যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ বনাম দেশের স্বার্থ!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বাংলাদেশে তুমুল বিতর্ক চলছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সংসদে দাবি করেছেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করেছে।

এর জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘আমরা যা করছি দেশের স্বার্থে করছি।’’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, লবিস্ট নিয়োগ বেআইনি নয়, যুক্তরাষ্ট্রে এটা বৈধ৷ কিন্তু তার কথা, বিএনপি কোনো দলের বিরুদ্ধে এটা করতে পারে। কিন্তু তারা দেশের ক্ষতির জন্য করছে। এজন্য তিনি তাদের ধিক্কার জানান। তিনি সংসদে বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের আটটি উদাহরণ দেন। এজন্য অর্থের পরিমাণও জানান। ফার্মের নামও উল্লেখ করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আমরা যা কিছু করি দেশকে রক্ষার জন্য করি, দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দেশকে করার জন্য করি।’’

এই লবিস্ট বিতর্কে সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মনে করেন, ‘‘এটা নিয়ে অযথাই বিতর্ক হচ্ছে। সারা দুনিয়ায়ই লবিস্ট নিয়োগের চল আছে৷ অ্যামেরিকায় তো আইনই আছে।’’

তিনি জানান, ‘‘ব্যবসা-বাণিজ্য, কূটনৈতিক সম্পর্ক, রাজনীতি সখানেই লবিস্ট নিয়োগের প্রবণতা আছে। এটা রাষ্ট্র যেমন করে তেমনি রাজনৈতিক দল, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি সবাই করে তার স্বার্থের জন্য৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন করা হয় অন্যান্য দেশেও করা হয়।’’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, বাংলাদেশে সরাসরি লবিস্ট বা লবিস্ট ফার্ম নেই। তবে কনসালটেন্ট আছেন। ফার্মও আছে। লবিস্ট নামে নেই। কিন্তু তাদের কাজের ধরন একই রকম। যুক্তরাষ্ট্রে আইনগতভাবেই লবিস্ট ফার্ম আছে। সেই ফার্মের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য কাজ করাতে পারেন। বাংলাদেশ থেকে যদি এই কাজের জন্য টাকা পাঠানো হয় তাহলে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করার আইনগত সুযোগ আছে। আর সেই দেশে যদি পেমেন্ট হয় তাহলে সেই অর্থ নিয়ে বাংলাদেশের আইনে প্রশ্ন করার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশে এখন যে প্রশ্নটি উঠেছে তা হলে দেশের স্বার্থে এবং স্বার্থের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা। পরারাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন সরকারও লবিস্ট নিয়োগ করে। তবে তা দেশের স্বার্থে।

এর জবাবে মনজিল মোরশেদ বলেন, দেশের স্বার্থ এবং দেশের স্বার্থ বিরোধী কথা দুইটি আপেক্ষিক। সরকার যেটাকে দেশের স্বার্থবিরোধী মনে করে, বিএনপি সেটাকে হয়তো দেশের পক্ষে মনে করে। তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যদি লবিস্ট নিয়োগ করে তারা কী উদ্দেশ্যে করবে? তারা বলবে দেশে গণতন্ত্র নাই। মানবাধিকার নাই। বাকস্বাধীনতা নাই। সরকার নিয়োগ করলে বলবে দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা আছে। দেশের স্বার্থ বা দেশের স্বার্থবিরোধী এটা পলিটিক্যাল কথা। এটা আইনগতভাবে প্রমাণের কোনো বিষয় নেই।’’

তবে বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ সরকার ছাড়া আর কারুর লবিস্ট নিয়োগের কোনো বিধান নেই বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের আইন ও প্রক্রিয়া আছে। বাংলাদেশের সরকার দেশের স্বার্থেই লবিস্ট নিয়োগ করবে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। সরকার লবিস্ট নিয়োগের কথা স্বীকারও করছে। তাহলে স্বচ্ছতার জন্য সরকারের স্পষ্ট করা উচিত কোথায় কোন খাত থেকে কত টাকা কোন কাজে লবিস্ট ফার্মকে দেয়া হচ্ছে। বাজেটেও সেটা উল্লেখ থাকবে।’’

আর বিএনপিকে নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেটাও সরকারের প্রকাশ করা উচিত স্বচ্ছতার জন্য। তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি যদি লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে সেটা দলীয় স্বার্থে করেছে। সরকার যেহেতু বলছে তাই তাদের এখন তথ্য প্রমাণ দেখানো উচিত। তারা কী উদ্দেশ্যে করেছে কীভাবে করেছে। আর বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকার বৈধ প্রক্রিয়ায় লবিস্ট-এর জন্য খরচ করতে পারে। কিন্তু বিএনপির সেই সুযোগ নাই। তাই বিএনপি যদি করে থাকে তাহলে তাদের উচিত হবে তারা কী প্রক্রিয়ায় কত টাকা খরচ করেছে তা প্রকাশ করা। এটা যদি অবৈধ প্রক্রিয়ায় হয় তাহলে কিন্তু মানি লন্ডারিং-এর ঝুঁকি আছে।’’

দল হিসেবে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করতে পারবে কী না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার স্বচ্ছ ধারণা নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রে করে থাকলে সেটা সেখানকার আইনে অবৈধ কিছু না। সেটাকে অবৈধ বলা কঠিন হবে। আমাদের দেশের আইনে কিছু বলা নাই। শুধু বলা আছে রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশে কোনো শাখা থাকতে পারবে না। বিএনপি কিন্তু বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া বিদেশে টাকা পাঠাতে পারে না। কাজেই এখান থেকে টাকা গিয়ে থাকলে তা অবৈধভাবে গেছে। বিএনপির সেটা স্পষ্ট করা উচিত। সরকারেরও উচিত তার প্রকাশ করতে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করা।’’

তিনি আরো বলেন, কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইনে সেখানে লবিস্ট নিয়োগ করা যায়না।

প্রসঙ্গত, র‌্যাব- পুলিশের সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর ডিসেম্বরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর এখন এই লবিস্ট বিতর্ক সামনে এসেছে।

 

সূত্র: ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button