ভারতে নিয়মিত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে আবারও নিষেধাজ্ঞা
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : ভারত তাদের দেশে নিয়মিত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল আবারও অনির্দিষ্টকালের কালের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এই মুহূর্তে যে অসম্ভব চড়া বিমানভাড়া, শিগগিরই তা কমার সম্ভাবনাও কার্যত শেষ হয়ে গেল।
ভারতে বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ডিজিসিএ সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোভিড পরিস্থিতির কারণে ভারতে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা ‘পরবর্তী নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত’ বন্ধ রাখা হবে।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি আর একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে – কিন্তু একেবারে শেষদিনে এসে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও একবার বাড়ানো হল। এবং তা কতদিনের জন্য, সেটাও জানানো হলো না।
যদিও ডিজিসিএ জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ যে ৪৫টি দেশের সঙ্গে ‘এয়ার বাবল’ সিস্টেমের আওতায় ভারতের বিমান যোগাযোগ চালু আছে সেগুলো যথারীতি বহাল থাকবে।
কিন্তু মধ্যবিত্ত যাত্রীদের এর ফলে কোনও সুরাহা হচ্ছে না – নিয়মিত কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালু না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা-কলকাতা, ঢাকা-চেন্নাই বা ঢাকা-দিল্লি রুটে যাত্রীভাড়া চট করে নাগালের মধ্যে আসবে না বলেও এই খাতের বিশেষজ্ঞরা একমত।
অথচ ভারতে কোভিড পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসায় ধারণা করা হয়েছিল, মার্চ থেকেই ভারত আবার নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামার অনুমতি দেবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল সেটা হচ্ছে না। বস্তুত কোভিড মহামারি শুরুর প্রথম ধাপে, ২০২০ সালের ২৩শে মার্চ থেকেই ভারত এই নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে।
দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন ট্র্যাভেল এজেন্ট সুমিত ব্যানার্জি বলছিলেন, ‘আসলে রেগুলার কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালু না-হলে একটা রুটে ভাড়া সাধ্যের মধ্যে আসা মুশকিল। এয়ার বাবলের আওতায়, ভ্রমণের হাজারো বিধিনিষেধের মধ্যে বিমান চালিয়ে এয়ারলাইনগুলোও পোষাতে পারে না – তাই ভাড়াও অস্বাভাবিক বেশি থাকে।’
ঠিক এই কারণেই গত বছর এয়ার বাবল সিস্টেমের আওতায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান চলাচল সীমিত আকারে শুরু হলেও ভাড়া কিন্তু সাধারণের নাগালের বাইরেই থেকে গেছে।
কোভিডের কিছুদিন আগে পর্যন্তও দুই দেশের প্রায় সাত-আটটি এয়ারলাইন সংস্থা প্রায় রোজই দুদেশের মধ্যে একাধিক ফ্লাইট চালাত। ভারতের দিকে এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারা, ইন্ডিগো, বা স্পাইসজেট যেমন ছিল, তেমনি বাংলাদেশের ফ্ল্যাগশিপ ক্যারিয়ার বিমান বা ইউনাইটেড, রিজেন্টের মতো সংস্থাও এই সব রুটে নিয়মিত ফ্লাইট চালাত।
কিন্তু এখন এয়ার বাবলের আওতায় মাত্র দু-একটি এয়ারলাইনই এই রুটে চালু আছে – তাও সপ্তাহে বড়জোর দু-তিনদিন।
ফ্লাইট সার্চ ইঞ্জিন কায়াকে একটা চট করে সার্চ করলেও দেখা যাচ্ছে, মার্চের মাঝামাঝি ঢাকা-দিল্লি রুটে একটা রিটার্ন টিকিটের গড় দাম ২৬ হাজার ভারতীয় রুপি বা ৩০ হাজার বাংলাদেশি টাকার কম নয়। সবচেয়ে সস্তা টিকিটের দামও প্রায় বিশ হাজার রুপি, তাও আবার সেটা লম্বা স্টপওভার দিয়ে।
চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারত ‘মেডিক্যাল ভিসা’ দেওয়া শুরু করলেও কেন আগের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে বাংলাদেশি দক্ষিণ ভারতে আসতে পারছেন না, তার কারণ তাই বোঝা শক্ত নয়।
ভেলোরের সিএমসি-তে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ফেব্রুয়ারির গোড়ায় ঢাকা থেকে এসেছেন শরিফউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলছিলেন, ‘প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে এক একজনের রিটার্ন টিকিট কেটেছি। তিন জনের যাতায়াতের ভাড়াতেই খরচ হয়েছে সোয়া লাখ টাকার বেশি – ইচ্ছা থাকলেও আমার ভাতিজাকে সঙ্গে আনতে পারিনি। ও থাকলে এখানে খুবই সুবিধা হত, কিন্তু কী আর করা!’
আন্তর্জাতিক রুটে ভারত নিয়মিত ফ্লাইট আরও এক দফা নিষিদ্ধ করায় প্লেনের ভাড়া কমার প্রতীক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হলো।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন