অপরিকল্পিত শিল্পের বিকাশে হুমকির মুখে গাজীপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল

গাজীপুর কণ্ঠ ডেস্ক : সবুজ বনাঞ্চলে ঘেরা নৈসর্গিক গাজীপুর। ঢাকার নিকটবর্তী এ জেলায় গত এক দশকে ছোট-বড় অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলার অগণিত মানুষের কর্মসংস্থান এই গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে। তবে জেলাজুড়ে অপরিকল্পিত শিল্পের বিকাশে হুমকির মুখে পড়েছে গাজীপুরের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এক দশক আগেও জেলার মোট ভূমির ১৪ শতাংশ ছিল বনাঞ্চল। এখন নেমে এসেছে মাত্র তিন শতাংশে!

বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরে ছয়টি রেঞ্জে বিভক্ত বনাঞ্চল দেখভালের দায়িত্বে ঢাকা বনবিভাগ এবং বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। জেলার প্রতিটি রেঞ্জেই সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘেঁষে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব রাস্তা ছাড়াই গড়ে উঠেছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থাও নেই। বন ঘেঁষে জোত জমিতে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিবহনগুলো বনের রাস্তা ব্যবহার করে আসছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য, হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীও।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব জোত জমি কিনে বনভূমি দখল করে গড়ে উঠেছে বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান। বনের ভেতর দিয়েই এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে বনখেকোদের দৃষ্টি এখন বনে। এ ছাড়া শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সুযোগে বনে হাঁটার সরুপথ কোথাও কোথাও ৩০ ফুট পর্যন্ত চওড়া হয়েছে! পরিবহন চলাচলের সুবিধার্থে বনের রাস্তা হয়েছে ইটের সলিংয়ের। গাজীপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বাউপাড়া বিটের আড়াইশপ্রসাদ মৌজায় বনের এমন একটি রাস্তা নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ২০০৫ সালে ওই মৌজায় ব্যক্তিমালিকানা জমিতে গ্রিন গোল্ড অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস নামে একটি কারখানার গড়ে ওঠে। রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা-ডগরী সড়কের দক্ষিণ পাশে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটির চারদিকে শালবন। অথচ সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানে প্রবেশের কোনো পথ নেই। ফলে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য পরিবহন কাজে দীর্ঘদিন ধরে বনের রাস্তা ব্যবহার করছে।

বাউপাড়া বিট কর্মকতা আজাদুল কবীর জানান, গত ২২ জানুয়ারি গ্রিন গোল্ড অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস কারখানার প্রবেশপথে বনভূমিতে ছয়টি আরসিসি পিলার স্থাপন করা হয়। গত শুক্রবার ওই বনভূমিতে বিভিন্ন প্রজাতির দুই শতাধিক চারা গাছ রোপণ করা হয়। তবে রাতেই কারখানা মালিকের উপস্থিতিতে বনের ছয়টি আরসিসি পিলারসহ প্রায় একশ চারা গাছ তুলে নেয় তাদের লোকজন। এ ছাড়া কারখানাটি প্রায় ১১ শতাংশ বনভূমি দখল করেছে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে গ্রিন গোল্ড অ্যাগ্রোর চেয়ারম্যান খন্দকার শাহজাহান জানান, কারখানাটিতে ১২ হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন কোল্ডস্টোরেজ আছে। বহু কৃষকের কৃষিজাত পণ্য সেখানে মজুদ আছে। গত শুক্রবার ক্ষুব্ধ কৃষকরা স্টোরেজ থেকে পণ্য বের করতে না পেরে কারখানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন। কারখানাটির বিরুদ্ধে বন দখলের অভিযোগ মিথ্যা। এ ছাড়া কারখানায় প্রবেশের জন্য বনের রাস্তা ব্যবহারের অনুমোদন চাওয়া হবে বলেও তিনি জানান।

 

সূত্র: খোলা কাগজ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button