ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আসার দৌড়ঝাঁপ শুরু, পদপ্রত্যাশীদের অতীত ঘাঁটছে আ. লীগ

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলন আগামী ৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে পদপ্রত্যাশীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপও। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শীর্ষ পদে (সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) স্থান পেতে পদপ্রত্যাশীরা জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে নিজের নামটা কিভাবে পৌঁছানো যায়, সেই চেষ্টাও করছেন অনেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু নেতার মধ্যে ছাত্রলীগকে নিজেদের মতো ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে। একই প্রবণতা আছে ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতার মধ্যেও। ফলে সংগঠনের সরাসরি অভিভাবক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন আশা-প্রত্যাশা নিয়ে যাদের নেতৃত্বে আনেন, তারা আর সেই প্রত্যাশার জায়গায় থাকতে পারেন না। তারা সংগঠনের ভাবমূর্তি ও ঐতিহ্য ভুলে পদ-বাণিজ্য কিংবা টেন্ডার-বাণিজ্যের মতো কাজে জড়িয়ে পড়েন। এসব কারণে এবার যোগ্যতা, ত্যাগ ও ‘পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড’ দেখে নেতৃত্বে নির্বাচন করা হবে।

ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে আছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ত্যাগী, পরিচ্ছন্ন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা অগ্রাধিকার পাবেন। কোনো বিতর্কিত নেতার ঠাঁই হবে না। সর্বোপির আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া দায়িত্ব যে ধারণ করতে পারবে, তাকেই আনা হবে শীর্ষ নেতৃত্বে।’

ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বে আছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকও। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতৃত্ব বাছাই করেন কাউন্সিলররা। মতামত দিয়ে কিংবা ভোট দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করার রীতি আছে ছাত্রলীগে। তবে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার আবেগ ও অনুভূতির প্রতি আস্থা রেখে যেন কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেন।’

এবার শীর্ষ নেতৃত্বে আসার জন্য যারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে- বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ আরিফ হোসেন, ইয়াজ আল রিয়াদ, রাকিব হোসেন, কামাল খান, সোহান খান, মাজহারুল ইসলাম শামীম, তিলোত্তমা শিকদার, মো. খায়রুল হাসান আকন্দ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাহসান আহমেদ রাসেল, আরিফুজ্জামান আল ইমরান, মাহবুব খান, সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম বাধন, শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), সাদ বিন কাদের চৌধুরী, নাজিম উদ্দীন, সোহানুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক রনি মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ইমরান জোর্য়াদার, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু, উপবিজ্ঞান-বিষয়ক সম্পাদক মো. সবুর খান কলিন্স, ক্রীড়া সম্পাদক আল আমিন সুজন, পরিবেশবিষয়ক উপসম্পাদক মোস্তাক আহমেদ সোহাগ, উপআইনবিষয়ক সম্পাদক শাহেদ খান ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক শামীম পারভেজ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনও সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসতে চান।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নেতা হওয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৯ বছর। কিন্তু কোভিড মহামারীর কারণে এবারের সম্মেলন দুই বছর পিছিয়ে যাওয়ায় অনেকেই বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে। আবার অনেকেই বয়সসীমা না বাড়ানোর পক্ষে।

ছাত্রলীগের এর আগের (২৯তম) সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় ওই সম্মেলন। এর আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। সমালোচনার মুখে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নেতৃত্ব হারান শোভন-রাব্বানী। ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান ওই কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়। আর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান ওই কমিটির প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের পূর্ণ সভাপতি ও সাধারাণ সম্পাদক করা হয়।

ঢাবি কমিটির আলোচনায় যারা আগের বেশ কয়েকটি কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঢাকা বিশ্বদ্যালয় হল কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থেকে কমপক্ষে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটির নেতৃত্বে এসেছেন। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়া সোহেল রানা টিপু ছিলেন কবি জসীম উদদীন হলের সভাপতি। ২০১১ সালে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান মেহেদী হাসান মোল্লা, যিনি স্যার এএফ রহমান হলে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৫ সালের ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স। এ ছাড়া জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি হন ২০১৮ সালে।

সেই হিসেবে এবার ঢাবি কমিটির আলোচনায় রয়েছেন- বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান শান্ত, ফজিলাতুনে নেছা মুজিব হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রনক জাহান রাইন, জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল ইসলাম শান্ত, হাজী মুহসীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি শহীদুল হক শিশির, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সভাপতি সজীবুর রহমান সজীব ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু ইউনূস, সূর্যসেন হলের সভাপতি মারিয়াম সোহান, স্যার এএফ রহমান হলের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সভাপতি কামাল উদ্দিন রানা, জগন্নাথ হলের সভাপতি কাজল দাস, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সভাপতি তানভীর সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক মিশাত সরকার, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, শামসুন নাহার হলের সভাপতি খাদিজা আক্তার ঊর্মি, সাধারণ সম্পাদক নুসরাত রুবাইয়াত নীলা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের সভাপতি কোহিনুর আক্তার রাখি, বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলের সভাপতি রাজিয়া সুলতানা ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেন মুহাম্মদ সোহান ও রফিকুল ইসলাম সবুজের নামও আলোচনায় আছে।

 

সূত্র: আমাদের সময়

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button