সালমান শাহ’র ৫১তম জন্মদিন আজ

গাজীপুর কণ্ঠ, বিনোদন ডেস্ক : ঢাকাই সিনেমার ক্ষণজন্মা নায়ক সালমান শাহ বেঁচে নেই। কিন্তু তার স্বল্পদৈর্ঘ্য ক্যারিয়ার এখনও পূর্ণদৈর্ঘ্য হয়ে আছে রুপালি ভুবনে। তাই বছর ঘুরে সেপ্টেম্বর এলেই তাকে ঘিরে শুরু হয় আলোচনা, চর্চা। দেখা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। এখনও তার ‘খুন’র বিচার দাবি করে মাঠে নামেন ভক্তরা। এমনটাও দেখা যায়, ভক্তদের নানা গ্রুপ দেশজুড়ে প্রিয় নায়ককে ঘিরে অনেক রকম আয়োজন করে। আবার এ আয়োজনকে ঘিরে তৈরি হয় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগও। কারণ, এ মাসেই (সেপ্টেম্বর) ঢাকাই অমর নায়কের জন্ম ও মৃত্যুদিন।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সালমান শাহর জন্মদিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে জন্মেছিলেন তিনি। বেঁচে থাকলে ৫১-তে পা দিতেন। কিন্তু চলে গিয়ে সিনেপ্রেমী দর্শকের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছেন, তা শুকায়নি আজও।

জন্মদিনে সালমান শাহকে ঘিরে সিনেমা অঙ্গনে সরাসরি তেমন কোনও আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভক্তরা ঠিকই প্রিয় নায়ককে স্মরণ করছেন। ‘সালমান শাহ ভক্ত ঐক্যজোট’ নামের একটি দল নায়কের জন্মদিন উদযাপনের আয়োজন করেছে। যেটা অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর সেগুনবাগিচার সেগুন রেস্টুরেন্টে। বিকাল ৪টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। যাতে অংশ নিতে হলে ভক্তদের গুনতে হবে ৮শ’ টাকা।

জন্মোৎসবের বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন আয়োজকদের একজন, সালমান শাহর ভক্ত সাজিদ হাসান কামাল। বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই এই আয়োজন করি। এবারও আমরা সালমান শাহর জন্য দোয়া করবো, পাশাপাশি তার জন্মদিনের কেক কাটবো। এছাড়া আগামী দিনে তার হত্যার বিচারের দাবিতে কী কী কর্মসূচি করা যায়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।’

যদিও এই আয়োজনকে অস্বীকার করছেন সালমান শাহ চলচ্চিত্র সংসদের প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ রানা নকীব। তার ভাষ্যে, ‘সালমান শাহ ভক্ত ঐক্যজোট নামে কোনও কমিটি নেই। এদের কাজই হচ্ছে জন্মদিন ও মৃত্যুদিনে বিভিন্ন ইভেন্ট করে ভক্তদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। এরা অসাধু চক্র। এরা অনেকভাবেই আমাকে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে বলেছে, কিন্তু তাদের অ্যাকটিভিটি আর উদ্দেশ্য দেখে আমি সায় দিইনি। কারণ, আমি প্রিয় নায়ক সালমানকে বিক্রি করতে পারবো না। আমি উনার স্মরণে যা করি তার পুরোটাই নিঃস্বার্থ।’

এদিকে ‘সালমান শাহ ভক্ত ঐক্যজোট’-এর নামে ইতোপূর্বে সোমবারের জন্মোৎসবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এ পর্যন্ত প্রায় শ’খানেক মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন অন্যতম আয়োজক সাজিদ।

তারা জানান, অনুষ্ঠান শুরু হবে কোরআন তেলাওয়াত দিয়ে। এরপর যথাক্রমে হবে সালমান শাহর স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন, আগত ভক্তদের আলোচনা, নায়কের অভিনীত গানের পরিবেশনা ও কেক কাটা। যেহেতু এই জন্মোৎসবের কোনও বিশেষ আয়োজক নেই, তাই ভক্তরাই যার যার খরচ দিয়ে অংশ নেবেন। এক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্য ৮০০ টাকা টিকিট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে টিকিটের মূল্য ৫০০ টাকা। এই অর্থ দ্বারাই অনুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যয় এবং ভক্তদের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।

