কালীগঞ্জে হত্যাকাণ্ড : ১৮ বছর পলাতক থাকার পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব সংবাদদাতা : কালীগঞ্জের আলোচিত শামসুল হক দর্জি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. মাসুদকে ঘটনার প্রায় ১৮ বছর পর গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ।
শনিবার (৮ জুলাই) দুপুরে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার মো. মাসুদ কালীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর গ্রামের সোবাহানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. মাসুদ পালাতক থাকা অবস্থায় সর্বশেষ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে প্রাইভেটকার চালক (ড্রাইভার) হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে-মধ্যে কালীগঞ্জে আসা-যাওয়া করতো। তাকে অনেক বছর ধরে খুঁজছিল কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। প্রযুক্তির সহায়তায় মাসুদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে পূর্বাচল উপশহর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ২০০৫ সালে ১৫ এপ্রিল বিকেলে কালীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর এলাকার শামসুল হক দর্জিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় মাসুদ ও তাঁর ভাই সানাউল্লাহ। এরপর তারা লাঠি দিয়ে শামসুল হককে পেটান। মারধরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন নুরে আলম ও তাঁদের বোনের স্বামী আনোয়ার শিকদারও। এ সময় মাসুদ শামসুল হকের বুকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। চিৎকার শুনে শামসুল হকের স্ত্রী হাফেজা বেগম ঘটনাস্থলে ছুটে এসে সবাইকে ডাকতে থাকেন। এ সময় হামলাকারীরা শামসুল হককে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যান। পরে গুরুতর অবস্থায় শামসুলকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফেজা বেগম বাদী হয়ে ওই চারজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আবুবকর সিদ্দিক তদন্ত শেষে একই বছরের ১০ অক্টোবর ওই চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
দীর্ঘ শুনানি শেষে ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি (সোমবার) দুপুরে গাজীপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন তিন ভাইসহ চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং একই সঙ্গে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কালীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর গ্রামের সোবাহানের ছেলে মাসুদ, সানাউল্লাহ, নূরে আলম ওরফে ময়না ও তাদের ভগ্নিপতি বরিশালের কোতোয়ালি থানার হরিনাফুলিয়া গ্রামের গণি শিকদারের ছেলে আনোয়ার শিকদার। রায় ঘোষণার সময় নুরে আলম ওরফে ময়না উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক ছিলো।
মামলায় ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট হাফিজ উল্লাহ দর্জী ও আসামি পক্ষে মামলা পরিচলান করেন অ্যাডভোকেট সুলতান উদ্দিন।
ঘটনার প্রায় ১৮ বছর পর পলাতক মো. মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হলো।
কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি মাসুদকে গ্রেপ্তার করতে ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। সম্প্রতি প্রযুক্তির মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত হয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে পূর্বাচল উপশহর থেকে মাসুদকে গ্রেপ্তার করে কালীগঞ্জ থানায় আনা হয়। পরে শনিবার দুপুরে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আরো জানতে…..
কালীগঞ্জে অর্থ আত্মসাৎ করে পালিয়ে দেশ ছাড়ার প্রস্তুতিকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
নাম-পরিচয় পাল্টে ১৪ বছর আত্মগোপনে ফাঁসির আসামি, অবশেষে ধরা পুলিশের হাতে
কালীগঞ্জের আলোচিত মহিউদ্দিন হত্যা: ১৪ বছর পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার