পূর্বাচলে আলাদা সিটি করপোরেশন গঠনের প্রস্তাবনা রাজউকের

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : পূর্বাচলের রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা এবং আলাদা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনে স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ চায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এক্ষেত্রে তারা সিটি করপোরেশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে। সংস্থাটি এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠালে মন্ত্রণালয় যৌক্তিকতাসহ নতুন করে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য সংস্থাটিকে নির্দেশনা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে রাজউক থেকে পূর্বাচলে ৩০০ প্লট মালিকদের গৃহ নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবারের বৈঠকে রাজউকের পক্ষ থেকে পূর্বাচল প্রকল্প নিয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

রাজধানীর ওপর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে সরকার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ছয় হাজার ১৫০ একর জমি নিয়ে ১৯৯৫ সালে পূর্বাচল নতুন শহর গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে পাঁচ বার নকশা পরিবর্তন এবং আট বার মেয়াদ বাড়ালেও এখনও প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে আগামী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে ৩০টি সেক্টরে ২৬ হাজার প্লটে ২৬ হাজার আবাসিক ভবন গড়ে ওঠার কথা।

উন্নয়নমূলক কাজের রক্ষণাবেক্ষণ পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আওতাধীন। টিআই (টাউন ইম্প্রুভমেন্ট) আইন অনুযায়ী, রাজউক নির্মিত যেকোনও অবকাঠামো সিটি করপোরেশনের বরাবর হস্তান্তরের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প এলাকাটি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত না হওয়ায় তা হস্তান্তর করতে পারছে না সংস্থাটি। এ কারণে বাস্তবায়িত প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে রাজউক। এ কারণে প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ বা সিটি করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব করেছে তারা। রাজউক তার প্রস্তাবনায় এই কর্তৃপক্ষ গঠনে ঢাকা উত্তর বা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামো অনুসরণ করার কথা বলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজউকের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রাজউকে প্রস্তাবের যৌক্তিকতাসহ পুনরায় পাঠানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। নতুন প্রস্তাবনায় রাজউক আলাদা একটি সিটি করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।

এতে আরও বলা হয়েছে— পূর্বাচল প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা উত্তর বা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, আলাদা সিটি করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব ও অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে পূর্বাচলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি রাজউকের সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে নিজস্ব জনবলে বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের পাঠাবে রাজউক।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন— যখন পূর্বাচল প্রকল্পটি নেওয়া হয়, তখন আমি নবীন কর্মকর্তা ছিলাম। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে প্লট কিনেছিল। কিন্তু এত সময়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল হয়নি। পরে কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, অনেক দিন হয়ে গেছে। এ প্রকল্প নিয়ে মানুষের অনেক স্বপ্ন ছিল। বাস্তবায়ন কতটুকু তা জানতে চান। বাসা নির্মাণ হয়েছে কিনা তাও তিনি জানতে চান।

এদিকে পূর্বাচল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানানো হয়েছে— বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। আর পানির পাম্প বসানো হচ্ছে। এখন শুধু নিরাপত্তার দিকটি রয়েছে। সেখানে থানা নির্মাণের জন্য জায়গা আছে। যা সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, প্রথমে পুলিশ ফাঁড়ি হবে। পরে পূর্ণাঙ্গ থানা হবে।

ইতোমধ্যে পূর্বাচলে ৩০০টি বাড়ির নকশা অনুমোদন করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।

রাজউকের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ক্ষেত্রে নীতিমালা কঠোরভাবে মানা হচ্ছে। এখানে স্বামী-স্ত্রীর নামে আলাদা আলাদা প্লট বরাদ্দের সুযোগ নেই। তথ্য পেলে একজনের নামের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হয় বা হবে।

দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৮ শতাংশ আবাসন সুবিধা পেতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা ৪০ শতাংশে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের উদ্যোগের কারণে সেটা বর্তমানে প্রায় ২৭ শতাংশে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন মহানগর ও শহরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে আবাসন তৈরি করা হচ্ছে। সেগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ৪০ শতাংশ হয়ে যাবে বলে জানায় মন্ত্রণালয়।

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন নিয়ে কথা হয় বৈঠকে। সেখানে সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সমন্বয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া জনগণ যাতে ড্রেনে পলিথিনসহ পচনশীল দ্রব্য না ফেলে, সে জন্য প্রচারণা করার সুপারিশ করে কমিটি।

সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো পরিষ্কার রাখতে জনসচেতনতার পাশাপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সচল রাখার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে সমন্বয় করে কাজ করার সুপারিশ করে কমিটি। এতে আরও বলা হয়, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত সুরক্ষায় হোটেলগুলোর বর্জ্য ও হ্যাচারিগুলো দূষিত পানি পরিশোধনের জন্য স্থায়ী এসটিপি করার লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের করার সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন— কমিটির সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বজলুল হক হারুন, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন এবং ফরিদা খানম। বিশেষ আমন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।

 

আরো জানতে…………..

দুর্নীতির মাধ্যমে ৬৩টি প্লট হাতিয়ে নিয়ে দুদকের জালে নাগরীর চেয়ারম্যানসহ তাঁর স্বজনরা!

এলএ শাখার সহযোগীতায় ‘পূর্বাচলে প্রায় সাড়ে ৫শ কোটি টাকা মূল্যের প্লট’ হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা!

পূর্বাচলে হাইকোর্টের দেওয়া স্থিতাবস্থা অমান্য: ডিসি-এসপিকে আদালত অবমাননার নোটিশ

পূর্বাচলের ২৭নং সেক্টরে হবে নতুন ডিপ্লোমেটিক জোন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পূর্বাচলে ২৫’শ বিঘা জমিতে ভরাট কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button