ভক্ত সাজিদ হাসান কামাল জানান, গত বছর সালমান শাহর জন্মদিনে সিনেমা অঙ্গনের কয়েকজন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তবে এ বছর সেটা করছেন না। এ বিষয়ে তার ভাষ্য, ‘আসলে তারা তো আমাদের মতো সালমান শাহর হত্যার রহস্য উন্মোচনের দাবিতে সোচ্চার নন। আমাদের মতো রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান না। কেবল এসে কেক কেটে চলে যান। তাই এবার আমরা নিজেরাই আয়োজন করছি।’

বিপরীতে এই গ্রুপের এমন আয়োজনকে নাকচ করে দিয়ে মাসুদ রানা নকীব সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমাকে যারা চিনেন ও জানেন তাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে দিচ্ছি, সালমান শাহ ভক্ত ঐক্যজোটের সাথে বা জোটের ব্যানারে আয়োজিত সালমান শাহ বিষয়ক কোনও অনুষ্ঠান বা অন্যান্য কোনও কর্মকাণ্ডের সাথে আমার কোনও ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। এবং এবারের জন্মবার্ষিকীতে আমার পক্ষ থেকে কোনও ধরনের আয়োজন রাখা হয়নি। কারণ, আমি চাই সালমান শাহর রেখে যাওয়া নানা ছবি, ভিউকার্ড, ভিডিও ফুটেজ, তথ্য ইত্যাদি সংগ্রহ করে তাকে নিয়ে অনলাইনে একটি ডিজিটাল আর্কাইভ বা অনলাইন পোর্টাল তৈরি করতে। যাতে এই প্রজন্ম জানতে পারে আমাদের বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে সালমান শাহ নামে ক্ষণজন্মা একজন সুপারস্টার ছিলেন, যিনি তার কাজ দিয়ে মৃত্যুর ২৬ বছর পরেও সিনেমাপ্রেমীদের অন্তরে আছেন। তাই সেপ্টেম্বর মাস এলেই জন্মবার্ষিকী উদযাপনের নাম করে ভক্তদের থেকে চাঁদা তুলে নামি-দামি রেস্টুরেন্টে নিজেরা চাইনিজ, বিরিয়ানি খাওয়ার আয়োজন আমি সমর্থন করি না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সালে সিলেট শহরের রেজিস্টারি মাঠে আয়োজিত চিত্রনায়ক সালমান শাহ স্মরণসভা ও জনসমাবেশে স্থানীয় কয়েকজনের উদ্যোগে ও সালমানের মা নীলা চৌধুরীর সম্মতিতে ফ্যানক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের নিয়ে ‘সালমান শাহ ফ্যান ক্লাব ঐক্যজোট’ গঠন করা হয়। একটি কমিটিও করে দেওয়া হয় তখন। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই পদ-পদবি নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়ায় বেশিরভাগ ভক্ত সরে যান। তাই ওখানেই সবকিছুর ইতি ঘটে এবং এটি হয়ে যায় কার্যক্রমহীন একটি নামমাত্র ক্লাব।

এখানেই শেষ নয়, খোঁজ মিলেছে সালমান ভক্তদের নাম করে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ফেনীতে আয়োজন করা হয়েছে চলচ্চিত্র উৎসব। যেখানে টিকিটের বিনিময়ে টানা পাঁচদিন প্রদর্শিত হবে সালমান অভিনীত পাঁচটি জনপ্রিয় ছবি। এই উৎসব বিষয়েও তেমন কোনও তথ্য জানে না নায়ককে ঘিরে সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘সালমান শাহ চলচ্চিত্র সংসদ’।

অন্যদিকে সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী দেশের বাইরে থাকায় এবং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদাসীনতার কারণেও সালমান শাহকে ঘিরে বাণিজ্য আর বিশৃঙ্খলার অভিযোগের বিষয়ে কোনও সুরাহা খুঁজে পান না অগণিত নিঃস্বার্থ ভক্তরা। বাংলা ট্রিবিউন চেষ্টা করেও তার কোনও মন্তব্য পায়নি এই বিষয়ে।

প্রসঙ্গত, টেলিভিশন নাটক দিয়ে অভিনয়ে সূচনা হয় সালমান শাহর। সেটা ১৯৮৫ সালের ঘটনা। এরপর ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি ২৭টি সিনেমায় কাজ করেছিলেন। এরমধ্যে অধিকাংশই ছিল সফল, দর্শকপ্রিয়।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। পুলিশের একাধিক তদন্ত শেষে বলা হয়, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে তার পরিবার ও ভক্তরা এই তদন্ত কখনও গ্রহণ করেননি। বরং তাদের দাবি, সালমানকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button