মধ্যরাতে নরসিংদীতে ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ, নিহত ৭

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : নরসিংদীর শিবপুরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে শিবপুর ঘাসিরদিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিরা ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার এসবি নিটিং নামের একটি পোশাক কারখানার কর্মী। ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুবাদে তাঁরা সবাই একসঙ্গেই চলাফেরা করতেন। শুক্রবার ছুটির দিনে দল বেঁধে মাইক্রোবাসে করে সিলেটে ঘুরতে যাচ্ছিলেন তাঁরা।

বেপরোয়া গতির পাথরবাহী ট্রাকের চাপায় এখন তাঁদের কারও লাশ মর্গে, কেউ হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই ট্রাক দ্রুতগতিতে আরেকটি গাড়িকে ওভারটেক করতে গেলে মাইক্রোবাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। এতে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাসটির চালকসহ মোট সাতজন নিহত ও চারজন গুরুতর আহত হন।

নিহত সাতজন হলেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী গ্রামের মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক ওরফে সবুজ (৩০), গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমীন (২৭), ঝালকাঠির রাজাপুর থানার পারগোপারপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমীন হাওলাদার (২৯), জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহাম্মেদ (৩৬), মাদারীপুরের কালকিনি থানার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আব্দুল আউয়াল (৩৭), বরিশালের মুলাদি থানার মুলাদি গ্রামের মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান সিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও কুষ্টিয়ার সদর থানার খাজানগর গ্রামের নুরু মোল্লার ছেলে বাবুল মোল্লা (৪০)।

এ ছাড়া আহত চারজনের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন সাকি, পারভেজ ও দোয়েল। দুর্ঘটনার পর থেকে মাইক্রোবাসচালকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে আসেন এসবি নিটিং কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. শিহাব উদ্দীন। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চালক ও আরেকজন ছাড়া মাইক্রোবাসটিতে অবস্থান করা নয়জনই তাঁদের প্রতিষ্ঠানের কর্মী। তাঁদের মধ্যে আটজনই প্রতিষ্ঠানের মার্চেন্ডাইজার ও একজন ফেব্রিকস সেকশনের স্টোরকিপার। কিছুদিন ধরেই তাঁরা সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। সে অনুযায়ী গতকাল রাত ১১টার দিকে আশুলিয়া থেকে চালকসহ ১১–১২ জন ওই মাইক্রোবাসে চড়ে সিলেটের দিকে রওনা হন। পথে নরসিংদীর শিবপুরে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস বলছে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার কাছাকাছি সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে। সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই একটি ট্রাক ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। অন্যদিকে মাইক্রোবাসটি সিলেটের দিকে যাচ্ছিল। ঘাসিরদিয়া এলাকায় অন্য একটি গাড়িকে দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় সামনে চলে আসা মাইক্রোবাসের সঙ্গে ট্রাকটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের পাঁচ যাত্রী নিহত হন।

খবর পেয়ে দ্রুত ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত ৬ জনকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠান এবং নিহত ৫ জনের লাশ উদ্ধার করেন। হাসপাতালটিতে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আরও ২ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাঁদের মৃত্যু হয়। আহত ৪ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে  জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত ছয়জনকে রাতে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দুজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন। অন্য চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত ইনচার্জ কবির হোসেন ভূঁইয়া সংবাদ মাধ্যমকে  জানান, দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মাইক্রোবাস ও পাথরবোঝাই ট্রাক জব্দ করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। ট্রাকটির চালকও আটক আছেন। নানা মাধ্যমে হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে খবর জানানো হচ্ছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বাণ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ট্রাকের চাপায় হতাহত ব্যক্তিরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন। নিহত সাতজনের লাশ নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে। তাঁদের স্বজনেরা এলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button