গাজীপুরে দুর্ভোগ: কাজে আসছে না সোয়া চার কোটি টাকায় নির্মিত সেতু!

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : হালিমা বেগম ও তাঁর ননদ কুলসুম বেগম দুজনই অসুস্থ। গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার খাইলসাবর্তা এলাকা থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাচ্ছিলেন পাশের কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর বাজারের কমিউনিটি ক্লিনিকে। তাঁদেরকে পাড়ি দিতে হয় তুরাগ নদ। এই নদের ওপর একটি সেতু হয়েছে। কিন্তু এক পাশে সংযোগ সড়ক না থাকায় তাঁরা সেতুতে উঠতে পারছেন না।

সেতুর পূর্ব পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় হালিমা–কুলসুমের সঙ্গে। ভোগান্তির বিষয়টি তুলে ধরে বৃদ্ধা হালিমা বেগম বলেন, ‘কী কমু বাজান, আমাগো কষ্টের সীমা নাই। গিরু (হাঁটু) সমান পানি দিয়া হাঁইট্যা (হেঁটে) যাওন লাগে। বৃষ্টি অইলে আরও বেশি কষ্ট অয় (হয়)। আমাগো কষ্ট দেহনের কেউ নাই, হোননেরও (শোনারও) কেউ নাই।’

তুরাগ নদের ওপর নির্মিত ১৪০ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর পূর্ব পাশে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের খাইলসাবর্তা, অন্য পাশে কালিয়াকৈর উপজেলার সাকাশ্বর বাজার। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পরও পূর্ব পাশে সংযোগ সড়ক হয়নি। এতে ভোগান্তিতে রয়েছে আশপাশের ১০ গ্রামের বাসিন্দা। ঝুঁকি নিয়ে সেতুর এক পাশ দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে এসব গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচল করতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ব্যয় হয় ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রায় আট শ মিটার সংযোগ সড়ক ছাড়াই সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। সংযোগ সড়কের জন্য দরপত্র অনুমোদন হলেও কাজটি আটকে আছে। সেতুটি দিয়ে পারাপার হওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ভারী বস্তা ফেলে হাঁটার ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। কিন্তু এই পথ দিয়ে সেতুতে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়।

এলাকাবাসী জানান, ১০ মিনিটের রাস্তা অথচ সংযোগ সড়ক না থাকায় সময় লাগছে ১ ঘণ্টার বেশি। সংযোগ সড়কটি হলে সাধারণ মানুষ গাড়ি, ভ্যান–রিকশা নিয়ে ওই সেতু দিয়ে চলাচল করতে পারত। এতে ঝুঁকির পাশাপাশি সময় অপচয়ও এড়ানো যেত।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেতুর পশ্চিম পাশে তুরাগ নদের কোলঘেঁষা বহু পুরোনো সাকাশ্বর বাজার। আশপাশের ১০–১৫টি গ্রামের মানুষ এখানে হাটবাজার করতে আসে প্রতিদিন। যখন সেতুটি ছিল না, তখন নদী পারাপারের জন্য নৌকা ছিল। কিন্তু সেতু হওয়ায় এখন আর নৌকায় পারাপারের সুযোগ নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, ওই পথ ধরে ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষ চলাচল করছে। কেউ সবজির ডালা মাথায় নিয়ে বাজারে যাচ্ছে, কেউবা কৃষিকাজ করতে। সেতুটির পূর্ব পাশে বর্তমানে অথই পানি। কয়েকজন স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়ে গোসল করছে। নিজেদের তৈরি পথ দিয়ে অনেক মানুষ ঝুঁকি নিয়ে সেতুতে ওঠানামা করছে।

কয়েক দিন আগে সেতু এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন বলে জানান গাজীপুর সিটি করপোরেশন জোন-৫–এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হানিফ। তিনি বলেন, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাউলতিয়া গ্রামের বাসিন্দা দেওয়ান আবদুর রহিম বলেন, ‘তিন-চার বছর ধরে সেতুটা পড়ে আছে, কিন্তু আমাদের কোনো কাজে আসছে না। বৃষ্টি থাকলে সেতুটিতে উঠতে পাহাড়ের মতো মনে হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকার কাউন্সিলরকে বারবার বলছি, কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’

গাজীপুর সিটির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম ফারুক আহাম্মেদ বলেন, ‘সেতুটির সংযোগ সড়ক নিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। মেয়র না থাকায় এই সমস্যাটা আরও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকাবাসীর কাছে কোনো জবাব দিতে পারি না।’

 

সূত্র: প্রথম আলো

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button