কালিয়াকৈরে জালিয়াতি করে শতাধিক কৃষকের ৫শ বিঘা জমি হাতিয়েছে রাজ হাউজিং

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে, ভুয়া জাল দলিল বানিয়ে রাজ হাউজিং লিমিটেডসহ স্থানীয় ভূমিদস্যু গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার আটাবহ ইউনিয়নের ৯টি গ্রামের শতাধিক কৃষকের ৫শ বিঘা জমি জালিয়াতি করে হাতিয়ে নিয়েছে।

ওই হাউজিং কোম্পানির মালিকসহ স্থানীয় ভূমি দস্যু প্রতারক চক্রের বিচার, জমি ফিরে পেতে ও তাদের গ্রেফতারের দাবিতে ৯টি গ্রামের প্রায় ২ হাজার গ্রামবাসী বৃহস্পতিবার দুপুরে আটাবহ ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার করেছেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, আটাবহ ইউনিয়নের বাসিন্দা আলা উদ্দিন মোল্লা।

এ সময় বক্তব্য রাখেন- গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক,কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন সিকদার, কালিয়াকৈর পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, হুমায়ুন কবির খান,আব্দুল লতিফ,সিকদার মোশারফ হোসেন প্রমুখ।

এ বিষয়ে আটাবহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ আলীম জানান, রাজ হাউজিং কোম্পানির খান মো. টিপু সুলতান, ওয়াহিদুর রহমান, বরকত উল্যাহ, স্থানীয় ভূমিদস্যু ইয়াছিন, আব্দুর রহমান , দুলাল উদ্দিন, রবিউল করিমসহ ২০ থেকে ২৫ জনের একদল প্রতারক চক্র আটাবহ ইউনিয়নের জালশুকা, হিজলহাটি, বিষাইদ, গোসাত্রা, বড়ইছুটি, খোলাপাড়া, উত্তরকাঞ্চনপুর, চাতলভিটি, পশ্চিম ভাতারিয়া গ্রামের নিরিহি কৃষকদের ৫ শত বিঘা জমির জাল দলিল তৈরি করে হাতিয়ে নিয়েছে।

এ বিষয়ে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক জানান, ওই ৯ গ্রামের নিরিহ কৃষকদের প্রায় ৫ শত বিঘা জমি ভুয়া ও জাল দলিলের মাধ্যমে আত্বসাৎ করার ঘটনায় গ্রামবাসীদের পক্ষে মৃত মোগর আলীর ছেলে আবুল হোসেন, মৃত আওলাদ হোসেনের স্ত্রী মাজেদা বেগম ও মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে সেলিম উদ্দিন বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় পৃথক ৩ টি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ভুমি মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক জানান, নিরীহ কৃষকের জমি প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া প্রতারক চক্রদের সুষ্ঠ বিচার করা হবে।

ভুয়া জাল দলিল বাতিল করে জমির প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ ছাড়া এ ঘটনায় ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ইয়াছিন আলী, লিয়াকত হোসেন, দুলাল উদ্দিন, মকবুল বয়াতী গং এ দুই কোম্পানিকে বিভিন্নভাবে ওইসব জমির অবৈধ দলিল সম্পাদন করে দিয়েছে। কিন্তু জমির মুল মালিকরা জমি বিক্রি করেননি বা দলিল সম্পর্কে কিছুই জানেন না।

উল্লেখ্য, রাজ হাউজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মোহাম্মদ টিপু সুলতান পিতা মৃত মতিউর রহমান খান, মিরপুর, সেকশন-৬, বাসা নং ৩/১, ব্লক-বি, রোড নং- ৩ ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়ইছুটি গ্রামের মৃত ইয়ার উদ্দিন বেপারীর ছেলে ও আটাবহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী মাকসুদুর রহমান হেলালীর সাথে ৩০ লাখ টাকা বিঘা দরে উল্লেখিত ৬টি মৌজায় ৩ হাজার বিঘা জমি ক্রয় বিক্রয় করার জন্য ১৮ অক্টোবর ২০১১ইং তারিখে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী রাজ হাউজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মোহাম্মদ টিপু সুলতান ও ফিয়াজ রিয়েল এ্যাস্টেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ওয়াহিদুর রহমান পিতা মৃত ফজলুর রহমান, ১৪/কে, দিলু রোড, মগবাজার ঢাকা-১০০০ নামে ওসব জমির দলিল ও আমমোক্তার নামা দলিল সম্পাদন করে নেয় এবং ওইসব জমিতে বসবাসরত লোকজনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করতে থাকে।

পরে বিভিন্ন মাধ্যমে বিষয়টি জানাজানি হলে সম্প্রতি গ্রামবাসী কালিয়াকৈর থানা ঘেরাও করে।

উপজেলার ভাতারিয়া গ্রামের হারুন-অর-রশিদ বলেন, খান মোহাম্মদ টিপু সুলতান, মোঃ ওয়াহিদুর রহমান, দুলাল, লিটন, লিয়াকত, মকবুল বয়াতিসহ কয়েক ভূমি দস্যু শুধু জাল দলিলই করেনি, গ্রামবাসীকে নানাভাবে হয়রানিও করে চলেছে। ৫০ বছর পূর্বে মারা গেছে এমন ব্যক্তিকে দলিল দাতা সাজিয়ে দলিল করে নিয়েছে।

এ ব্যাপারে মাকসুদুর রহমান হেলালী বলেন, কোম্পানির লোকজনের কথা কাজে মিল না থাকায় গত ৪ জানুয়ারি ২০১২ সালে চুক্তি বাতিল করে দেয়া হয়েছে। পরে আরও কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে ওই কোম্পানি জমি ক্রয় করেছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর সাব-রেজিস্ট্রার খন্দকার জামিলুর রহমান বলেন, ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি জেনেছি। গত এক বছরে ওই দুই কোম্পানির নামে বেশ কয়েকটি দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। সকল দলিল এমপির নির্দেশে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’’

Related Articles

Back to top button