১৫৫ বছরের পুরনো আইন দিয়ে চলছে জুয়া প্রতিরোধ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে জুয়া খেলা অবৈধ। তবে জুয়া প্রতিরোধে দেশে যে আইনটি রয়েছে, সেটি ১৮৬৭ সালে অর্থাৎ ব্রিটিশ আমলে প্রণীত। পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট অনুযায়ী জুয়া খেলার অভিযোগে দায়ী ব্যক্তির দণ্ড হিসেবে রয়েছে মাত্র ৫০ টাকা জরিমানার বিধান। এ সুযোগ নিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে জুয়া। ১৫৫ বছরের পুরনো আইন দিয়ে জুয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
প্রচলিত আইনটির সংজ্ঞা অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া এটি সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। ফলে আইনটি রাজধানীতে প্রয়োগের সুযোগ নেই। ২০১৯ সালে রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে বিভিন্ন জুয়ার আসর থেকে শতাধিক ব্যক্তি আটক হলে আইনের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। সে সময় সারা দেশে জুয়া নিষিদ্ধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিলেন, জুয়া আইনে ঢাকা মহানগরীর বাইরে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এ আইনে সাজার পরিমাণ খুবই নগণ্য।
জুয়া খেলার অপরাধে সাজা বাড়ানোর পরামর্শ উঠে এসেছিল সর্বশেষ জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনেও। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে শাস্তি বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন সম্মেলনে যোগ দেয়া জেলা প্রশাসকরা। সে সময় সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, আইনটি কোথা থেকে কীভাবে হয়েছিল, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। এটিকে কীভাবে যুগোপযোগী করা যায় সে বিষয়েও কাজ চলছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সাম্প্রতিক একটি বৈঠকে গ্রামগঞ্জে প্রসারমাণ জুয়া খেলা রোধকল্পে বিদ্যমান দুর্বল জুয়া প্রতিরোধ আইনের সংস্কার বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, গ্রামগঞ্জে প্রসারমাণ জুয়া খেলা রোধকল্পে বিদ্যমান দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭-এর ধারা ২, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১ ও ২২-এর প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে আইনটি হালনাগাদ বা যুগোপযোগী করার জন্য বাংলা ভাষায় প্রস্তুতকৃত খসড়া প্রস্তাবটি চলতি বছরের ১৭ আগস্ট পুলিশ অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। খসড়াটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই বৈঠকে প্রতিবেদনটি নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব একেএম টিপু সুলতান কমিটিকে জানান, গ্রামগঞ্জে প্রসারমাণ জুয়া খেলা রোধকল্পে বর্তমান বিদ্যমান গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট, ১৮৬৭-এর নয়টি ধারায় পরিবর্তন এনে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আইনটি যুগোপযোগী করার জন্য পুলিশ অধিদপ্তর কর্তৃক খসড়া প্রস্তাব পাওয়া গিয়েছে। ওই খসড়াটি যাচাই-বাছাই করার জন্য এরই মধ্যে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বৈঠকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এইচএন আশিকুর রহমান এমপি বলেন, দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে মাদক ও জুয়া ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের চলমান আইনে জুয়া রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। চলমান আইনে জুয়া খেলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মাত্র ৫০ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। ফলে অভিযুক্ত ব্যক্তি খুব সহজে জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ আইনটি যাচাই-বাছাই করে সেটিকে সময়োপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।