গাজীপুরে ২৬৭ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল, বাজেয়াপ্ত ৫২ আগ্নেয়াস্ত্র (তালিকাসহ)

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : গাজীপুর জেলা থেকে ইস্যু করা ২১৫ ব্যক্তির আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করেছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও আরো ৫২ ব্যক্তির আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল এবং আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেছে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান।

রোববার (১৫ মে) জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত পৃথক দু’টি আদেশ জারি করা হয়েছে।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রথম আদেশে বলা হয়েছে, গাজীপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেসির অধীন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তির পাঁচ বছরের মধ্যে ২১৫ ব্যক্তি অস্ত্র ক্রয় করেনি বা অস্ত্র ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু রেজিস্ট্রারে এন্টি করেনি।

২০১৬ সালের ৩ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা (৮২৬ নং) ”আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬” এর ৩৫(ক) অনুযায়ী “আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তির পাঁচ বছরের মধ্যে অস্ত্র ক্রয় না করলে লাইসেন্স সক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে” মর্মে বর্ণিত রয়েছে।

এমতাবস্থায় “১৮৭৬ সালের অস্ত্র আইনের ১৮(ক) এবং ১৯২৪ সালের অস্ত্র বিধিমালার ৪২ ও ৬৩ (ক) বিধিতে অর্পিত ক্ষমতাবলে ২১৫ ব্যক্তির লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।”

অপর এক আদেশে বলা হয়েছে, গাজীপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ইস্যু করা ৫২ ব্যক্তি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ধারাবাহিকভাবে পাঁচ বছরের অধিককাল নবায়ন করেনি। ২০১৬ সালের ৩ আগষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা (৮২৬ নং) “আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬” এর ৩৫(ঙ) অনুযায়ী “আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল বলে গণ্য হবে” মর্মে বর্ণিত রয়েছে।

এমতাবস্থায় “১৮৭৬ সালের অস্ত্র আইনের ১৮(ক) এবং ১৯২৪ সালের অস্ত্র বিধিমালার ৪২ ও ৬৩ (ক) বিধিতে অর্পিত ক্ষমতাবলে ৫২ ব্যক্তির লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হলো এবং আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”

কারা বৈধভাবে অস্ত্র কিনতে পারবেন?
বাংলাদেশে ছোট বড় যেকোন ধরণের আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে হলে তার জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়, অর্থাৎ অস্ত্র কেনার জন্য আগে লাইসেন্স করতে হয়।

এ সংক্রান্ত নিয়মগুলো কয়েকটি আইনের আওতায় পরিচালিত হয়।

এর মধ্যে মূলত ১৮৭৮ সালের আর্মস অ্যাক্ট এবং ১৯২৪ সালের আর্মস রুলস আইনের আওতায় যে কোন সামরিক বা বেসামরিক নাগরিককে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু মানদণ্ড রয়েছে, সেগুলো পূরণ হলেই একজন নাগরিক আবেদন করতে পারবেন।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একজন ব্যক্তিকে যেসব মানদণ্ড পূরণ করতে হয়:

  • বাংলাদেশের বৈধ নাগরিক হতে হবে
  • আবেদনকারীর জীবনের বাস্তব ঝুঁকি থাকলে, অর্থাৎ কেবলমাত্র আত্মরক্ষার ব্যাপার থাকলে তিনি আবেদন করতে পারবেন
  • ‘শর্ট ব্যারেল’ আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স ন্যূনতম ৩০ বছর, ‘লং ব্যারেল’ আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২৫ বছর হতে হবে, এবং এবং ৭০ বছরের নিচে হবে বয়স
  • আবেদনকারীকে অবশ্যই আয়কর দাতা হতে হবে, বছরে ন্যূনতম দুই লক্ষ টাকা আয়কর প্রদান করতে হবে
  • অনুমতি পেলে আবেদনকারী অস্ত্র আমদানি করে আনতে পারেন, অথবা দেশীয় বৈধ কোন ডিলারের কাছ থেকে অস্ত্র কিনতে পারবেন
  • কোন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন

লাইসেন্সের জন্য কীভাবে আবেদন করতে হয়

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য একজন নাগরিককে তার স্থায়ী ঠিকানা যে জেলায়, সেখানকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লাইসেন্স ও আগ্নেয়াস্ত্র বিভাগ থেকে আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে হবে।

এক্ষেত্রে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা এসবি শাখা তদন্ত করে আবেদনকারীর তথ্য মিলিয়ে দেখে একটি রিপোর্ট দেয়।

এরপর জেলা প্রশাসক বা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমোদনের পর সেটি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনাপত্তি পত্র দিলে জেলা প্রশাসক ওই আবেদনকারীর বরাবরে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করেন।

এক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সাথে বৈধ নাগরিকত্বের সনদপত্র, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ট্যাক্স সার্টিফিকেটের ফটোকপি, ছয় কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, এবং লাইসেন্স ফি জমা দিতে হবে।

অস্ত্র ব্যবহারের নিয়ম
আগ্নেয়াস্ত্র বিষয়ে সর্বশেষ ‘আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬’ আইনে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার স্বার্থে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।

তবে, এই আইনে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান সাধারণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক কখন ‘টেস্ট ফায়ার’ বা পরীক্ষামূলকভাবে ফাঁকা গুলি চালাতে পারবেন, সে সংক্রান্ত কিছু নিয়ম আছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ‘টেস্ট ফায়ার’ করা যাবে না।

নতুন কেনা অস্ত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক ‘টেস্ট ফায়ার’ করতে পারবেন।

এছাড়া যাদের পুরনো অস্ত্র বছর শেষে বার্ষিক নবায়ন করতে যাবেন, তখন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ম অনুযায়ী ‘টেস্ট ফায়ার’ করা হয় অস্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণ করে দেখার জন্য।

এছাড়া গুলি ক্রয় বা সংগ্রহের ক্ষেত্রেও জেলা প্রশাসকের অনুমতি লাগে, এবং গুলির হিসাব সংশ্লিষ্ট থানা এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবহিত করতে হয়।

গুলি সংগ্রহের বাৎসরিক সীমা বা পরিমাণ লাইসেন্সে নির্ধারিত থাকে।

এছাড়া আগ্নেয়াস্ত্র যিনি ব্যবহার করবেন লাইসেন্সটি তার নামে থাকতে হবে, যেমন মালিক যদি ব্যবহার করেন তার নামে লাইসেন্স থাকতে হবে।

আবার কোন ক্ষেত্রে যদি আগ্নেয়াস্ত্রটি মালিকের দেহরক্ষী ব্যবহার করেন তাহলে বডিগার্ড এর নামে লাইসেন্স থাকতে হবে।

এছাড়া কোন ব্যক্তি যখন নিজের অধিকারে আগ্নেয়াস্ত্র রাখেন, তখন সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়।

  • আগ্নেয়াস্ত্র হারিয়ে গেলে সাথে সাথে থানায় জিডি বা সাধারণ ডায়েরী করতে হবে
  • মালিক দেশের বাইরে গেলে, আগ্নেয়াস্ত্রের নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট থানাকে জানিয়ে যেতে হবে
  • যেকোনো নির্বাচনের আগে আগ্নেয়াস্ত্র স্থানীয় পুলিশের কাছে জমা দিতে হয়
  • এক বছর পর পর আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স নবায়ন করতে হয়।

প্রথম আদেশ

দ্বিতীয় আদেশ

প্রথম আদেশ

দ্বিতীয় আদেশ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button