ভারত-পাকিস্তান সংঘাত তীব্রতর: কাশ্মীর ও অমৃতসরে বিস্ফোরণ, ড্রোন ভূপাতিত

গাজীপুর কণ্ঠ, আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং পাঞ্জাব রাজ্যের পবিত্র শিখ নগরী অমৃতসরে শুক্রবার রাতভর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা একাধিক ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ১৯৯৯ সালের কার্গিল সংঘর্ষের পর এটিই দু’দেশের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র লড়াই।
শুক্রবার (০৯ মে) রাত ১০টা পর থেকে অমৃতসর এবং কাশ্মীরের বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণ শুরু হয়। অমৃতসরে বিস্ফোরণের ঘটনা এই তিনদিনের সংঘাতকে নতুন মাত্রা দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাশ্মীরে দ্বিতীয় রাতের ব্ল্যাকআউট
কাশ্মীরের শীতকালীন রাজধানী জম্মু শহরে ব্ল্যাকআউটের মধ্যে রাতের আকাশে প্রজেক্টাইল এবং আলো ঝলকানি দেখা যায় বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। “ড্রোন দেখা গেছে… আমরা সেগুলো ভূপাতিত করছি,” বলেন এক ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা।
শ্রীনগর বিমানবন্দরের কাছে অন্তত ১০টি বিস্ফোরণ এবং কাশ্মীরের আরও এক ডজন স্থানে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা সূত্র।
দু’দেশের পাল্টাপাল্টি হামলা ও ড্রোন যুদ্ধ
গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হিন্দু পর্যটকদের ওপর হামলার জবাবে ভারত বুধবার পাকিস্তানে কথিত “জঙ্গি ঘাঁটি”তে হামলা চালায়। এরপর থেকেই দু’দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গোলাবর্ষণ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলছে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তান বৃহস্পতিবার রাতে তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করে কাশ্মীরসহ ভারতের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৩৬টি স্থানে হামলা চালিয়েছে। জবাবে ভারতও পাকিস্তানে ড্রোন হামলা চালিয়ে একটি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।
পাকিস্তান ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা কোনও ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নেয়নি। তবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সীমান্তের ওপার থেকে ভারী গোলাবর্ষণে শুক্রবার সকালে পাঁচজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ২৯ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
মানবিক সংকট ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে
এই সংঘাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে, যদিও এই সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
কাশ্মীর, পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাটের সীমান্তবর্তী এলাকায় বাসিন্দারা নিরাপদ স্থানে সরতে বাধ্য হচ্ছেন। স্কুল, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হয়েছে, বাজারে খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করছেন নাগরিকরা।
অমৃতসরে স্বর্ণ মন্দিরের আশপাশে সারারাত সাইরেন বাজে, পর্যটকরা শহর ত্যাগ করছেন। ব্রিটিশ এক নাগরিক বলেন, “আমরা থাকতে চেয়েছিলাম, কিন্তু এই শব্দ, ব্ল্যাকআউট, আর সাইরেনে রাতে ঘুমাতে পারছি না।”
গুজরাটের ভূজ শহরে প্রশাসন পর্যটক বাস প্রস্তুত রেখেছে, প্রয়োজনে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য।
অর্থনৈতিক প্রভাব
সংঘাতের ফলে ভারতের শেয়ারবাজারে শুক্রবার ৮৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। উভয় প্রধান সূচক ১.১% করে কমেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের বাজার ৩.৫২% বেড়েছে, যার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, পাকিস্তান ভূখণ্ডে সহিংসতা কমে আসা।
ক্রিকেট লিগ বন্ধ
ভারতের আইপিএল এবং পাকিস্তান সুপার লিগের ম্যাচসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
সূত্র : রয়টার্স