বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে গাজীপুরসহ ৫ জেলার সকল অবৈধ ইটভাটা ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এবং মুন্সিগঞ্জ এই ৫ জেলার সকল অবৈধ ইটভাটা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ধ্বংস ও সেখানে নির্মিত সকল স্থাপনা ভেংগে ফেলোর নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
পাশাপাশি একই সময়ে মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ডিজি সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসকদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলার ৩১৯টি অবৈধ ইটভাটার তথ্য হাইকোর্টকে জানান পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত মন্তব্য করেন, ”কেহ এখন জেগে ঘুমাতে পারবে না কারন বায়ু দুষণের কারনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়েছে। আদালত প্রশ্ন তুলে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর কতটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করছে বায়ু দুষণ বন্ধে। আদালত অরও বলেন. সেমিনার করে ভাল ভাল কথা বললে এখন হবে না বায়ু দুষণ বন্ধে কার্য়কর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেন বারবার আদেশ দেয়া সত্বেও কেন অবৈধ ইটভাটা বন্ধ হচ্ছে না?”
শুনানিতে আবেদনকারী পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘অবৈধ ইটভাটা বন্ধে একাধিকবার আদালত নির্দেশ দিলেও জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের রিপোর্টে এসেছে যে এখনও শত শত ইটভাটা কার্যক্রম চালাচ্ছে। অথচ ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে কোন সুযোগ নেই লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা স্থাপন করার। এমনকি আদালতে জেলা প্রশাসকরা সংযুক্ত হয়ে বিষয়টি সম্পর্কে স্বীকার করেছেন যে এখনও শত শত ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে।’
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতে আরও বলেন, ‘২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগ ৫ জেলার জেলা প্রশাসকদের সকল অবৈধ ইটভাটা বন্ধে নির্দেশ দেয়ার পরে ভাটার মালিকরা উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ উচ্ছেদের আদেশ বহাল রাখেন। তিনি বলেন স্থানীয় অনেক কর্মকর্তাদের যোগসাজসে কার্যক্রম চলে বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।’
জানা গেছে, মামলার শুনানিতে রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলার অবৈধ ইটভাটার তথ্য তালিকা আকারে হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। পরিবেশ অধিদফতর আদালতকে জানায়, মানিকগঞ্জের ১১টি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে ৮টিতে, মুন্সিগঞ্জে ২৬টি অবৈধ ইটভাটার ১৬টিতে, ঢাকার ১১৩টির মধ্যে ২৫টিতে, গাজীপুর ৪৬টি অবৈধ ইটভাটার ৩৩টিতে অভিযান চালানো হয়েছে।
একইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলার ডিসি আদালতকে জানান, নারায়ণগঞ্জে অবৈধ ইটভাটা রয়েছে ১৬৭টি এবং বৈধ ৮৮টি।
উল্লেখ্য: ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা শহর ও আশেপাশের এলাকায় বায়ু দূষণ বন্ধে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদি সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) জনস্বার্থে আদালতে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকার বায়ু দূষণ রোধে কয়েকদফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।
সেগুলো হলো, বিশেষজ্ঞ কমিটি হঠন হওয়ার পরে তাদের মতামত বিবেচনা করে বায়ুদূষণ বন্ধ করতে ঢাকা শহরে পরিবহন গাড়িতে, নির্মানাধীন এলাকায় মাটি/বালি/বর্জ্য ঢেকে রাখা, সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক রাস্তায় পানি ছিটানো, রাস্তা খোড়াখুড়ি কাজে টেন্ডারের শর্ত পালন নিশ্চিত করা, কালো ধোঁয়াবাহী যানবাহন জব্দ করা, অবৈধ ইটভাটাগুলো বন্ধ করা, পরিবেশ লাইসেন্স ব্যতিত চলমান সকল টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা এবং মার্কেট/দোকানে প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগ ভরে রাখা এবং অপসারন নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনকে পদক্ষেপ নেয়া।
নির্দেশনাগুলি বাস্বায়নে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদক্ষেপ নেয়া শুরু হলে বায়ু দুষণ কিছুটা কমতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ঢাকা শহর আবার সর্বোচ্চ বায়ুদুষণের শহর হওয়ার সংবাদ মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে এইচআরপিবি পক্ষে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে গত ৩০ জানুয়ারি হাইকোর্টে একটি সম্পূরক আবেদন দাখিল করা হয়। উক্ত আবেদনের সঙ্গে ঢাকা শহরের বর্তমান দূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ের অবস্থান ও অবৈধ ইভাটা পরিচালনা সম্পর্কে মিডিয়ার সংবাদ সংযুক্ত করে ৪ দফা নির্দেশনা চাওয়া হয়।
উক্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রনে আদালতের দেয়া একাধিক নির্দেশনা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ না থাকায় পাঁচ জেলার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি জেলাগুলোর অবৈধ ইটভাটার তালিকা দাখিলেরও নির্দেশ দেন আদালত। সে আদেশের ধারাবাহিকতায় ডিসি ও তাদের প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি হাইকোর্টে যুক্ত হয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করেন।