সব ব্যাংকে ডলার মিলবে এক দরে

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : দেশের সব ব্যাংক একই দরে ডলার কেনাবেচার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেমিট্যান্স হাউজগুলোর কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দামে ডলার কিনবে ব্যাংকগুলো। আর রফতানি বিল কেনার ক্ষেত্রে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ৯৯ টাকা। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় থেকে কেনা ডলারের সঙ্গে ১ টাকা মুনাফা যোগ করে বিক্রি করবে ব্যাংক। সে হিসাবে সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে আমদানি দায় নিষ্পত্তির জন্য ব্যবসায়ীরা ডলার কিনতে পারবেন।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) যৌথ বৈঠকে ডলারের একক দর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত দর অনুযায়ী এখনো প্রতি ডলারের বিক্রয় মূল্য ৯৫ টাকা। যদিও এ দামে দেশের কোথাও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের ডলার কিনছিল ১১০ টাকারও বেশি দরে। আর রফতানি আয় নগদায়ন হচ্ছিল ১০০-১০৬ টাকায়। আমদানিকারকদের কাছে এর চেয়ে অনেক বেশি দরে ডলার বিক্রি করছিল ব্যাংকগুলো।

বাজার স্থিতিশীল করতে এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলারের একক দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। তবে বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে ঘোষিত দরের সামঞ্জস্য না থাকায় সেটি কার্যকর হয়নি। এ পরিপ্রেক্ষিতেই ৮ সেপ্টেম্বর ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে করণীয় নির্ধারণে এবিবি ও বাফেদার সঙ্গে আলোচনায় বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই বৈঠকে ডলার বেচাকেনার সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্যই গতকাল বাফেদা ও এবিবির শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে দেশের আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সপ্রবাহের চিত্র পর্যবেক্ষণ করে নিজেরাই ডলার কেনাবেচার সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করে দেন। এক্ষেত্রে ডলারের খুচরা বাজার (কার্ব মার্কেট) পরিস্থিতিও আমলে নেয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে বাফেদা ও এবিবি চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ব্যাংকগুলোকে আট নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে পুনরায় আন্তঃব্যাংক ডলারের বাজার সচল করার নির্দেশনাও রয়েছে। আজ থেকেই বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর হবে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাফেদা চেয়ারম্যান আফজাল করিম বলেন, বাজারের অসম প্রতিযোগিতা দূর করতে আমরা সব ক্ষেত্রে ডলারের একক দর নির্ধারণ করে দিয়েছি। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সম্মিলিতভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের এক্সচেঞ্জ হাউজসহ সমগোত্রীয় সব প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্সে বিনিময় হার হবে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা। দেশের সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংককে এটি মেনে চলতে হবে। রফতানি বিলের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে বিনিময় মূল্য হবে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা। ব্যাংকগুলো ডলার কেনার গড় মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ১ টাকা যোগ করে আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করবে। আজ থেকেই একক এ দর কার্যকর হবে। তবে বাজার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে এ দর সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হবে।

কোনো ব্যাংক বাফেদা ও এবিবির সিদ্ধান্ত না মানলে কী হবে? এ প্রশ্নের জবাবে আফজাল করিম বলেন, এটি সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। আমরা আশা করছি এটা সবাই মেনে নেবে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকও সহযোগিতা করবে। আমাদের লক্ষ্য একটি স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রাবাজার তৈরি করা।

যৌথ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হয়েছে। রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি কার্ব মার্কেটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ দর নির্ধারণের মাধ্যমে আমদানি ও রফতানিকারকদের পাশাপাশি প্রবাসী কর্মী, ব্যাংকসহ সব পক্ষের সঙ্গে ন্যয়সংগত আচরণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ডলারের বাজার স্থিতিশীল হতে বাধ্য।

মাসরুর আরেফিন বলেন, বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই আন্তঃব্যাংক ডলারের বাজার চালু হবে। এ বাজার চালু হলে ব্যাংকগুলো ১০৩-১০৪ টাকায় ডলার কিনতে পারবে। যেসব ব্যাংকের রফতানি আয় কম, তারা উচ্চদরে রেমিট্যান্স না কিনে আন্তঃব্যাংক বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করতে পারবে।

 

সূত্র: বণিক বার্তা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button