কালীগঞ্জে প্রযুক্তির সহায়তায় ৩ ডাকাত গ্রেপ্তার, লুট হওয়া ‘শর্টগান’ উদ্ধার
গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : কালীগঞ্জে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই উন্মুক্ত পরিবেশে অবৈধভাবে পরিচালিত ‘এইচকিউ লিড’ নামে একটি ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে সংঘটিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ৩ ডাকাতকে প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার এবং লুট হওয়া ‘শর্টগান’ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২৯ মে) ভোর রাতে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের বিরিন্দা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
শনিবার (৩০ মে) দুপুরে গ্রেপ্তার তিন ডাকাতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের বিরিন্দা গ্রামের রমিজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ হারুন (২৪), আশরাফপুর গ্রামের কবির মিয়ার ছেলে অনিক মিয়া (১৯) এবং বিরিন্দা গ্রামের মোমেনের ছেলে সুজন সরকার (২০)।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২১ এপ্রিল দিবাগাত রাত দুইটার দিকে ডাকাতদলের সদস্যরা নৌকা নিয়ে এসে কালীগঞ্জ পৌরসভার বালীগাঁও গ্রামে নদীর জমি দখল করে অবৈধভাবে পরিচালিত ‘এইচকিউ লিড’ নামে ওই ব্যাটারি ফ্যাক্টরির পেছন দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। ডাকাতদের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। তাদের বয়স ১৮-২৫ এর মধ্যে হবে। তারা প্রথমে ফ্যাক্টরি গানম্যান তুহিনের উপর হামলা চালিয়ে তার সাথে থাকা শর্টগান লুট করে। পরে ফ্যাক্টরিতে থাকা আরো তিন শ্রমিক সুজন, নাঈম ও আলমগীর এবং একজন গার্ডকে ধরে বাহিরে নিয়ে বেঁধে রাখে। বাহিরে ডাকাতদলের কয়েক সদস্য ফ্যাক্টরির চারপাশ পাহাড়া দিচ্ছিল। এমন সময় খবর পেয়ে পুলিশ আসলে ডাকাতদলের সদস্যরা নৌকায় করে কালীগঞ্জের দিকে পালিয়ে যায়। ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে গানম্যান তুহিনের দুই হাত ও পিঠ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরে গানম্যান তুহিনকে ঢাকার শেরে বাংলা নগর ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে ডাকতদলের সদস্যরা ফ্যাক্টরির অন্য কোন মালামাল লুট করেনি। ওই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল ফ্যাক্টরির সুপারভাইজার মো: হোসেন আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানা মামলা দায়ের করেন।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এ কে এম মিজানুল হক বলেন, ‘গত ২১ এপ্রিল দিবাগাত রাত দুইটার দিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার বালীগাঁও গ্রামে অবস্থিত ‘এইচকিউ লিড’ নামে ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। অজ্ঞাত ডাকাতদল ফ্যাক্টরিতে কর্মরত সিকিউরিটি গার্ডের (গানম্যান) উপর হামলা চালিয়ে তার ব্যবহৃত শর্টগান লুট করে। ওই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের পর প্রায় এক মাসের তদন্তে ডাকাতদের শনাক্ত করে জড়িত ৩ ডাকাতকে গ্রেপ্তার এবং লুন্ঠিত অস্ত্র (‘শর্টগান’) উদ্ধার করা হয়েছে’।
ওসি আরো বলেন, ‘ক্লুলেস (সূত্রবিহীন) এ ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ তিন ডাকাতকে প্রযুক্তির সহায়তায় শনাক্ত করা হয়। ২৯ মে শুক্রবার ভোর রাতে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের বিরিন্দা এলাকায় ডাকাতের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ৩ ডাকাতকে গ্রেপ্তার এবং তাদের দেওয়া তথ্য মতে লুকিয়ে রাখা লুন্ঠিত অস্ত্র (শর্টগান) উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা বিভিন্ন স্থানে ওয়েল্ডিং (ঝালাই) এর শ্রমিক হিসেবে কাজের আড়ালে ডাকাতি করে থাকে। গ্রেপ্তারকৃতরা এইচকিউ লিড নামে ওই ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতেও কাজ করেছিল। এ ঘটনায় জড়িত সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শনিবার (৩০ মে) দুুপুরে গ্রেপ্তার তিন ডাকাতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে’।
ক্লুলেস (সূত্রবিহীন) এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে ওসি এ কে এম মিজানুল হক বলেন, ‘ঘটনাস্থলের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের তথ্য বিশ্লেষণ করে ডাকাতদেরকে শনাক্ত করা হয়। ওই ঘটনার আগে–পরে ওই স্থানের মোবাইল নেটওয়ার্কের তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করতে হয়েছিল। অপরাধী শনাক্তকরণ ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে পুলিশ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। পুলিশের তদন্ত একসময় সোর্স (তথ্যদাতা)–নির্ভর হলেও সেই পন্থায় এখন অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। কোথাও কোনো অপরাধ ঘটামাত্রই এখন শুরু হয় ওই এলাকায় ব্যবহৃত মুঠোফোনের কল ও খুদে বার্তা আদান–প্রদানের তথ্য বিশ্লেষণ। এ ছাড়া ডিএনএ পরীক্ষা, রাসায়নিক পরীক্ষা, ব্যক্তির বায়োমেট্রিক তথ্য, দূরনিয়ন্ত্রিত রোবটের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূত্রবিহীন ঘটনার তদন্তে বেরিয়ে আসছে অপরাধীরা’।
উল্লেখ্য : ২০১৯ সালের ১৭ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে নদীর জমি দখলের অভিযোগে ফ্যাক্টরিটি বন্ধে করে দিয়েছিল।
এছাড়াও অবৈধভাবে পরিচালিত ‘এইচকিউ লিড’ নামের ওই ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে পরিবেশ দূষণের দায়ে ফ্যাক্টরিটি বন্ধে করেছিল উপজেলা প্রশাসন।
এরপরও কোন রকম ছাড়পত্র ছাড়াই অবৈধভাবে পরিচালনা করে আসছে ফ্যাক্টরিটি। এতে চরমভাবে ওই এলাকার পরিবেশ দূষিত এবং ফ্যাক্টরির দূষিত বর্জ্যের কারণে নদী দূষিত হচ্ছে।
এ সংক্রান্ত আরো জানতে………..
কালীগঞ্জে অবৈধ ব্যাটারি ফ্যাক্টরিতে ডাকাতদের হামলা, শর্টগান লুট, গানম্যান আহত
প্রশাসনের হস্তক্ষেপে অবশেষে “সাময়িকভাবে বন্ধ” অবৈধ ব্যাটারি ফ্যাক্টরি