বিআরটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : রাজধানীর উত্তরায় বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের একটি গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ আগস্ট) রাতে নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরণা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন।

মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন। তিনি জানান, মামলায় ক্রেনের চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি) ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্তদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে।

ওসি আরও জানান, উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহত দুই বোনের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। জড়িত দোষীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

মামলার বাদী আফরান মন্ডল বাবু বলেন, সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টর জসিমউদ্দীন সড়কের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে তার দুই বোনসহ স্বজনদের বহনকারী প্রাইভেটকারের ওপর বিআরটি প্রকল্পের একটি বক্স গার্ডার পড়ে সেটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে তার ভাগনি রিয়া মণি (১৯) ও তার স্বামী রেজাউল করিম হৃদয়কে (২৬) প্রাইভেটকার থেকে বের করা গেলেও আর পাঁচজনকে বের করা সম্ভব হয়নি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, প্রত্যক্ষদর্শীদের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পে একটি চাইনিজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিজিজিসি কাজ করছে। এই কাজের অংশ হিসেবে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী রাস্তায় বক্সগার্ডার একটি ক্রেনের সাহায্যে লোবেট ট্রাকে ওঠানো হচ্ছিল।

প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়ে সড়কে যান চলাচলের সময় ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করা হচ্ছিল। তার স্বজনদের বহনকারী গাড়িটি ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বক্স গার্ডার গাড়িটির চালকের আসনসহ পেছনের আসনের অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে আছড়ে পড়ে। ফলে ঘটনাস্থলেই গাড়িটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং গাড়িতে থাকা সাতজনের মধ্যে পাঁচজন নিহত হন।

আসামিদের অবহেলার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। ক্রেনের চালক, সিজিসিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার অনুসারে নিহতদের মধ্যে চালকের আসনে ছিলেন বেঁচে যাওয়া হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০) এবং রিয়ার শ্বশুর আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫)। পেছনে বসেছিলেন হৃদয়ের শাশুড়ি ও রিয়ার মা ফাহিমা আক্তার (৩৮), ফাহিমার বোন ঝর্না আক্তার (২৭), ঝর্না আক্তারের দুই শিশু সন্তান জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

হতাহতদের পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৌভাতের দাওয়াত খেয়ে স্বজনরা নবদম্পতিকে নিয়ে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে উত্তরার জসিমউদ্দীন মোড় সংলগ্ন সড়কে বিআরটির প্রকল্পের গার্ডার পড়ে তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারের ওপর। প্রাইভেটকারে সাত আরোহীর মধ্যে শুধু বেঁচে যান হৃদয় ও রিয়া। গত শনিবার (১৩ আগস্ট) বিয়ে হয় তাদের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button