কাপাসিয়ায় খেয়া পারাপারে নৈরাজ্য, নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ টাকা

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : প্রশাসন থেকে বলে দেওয়া হয়েছে খেয়া পারাপারে যাত্রীপ্রতি নিতে হবে পাঁচ টাকা। অথচ নেওয়া হচ্ছে দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০ টাকা। ইজারার নামে এমন নৈরাজ্য চলছে কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া-তরগাঁওয়ের বানার নদের খেয়াঘাটে। এতে প্রতিদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
নদের এক পাশে উপজেলার সাতটি ও অন্য পাশে তিনটি ইউনিয়ন অবস্থিত। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও এ ঘাট দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। নিত্যদিনের চলাচলে স্থানীয় ব্যক্তিদের দৈনিক আয়ের একটা অংশ চলে যায় এ ঘাট পারাপারে। নদের উত্তর পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারুল কবির অভিযোগ করে বলেন, ‘সাধারণ একটা গাঙ পার হইতেই ১০ টাকা শেষ। এটা বিরাট অন্যায়।’
গত শনিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, নদের দুই পাড়েই যাত্রী পারাপারের জন্য দাঁড়িয়ে আছে সারি বাঁধা নৌকা। নদের দক্ষিণ পাড়ে (কাপাসিয়া বাজার) বসানো হয়েছে ইজারা আদায়ের টুল ঘর। কোনো যাত্রী খেয়া পার হতে গেলে ঘাটের ইজারাবাবদ টুল ঘরে পাঁচ টাকা এবং নদী পার হওয়ার জন্য নৌকার মাঝিকে দিতে হচ্ছে আরও পাঁচ টাকা। সব মিলিয়ে একবার নদী পার হতে গেলে যেকোনো যাত্রীকে গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা। আসা–যাওয়ায় শেষ ২০ টাকা। বেশি ভাড়া আদায় নিয়ে বচসা বাধতে দেখা গেছে যাত্রী ও মাঝিদের মধ্যে।
ঘাটের মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খেয়াঘাটটিতে ৩০ থেকে ৩৫টি নৌকা রয়েছে। কিছুদিন আগেও এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৫০। দিন দিন যাত্রী কমায় ঘাটে নৌকার পরিমাণও কমছে। ঘাটের ইজারাদারদের নিজস্ব কোনো নৌকা নেই। করোনাভাইরাসের আগে ছয় টাকায় যাত্রী পার করা হতো। তখন মাঝিরা নিতেন তিন টাকা, টুল ঘরে দিতে হতো তিন টাকা। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে মাঝি ও টুল ঘরে দুই টাকা করে বাড়ানো হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘাটের প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো এক মাঝি বলেন, ‘যাত্রীরা আমাগোরে পাঁচ টাকা দিতে কোনো সমস্যা করে না। কিন্তু উপরে (টুল ঘরে) পাঁচ টাকা দিতে গিয়েই মন খারাপ করেন। তাঁরা অনেকেই আমাগোর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। যাত্রীদের কেউ–ই দুই জায়গায় টেকা দিবার চায় না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খেয়াঘাটটি গাজীপুর জেলা পরিষদের অধীন। জেলা পরিষদের সাতটি খেয়াঘাট রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নিজস্ব ও পাঁচটি আন্তজেলা খেয়াঘাট। এর মধ্যে কাপাসিয়া-তরগাঁও খেয়াঘাটটি জেলা পরিষদের নিজস্ব। টেন্ডার না হওয়ায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে ঘাটটিতে খাস সংগ্রহ করা হচ্ছে।
খাস সংগ্রহ ও ঘাটটির পরিচালনার দায়িত্বে আছেন কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন প্রধানের ছোটভাই বেলায়েত হোসেন। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাত্রী পারাপার করে জনপ্রতি পাঁচ টাকা আদায়ের সরকারি নির্দেশনা আছে তাঁর ওপর। কিন্তু বাস্তবে তা মানছেন না।
দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে গত ৮ মে মুঠোফোনে বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে কথা হয়েছিল এই প্রতিবেদকের। তখন বলেছিলেন ভুল করে তাঁর লোকজন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যাত্রী পারাপারে বেশি টাকা নিয়েছেন। ভবিষ্যতে এমনটা আর হবে না। এরপর তিন মাসের বেশি সময় পার হলেও দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া অব্যাহত আছে।
শনিবার আবারও মুঠোফোনে কথা হয় বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। এবারও তিনি বলেন, ‘আজ সকালে পোলাপাইন ভুল কইর্যা টুল বক্সে পাঁচ টাকা কইরা নিছে। পরে আমি নিষেধ কইর্যা দিছি।’
উপজেলার লতাপাতা গ্রামের বাসিন্দা জহির হোসেন। কাপাসিয়া বাজারে মনোহারি ব্যবসা রয়েছে তাঁর। যাতায়াতের সুবিধার্থে প্রতিদিনই এ ঘাট পার হতে হয় তাঁকে। জহির বলেন, প্রতিদিন শুধু নদী পার হতেই ২০ টাকা খরচ হয়ে যায়। কখনো বেকায়দায় পড়ে কম দিতে চাইলেও নিতে চায় না। ইজারাদার বাহানা দেখান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ‘কয় দিন আগেও আমি নিজে গিয়ে সতর্ক করে আসছি। তারপরও যদি কেউ তা না মানে, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র: প্রথম আলো