পর তিনি বলেছেন, ভবানীপুরে এক লাখ ১৫ হাজারে্র মতো ভোট পড়েছিল। এই কেন্দ্রে ৪৬ শতাংশ অবাঙালি। মমতার দাবি, ”আমি প্রতিটি ওয়ার্ডে জিতেছি। ভবানীপুরের মানুষ আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তের উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। আমার মন ভরে গেছে। একটা নির্বাচনে জিততে পারিনি দেখে বাংলার মানুষ ধাক্কা খেয়েছিলেন। সব চক্রান্তকে ভবানীপুরের মানুষ ব্যর্থ করেছেন। আমি তাদের মনে রাখব।”

রাজ্যের বাকি দুই কেন্দ্র মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ও সামসেরগঞ্জেও জয়ী তৃণমূল। জঙ্গিপুরে ৯২ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে, আর সামসেরগঞ্জে ২৬ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল জয়ী হয়েছে।

নেত্রীর জয়ের পর তৃণমূল কর্মীদের উচ্ছ্বাস।

প্রথম থেকেই এগিয়ে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম রাউন্ড থেকেই এগিয়ে ছিলেন। যত গণনা এগিয়েছে, ততই ব্যবধান বাড়িয়ে নিয়েছেন তিনি।

২১ রাউন্ডের শেষে মমতা এগিয়ে যান ৫৮ হাজার ৩৮৯ ভোটে এগিয়ে যান। তার সঙ্গে ৪৪৩টি পোস্টাল ব্যালট যুক্ত হয়।

ভবানীপুর বরাবরই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি। আগে দুইবার মমতা এখান থেকে জিতেছেন। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নন্দীগ্রামে লড়েছিলেন এবং শুভেন্দু অধিকারীর কাছে হেরে যান। ভবানীপুরে জিতেছিলেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি মমতার জন্য ইস্তফা দেন। উপনির্বাচন হয়। সেই উপনির্বাচনের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গত বিধানসভা নির্বাচনে শোভনদেব যে ব্যবধানে জিতেছিলেন, তার দ্বিগুণের বেশি ভোটে জিতছেন মমতা।

জেতার পরই বাকি চারটি উপনির্বাচনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দেন মমতা। খড়দহে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করা হয়েছে। দিনহাটায় উদয়ন গুহ ও নবদ্বীপে ব্রজকিশোর গোস্বামীকে প্রার্থী করা হয়েছে।

ভবানীপুরে বিজেপি অফিস একেবারে চুপচাপ।

বিজেপি-র অবস্থা

বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিল যুব নেত্রী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালকে। প্রিয়ঙ্কা প্রচারে কোনো ফাঁকি দেননি। বিজেপি নেতারাও নন। প্রচারের শেষদিনে তো বিজেপি-র ৮০ জন নেতা প্রচার করেছেন। তারা ভবানীপুরের অলি গলিতে গিয়েছেন। কিন্তু ভোটের ফলাফল দেখাচ্ছে, প্রিয়ঙ্কা কোনো চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে দিতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রীকে।

হারের পর প্রিয়ঙ্কা বলেছেন, যদি সত্যিকারের ভোট হতো, ভোট দিতে বাধা না দেয়া হতো, ছাপ্পা ভোট না দেয়া হতো, তাহলে তিনি জিততেন। তিনি স্বীকার করেছেন, ওখানে বিজেপি-র সংগঠন দুর্বল।

সিপিএমের হাল

সিপিএম প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস ১৬ রাউন্ড পর্যন্ত দুই হাজার ৯২১টি ভোট পেয়েছিলেন। বোঝা যাচ্ছে, সিপিএম এখনো অন্তত ভবানীপুরের মানুষের বিশ্বাস অর্জনে ব্যর্থ। শ্রীজীবের জামানত জব্দ হয়েছে।

শ্রীজীব বলেছেন, মমতা মুখ্যমন্ত্রী। তাকে মানুষ ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন। বিরোধী দলের সমর্থকরা ভোট দিতে খুব একটা বেরোননি।

বাকি দুই কেন্দ্রে

সামসেরগঞ্জে তৃণমূল প্রার্থী আমিরুল ইসলাম ২৬ হাজারেরও বেশি ভোটে কংগ্রেসের জইদুর রহমানকে হারিয়েছেন। এখানে কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী দলকে জেতাবার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। দেখা যাচ্ছে, তার প্রয়াসে সফল হয়নি। তবে কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে।

জঙ্গিপুরে তৃণমূল প্রার্থী ৯২ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন।

অধীরের দাবি

কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, মমতা যে জিতবেন, তা জানাই ছিল। কিন্তু ওখানে ভোট পড়েছে ৫৩ শতাংশ। সেটা দেখে বোঝা যাচ্ছে, ভবানীপুরের ভোটদাতাদের মধ্যে মমতাকে নিয়ে কোনো উচ্ছ্বাস ছিল না।

তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য

তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হকিম বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বিপুল ভোটে জিতিয়েছেন ভবানীপুরের মানুষ। এবার দিল্লি জয় করতে হবে। নরেন্দ্র মোদীকে হারিয়ে দিল্লি জয় করবেন দিদি।

দলের বিধায়ক ও সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র বলেছেন, ”পশ্চিমবঙ্গ জয় শেষ। এবার দিল্লি চলো। দিল্লির পথে যাচ্ছে কে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবার কে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button